সংবাদ বিজ্ঞপ্তি : বাংলাদেশের জন্য দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে একটি উদ্ভাবনী ভূমিকম্পের পূর্ব-সতর্কীকরণ ব্যবস্থা প্রথমবারের মতো চালু হতে যাচ্ছে।
ভূমিধ্বসের ফলে প্রাণহানি, আঘাত এবং সম্পত্তি ও অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। জলবায়ু পরিবর্তন, উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্ব, বন উজাড় এবং অপরিকল্পিত জমির ব্যবহারের কারণে ভূমিধ্বসের সংখ্যা, তীব্রতা, এবং এর ফলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রায় প্রভাব রাখে। বাংলাদেশে সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চলে বর্ষাকালে মে থেকে সেপ্টেম্বর মধ্যবর্তী সময়ে ভূমিধ্বস হয়ে থাকে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতায়, কক্সবাজারের জন্য একটি নতুন ভূমিধ্বস পূর্ব-সতর্কীকরণ ব্যবস্থা তৈরি করছে যা বৃষ্টিপাতের মাত্রা এবং পূর্বাভাস, ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের স্যাটেলাইট চিত্র ও অন্যান্য আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য ব্যবহার করে ঝুঁকি পূর্বানুমান করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সতর্কবার্তা দিবে। স্থানীয় জনগোষ্ঠী কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণ, রোহিঙ্গা শরণার্থী সহ প্রায় ১০ লাখের বেশি মানুষ ভূমিধ্বসের উচ্চ ঝুঁকিতে বাস করেন।
বর্তমানে বিদ্যমান ভূমিধ্বসের সতর্কবার্তা কেবলমাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে পৌছায় ফলে প্রস্তুতির জন্য সময়ের অভাবে জীবন ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে তবে নতুন ব্যবস্থাটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী ইমেইল এবং মোবাইল বার্তার মাধ্যমে পাঁচ দিন আগে অবহিত করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে এফএও প্রতিনিধি, রবার্ট ডি সিম্পসন বলেন, “দুর্যোগ মোকাবেলায় জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বাড়াতে এফএও বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি এই নতুন ভূমিধ্বস পূর্ব-সতর্কীকরণ ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ যা মানুষের জীবন রক্ষায় সহায়তা করবে।”
এই সতর্কীকরণ ব্যবস্থাটি এফএও তৈরি করছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজার্ভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এর সহযোগিতায় এবং ইউএসএইড এর মানবিক সহায়তা ব্যুরোর আর্থিক সহায়তায়।
উচ্চ রেজোলিউশন উপগ্রহের চিত্র বিশ্লেষণ করে এই অঞ্চলের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ৯০০ টি স্থান সনাক্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে গবেষণা দল এই সাইটগুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এবং এ ব্যবস্থাটি জন-বান্ধব করার জন্য স্থানীয় সরকার কর্মকর্তা এবং স্থানীয় নেতাদের সাথে বিভিন্ন পরামর্শ সভার আয়োজন করে।
সারাদেশে এই ব্যবস্থাটি কার্যকর করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজ করবে।
এই প্রকল্পে নিয়োজিত এফএও এর পরামর্শক ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভূমিধ্বস বিশেষজ্ঞ ডাঃ বায়েস আহমেদ বলেন, “এই ব্যবস্থাটি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস, ভূমিধ্বসের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের উপগ্রহ চিত্র, বৃষ্টিপাতের মাত্রা এবং ঐ এলাকায় পূর্বে সংঘটিত ভূমিধ্বসের বিস্তারিত তথ্য বিশ্লেষণ করে পূর্ব-সতর্কবার্তা দেয়। স্থানীয় বাসিন্দারা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তখন ইমেইল বা ফোনের মাধ্যমে এই বার্তা পান।”।
এফএও এবং অংশীদাররা এই সপ্তাহে কক্সবাজার সদরে এই সতর্কতা ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য ভূমিধ্বসের সাথে সম্পর্কিত প্রস্তুতি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রধান বাধাসমূহ এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য একটি উচ্চ-পর্যায়ের পরামর্শ কর্মশালার আয়োজন করে।
বিভিন্ন সরকারী বিভাগের কর্মকর্তা, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, স্থানীয় সম্প্রদায়ের নেতা এবং কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবকরা এতে অংশগ্রহণ করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের এফএও সাব অফিসের প্রধান মার্কো দে গায়েতানো, আইইউসিএন বাংলাদেশের প্রতিনিধি রকিবুল আমিন এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (পরিকল্পনা) মোঃ সোলায়মান হায়দার। কর্মশালায় প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে কয়েক মাসের মধ্যে চালু হতে যাওয়া ভূমিধ্বসের এই নতুন পূর্ব-সতর্কীকরণ ব্যবস্থাটি কার্যকর করার লক্ষে স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদী – এই তিন-স্তরের কর্ম পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হবে।