বরেণ্য শিক্ষাবিদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মাষ্টার আবদুস শুকুর এর ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৪ years ago

ডেস্ক নিউজ :
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও ভাষা সংগ্রামী মাষ্টার মোহাম্মদ আবদুস শুকুর এর ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারী তিনি মৃত্যুবরন করেন।

প্রয়াত শিক্ষাগুরু জনাব আবদুস শুকুর ছিলেন সত্যিকার অর্থে একজন ‘আলোর ফেরিওয়ালা’। ১৯৩৯ সালের ১ আগস্ট তিনি টেকনাফের সম্ভ্রান্ত পরিবারে পিতা ইসমাঈল সওদাগর ও মাতা গুল চেমনের ঔরসে জন্মগ্রহন করেছিলেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে তিনি চলে যান কক্সবাজারের পেকুয়ায়। সেখানে মামার তত্বাবধানে মাধ্যমিক লেভেলের পড়ালেখা শুরু করেন। পেকুয়া জিএমসি ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৫৫ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রাম সরকারী বানিজ্য কলেজ থেকে এফডিসি ও ১৯৬০ সালে একই কলেজ থেকে বি.কম ডিগ্রী লাভ করেন। বিকম পাশ করার পর প্রখর পান্ডিত্য ও মেধার অধিকারী আবদুস শুকুর চট্টগ্রাম শহরে বেসরকারী ব্যাংকের চাকুরীতে যোগদান করলেও পিতা ও টেকনাফের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অনুরোধে ব্যাংকের চাকুরী ছেড়ে দিয়ে টেকনাফ জুনিয়র হাই স্কুলে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন। এরপর কঠোর পরিশ্রমে তিনি টেকনাফ জুনিয়র হাই স্কুলকে উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত করেন। তিনি ছিলেন টেকনাফের প্রথম বি.কম। ১৯৬৬-৬৭ ইংরেজীতে তিনি কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের তিনি অন্যতম সংগঠক। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে পাকবাহিনী তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেন।

তিনি অর্ধশতাব্দীকাল ব্যাপী শিক্ষকতা জীবনে টেকনাফ জুনিয়র হাইস্কুল, টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম এমইএস হাইস্কুল, উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, সাবরাং নয়াপাড়া আলহাজ্ব নবী হোসাইন উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজার এয়ারপোর্ট পাবলিক হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে টেকনাফ থানা সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ সালে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে তিনি ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। তাঁর ৩ পুত্র ও ৪ কন্যা সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত।

তিনি শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নিয়ে কক্সবাজার জেলায় শিক্ষার আলো জ¦ালিয়েছিলেন। মহান এই পেশাতেও তিনি সর্বোচ্চ সাফল্য দেখিয়েছিলেন। তাঁর অসংখ্য শিক্ষার্থী আজ দেশ পরিচালনার বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সুনামের দায়িত্ব পালন করেছেন।

জীবদ্দশায় তিনি কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কর্তৃক ২০১৮ সালে ভাষা সৈনিক হিসাবে, ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও শিক্ষাবিদ হিসাবে জেলায় জাতীয় দৈনিক কালের কন্ঠের গুনীজন সম্মাননায় ভুষিত হয়েছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তিনি সম্মাননা লাভ করেছিলেন। এই মহান শিক্ষাবিদের স্মরণে কোরান খতম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।