বদি পরিবারের জমির দাম বাড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ নাফ তীরে জনশূন্য লবণ মাঠে স্থানান্তর হচ্ছে টেকনাফ পৌর ভবন ; বাতিলের দাবী নাগরিকদের

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ১ সপ্তাহ আগে

সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির ইচ্ছা অনুযায়ী অতি গোপনে টেকনাফ পৌরসভা কার্যালয় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।বিগত পৌর পরিষদের ২৫তম সাধারণ সভায় পৌরসভা কার্যালয়টি স্থানান্তর করে ৮ন ওয়ার্ডের জালিয়া পাড়া প্রাইমারি স্কুলের পূর্ব পার্শ্বে নাফ নদীর তীরের নিকটে লবণ মাঠের মাঝখানে আধুনিক ভবন নির্মাণের একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পৌরবাসী। বর্তমান জনসংখ্যা অনুযায়ী পৌরভবন কার্যালয় সেবা নিশ্চিত করতে উপযুক্ত বলে মনে করছেন তারা। ইতিপূর্বে সরকারী কোটি টাকা অপচয় করে জনগুরুত্বহীন উক্ত এলাকায় একটি সড়কও নির্মাণ করা হয়েছে বদির পরিকল্পনায়।
বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণ সীমান্ত কক্সবাজারের টেকনাফ বিভিন্ন কারণে দেশব্যাপী আলোচিত একটি শহর। শহরটির পূর্বে নাফনদীর ওপারে মিয়ানমার, দক্ষিণ-পশ্চিমে সমুদ্রের নীল জলরাশি ও উত্তরে নে-টং পাহাড়ের মধ্যখানে প্রায় ৫০ হাজার জনগোষ্ঠী নিয়ে টেকনাফ পৌরসভা।
 অনুসন্ধানে জানা যায়, গত (২৩ জানুয়ারি) ২০২৪ অপসারিত পৌর মেয়র বদির চাচা হাজী মো. ইসলামের সভাপতিত্বে পৌর পরিষদের ২৫তম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় তৎকালীন পৌর মেয়র পৌরভবন স্থানান্তরের জন্য উখিয়া-টেকনাফ ৪ আসনের সাবেক সাংসদ বদির স্ত্রী শাহীনা আক্তারের পরামর্শক্রমে, ৮ নং ওয়ার্ড মধ্যম জালিয়া পাড়া প্রাইমারি স্কুলের পূর্ব পার্শ্বে পৌরভবন নির্মাণের জন্য প্রস্তাব করেন। এতে উপস্থিত ১ থেকে ৮ নং ওয়ার্ডের ৮ জন কাউন্সিলর (পুরুষ) ও ৩ জন (মহিলা) কাউন্সিলর একমত পোষণ করেন বলে জানা যায়।
এর আগে আধুনিক বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য অন্য একটি জায়গা নির্ধারণ করা হলেও জমির মালিকানা জটিলতা দেখিয়ে লিখিতভাবে আপত্তি জানিয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়।
পুনঃ-প্রস্তাবিত সাইট জে.এল নং-৯, মৌজা-টেকনাফ, দিয়ারা খতিয়ান নং- ২৭৬, ৬৩৪, দিয়ারা দাগ নং- ৩৯২০ এর জমি নির্দিষ্ট করে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জাইকার অর্থায়নে আধুনিক বহুতল ভবন কাম পৌরসভা অফিস এর জন্য প্রস্তাবিত সাইটের জমির মালিক স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য আলোচিত আব্দুর রহমান বদি ১ একর জমি বিনামূল্যে রেজিস্ট্রি দিতে সম্মতি জানালে, উক্ত জমি টেকনাফ পৌরসভার নামে রেজিস্ট্রি নেওয়ার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে উল্লেখ করা হলেও অনুপস্থিত ছিলেন তৎকালীন ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরুল বশর।
সভার বিবরণীতে জনস্বার্থে বদির ১ একর জমি দানের কথা উল্লেখ থাকলেও তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, (২ জুলাই) ২০২৪ তারিখের ১৬৪৩ নং দলিল মূলে আবু মুসা পিতা- আইয়ুব আলী সওদাগর, সাং কায়ুকখালি পাড়া ১ একর জমি পৌরসভাকে দান করেছেন, গ্ৰহিতা- টেকনাফ পৌরসভার পক্ষে মেয়র।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জমি দাতা আবু মুসা বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থে আমাকে জমি দানের জন্য প্রস্তাব করলে আমি রাজি হয়। এখানে অন্য আরেকজনের নাম কেন উল্লেখ করা হয়েছে আমি জানি না, প্রকৃতপক্ষে জমির মালিক আমি, এই জমি বিনা অর্থে দান করেছি।
এদিকে আবু মুসার জমি দানের ঘটনায় ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে আবু মুসাকে উক্ত জমির মূল্য পরিশোধ করে তার সেই জমিটা দানপত্র করা হয়েছে পৌরসভার অনুকূলে।
টেকনাফ পৌর কার্যালয় স্থানান্তরের বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর দক্ষিণ চট্রগ্রাম আঞ্চলিক উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুস সাত্তার বরাবর চিঠি লিখেন, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা বাংলাদেশ এর সিনিয়র প্রতিনিধি কোমোরি তাকাশি। চিঠিতে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত টেকনাফ পৌরসভা অফিসের সাথে আধুনিক বহুতল ভবনের উপ-প্রকল্প স্থানান্তরে কোনো আপত্তি নেই জানিয়ে অবহিত করেন।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, আমরা আপনাকে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা এবং কম জৈব পদার্থের বিস্তারিত নকশা নির্মাণের পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। (১৯ জুন ২০২৪) স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর দক্ষিণ চট্রগ্রাম আঞ্চলিক উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুস সাত্তার প্রশাসনিক অনুমোদন প্রসঙ্গে পৌর মেয়রকে অবহিত করে চিঠি প্রেরণ করেন।
এতে বলা হয়, দক্ষিণ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক উন্নয়ন প্রকল্প (SCRDP)” এর ডিপিপিতে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ পৌরসভার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি পৌরভবন (প্যাকেজ নং- SCRDP-TE-P-MC1: TEKNAF MODERN MULTI-STORIED POURASHAVA OFFICE) অর্ন্তভুক্ত রয়েছে। উক্ত পৌরভবন Relocation এর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে দাতাসংস্থা JICA কর্তৃক অনাপত্তি প্রদান করা হয়েছে।
এমতাবস্থায়, বণির্ত উপ-প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিকট হতে জরুরী ভিত্তিতে প্রশাসনিক অনুমোদন গ্রহন পূর্বক নিম্ন স্বাক্ষরকারীকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
এরপর, (২৫ জুন ২০২৪) ৩০তম সাধারণ সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, এসসিআরডিপি প্রকল্পের আওতায় পৌর ভবন নির্মাণ করার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন গ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে পৌর পরিষদের আলোচনা হয়। টেকনাফ পৌরসভার প্রসাশনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তফশীলে বর্ণিত সাইটে এলজিইডি’র দক্ষিন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক উন্নয়ন প্রকল্প (এসসিআরডিপি) এর অর্থায়নে পৌর ভবন নির্মাণে উপস্থিত সকলে সম্মতি জ্ঞাপন করেন এবং প্রশাসনিক অনুমতি প্রদানের জন্য সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালেয় চিঠি প্রেরণের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে জমি দাতা দান করার ৬ মাস আগে থেকেই পৌর কর্তৃপক্ষ কিভাবে প্রস্তাব গ্ৰহন করে সমস্ত পরিকল্পনা শেষ করেছে সেটি নিয়েও অনেক রহস্য রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।
পৌরভবন স্থানান্তরের বিষয়ে পৌর পরিষদের বৈঠকে বারবার সর্বসম্মতিক্রমে উল্লেখ করা হলেও অনুপস্থিত ছিলেন, পৌর কাউন্সিলর নুরুল বশর নুরশাদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি নিজের স্বার্থে প্রভাব খাটিয়ে পৌরভবন স্থানান্তর করে মিয়ানমার সীমান্তের পাশে, লবণের মাঠে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। জায়গাটি পৌরবাসীর পছন্দের না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আমি আপত্তি জানিয়েছিলাম। কিন্তু বদির ইচ্ছায় আমার কথা শুনেনি এবং অনেক বিষয় মেয়রসহ তারা আমার কাছে গোপন রেখেছে, আমাকে না জানিয়ে মিটিং করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। টেকনাফ পৌর ৯ নং ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে তাদের প্রতিনিধি বানিয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেখানে পৌরসভার মানুষ চায় না পৌরভবন নাফ নদীর তীর সংলগ্ন সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যাওয়া হোক সেখানে আমি সাধারণ মানুষের সাথে বেইমানি করতে চায়নি এবং আমার আপত্তি তখনও ছিল, এখনো আছে। যদি বর্তমান পৌরভবন সাধারণ মানুষের জন্য উপযোগী না হয়, জনস্বার্থে পৌরভবন স্থানান্তর করতে হয় তাহলে এমন একটি স্থান নির্ধারণ করা হোক যেখানে সকল ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের যাতায়াত ও সেবা নিশ্চিতে কোন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না হয়।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, পৌরভবন স্থানান্তরের জন্য মধ্যম জালিয়া পাড়ার যে স্থানটি নির্ধারণ করা হয়েছে এটি অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ এলাকা। নাফনদীর কাছাকাছি স্থানটির চারদিকে লবণের মাঠ, ওপারে মিয়ানমারে চলছে সংঘাত। মিয়ানমারে ২০২১ সালে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নেওয়ার পর ২০২২ সাল থেকে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহী চলমান সংগ্রাম গৃহযুদ্ধে পতিত হয়েছে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে একাধিকবার গুলিবর্ষণ ও নাফনদী থেকে বোটসহ জেলে অপহরণ করে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। মিয়ানমার সীমান্তে মিসাইল বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের শব্দে ঘরবাড়ি কাঁপছে, দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত্রিযাপন করছে এপারের সীমান্তের সাধারণ মানুষ। পৌরভবন স্থানান্তরের জায়গাটি সীমান্তের জিরো লাইনের খুবই নিকটবর্তী ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরেও কার স্বার্থে সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জনমনে এমন প্রশ্ন ওঠেছে।
পৌরসভা কার্যালয় স্থানান্তরের জন্য নির্ধারিত স্থানটিতে রয়েছে যাতায়াতের সমস্যা, বর্ষাকালে পানিতে ডুবে যায় রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর। ঘনবসতি হওয়ায় খুব ছোট ছিপা রাস্তা দিয়ে সেখানে যেতে হয়, রাস্তার চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে ময়লা আবর্জনা। পৌরসভার মেইন রোড থেকে ১ কি:মি এরও বেশি দূরের জায়গায় ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষার্থে এমন জনদুর্ভোগ পূর্ণ এলাকায় পৌরভবন চান না পৌরবাসী।
অনতিবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় পৌরসভার সচেতন জনসাধারণ।
পৌরভবন স্থানান্তরের স্থানের আশপাশ দিয়ে সীমান্ত পার্শ্ববর্তী বেড়িবাঁধ দিয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কৌশলে মাদক তোলার অনেক নজির রয়েছে।
গত (১৯ ডিসেম্বর) ২০২১ সালে মধ্যম জালিয়া পাড়ায় অভিযান চালিয়ে ৬ হাজার ইয়াবাসহ একজনকে গ্রেফতার করে টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ।
এর আগে, (১ আগষ্ট) ২০১৫ সালে জালিয়া পাড়া সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ১ লক্ষ ৪০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি। উক্ত ইয়াবা রেখে পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
পৌরবাসীর দাবি পৌরভবন যদি স্থানান্তর করতেই হয় তাহলে এমন একটি স্থান নির্ধারণ করা হোক যেখানে জনসাধারণ দুর্ভোগহীনভাবে যাতায়াত এর মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করতে যেতে পারবে।
অবিলম্বে বদির ব্যক্তি স্বার্থে নেওয়া এই প্রকল্প বাতিল করতে হবে ।
বাংলাদেশ – মায়ানমার সীমান্তের জিরো লাইন এর খুবই নিকটে লবণ মাঠের মাঝখানে পৌরভবন স্থানান্তরের বিষয়ে জানেন না, টেকনাফ ব্যাটালিয়ন-২ বিজিবি এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা সাবেক উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি জাহিদ মাহমুদ বলেন, পৌর এলাকায় সরকারি এতো জমি থাকতে পৌরসভার এক সাইডে কোনো একজন ব্যক্তির স্বার্থে নাফ নদীর পাশে নিয়ে যাওয়া সমুচিত নয়। পৌরবাসীর সেবা নিশ্চিতের জন্য বর্তমান পৌরভবন উপযোগী বলে মনে করি। তবুও যদি পৌরভবন স্থানান্তর করতেই হয় তাহলে ‘ডাক বাংলা’ উপযুক্ত স্থান হতে পারে।
টেকনাফ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. হাসান আহমেদ বলেন, পৌরভবন স্থানান্তরের বিষয়টি যৌক্তিক হলেও ৮ নং ওয়ার্ড জালিয়া পাড়া স্কুলের পাশে যে স্থানটির কথা বলা হয়েছে সেটি নাফ নদীর পার্শ্ববর্তী হওয়ায় অযোগ্য স্থান বলে মনে করি। আমি পৌরবাসীর পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারকে অনুরোধ করছি পৌরভবন যাতে ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের মাঝামাঝি রাখা হয়, এতে জনগণ ভোগান্তির সম্মুখীন হবে না।
সাবেক কাউন্সিলর মো. আবু হারেছ জানান, পৌরভবন স্থানান্তর করে অনিরাপদ ও অকল্যাণ স্থানে সাবেক এমপি বদির স্বার্থের জন্য নিয়ে গিয়ে পৌরসভার সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করা হবে এতে ভোগান্তি বাড়বে। টেকনাফ পৌরবাসীর পক্ষ থেকে আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
স্থানীয় তরুণ উন্নয়নকর্মী শাহেদুল ইসলাম বলেন, বর্তমান পৌরভবন পৌরবাসীর সেবা নিশ্চিতের জন্য উপযোগী, যদি পৌরবাসীর স্বার্থে পৌরভবন স্থানান্তর করতে হয়, তাহলে পৌরসভার মাঝামাঝি একটি জায়গা বেছে নেওয়া উচিত।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী চট্রগ্রাম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রুবায়েত হোসাইন বলেন, বাংলাদেশের সর্বশেষ সীমান্ত টেকনাফ পৌরসভার কার্যালয় স্থানান্তরের বিষয়টি একটি অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য সীদ্ধান্ত মাত্র। জনকল্যাণের কথা চিন্তা না করে পৌর কর্তৃপক্ষ এক ব্যক্তির মালিকানাধীন জমির মূল্যবান করতে এহেন সীদ্ধান্ত নেওয়া জনস্বার্থ বিরোধী। পৌরসভা ভবন নতুন করে নির্মাণের জন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য স্থান আছে যা খুঁজলে পাওয়া যাবে। জনস্বার্থ বিরোধী এই প্রকল্প নেওয়াও অত্যন্ত ভুল হয়েছে যার দায় পৌর মেয়র সহ সকল কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর বৃন্দদেরও বটে। পৌর কর্তৃপক্ষ যদি ভুলেও পৌর ভবন স্থানান্তর প্রকল্পের কর্মকান্ড শুরু করে তাহলে যেনো তারা ছাত্র-জনতার লাশের উপর দিয়ে যায়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বরাবর আমাদের বিনীত অনুরোধ থাকবে এই প্রকল্পটি যেন দ্রুত বাতিল করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির হোসেন বলেন, বদির নির্দেশে একক সিদ্ধান্ত মেনে পৌর কর্তৃপক্ষ ভুল জায়গায় পৌরভবন নির্মাণের জন্য একমত পোষণ করেছে। পৌরসভার সাধারণ মানুষ একদিকে আর পৌর কার্যালয় অন্যদিকে নির্মাণ করা যেতে পারে না। পৌরবাসীর স্বার্থে অনতিবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ সোহাইল আমিন বলেন, পৌরসভার মূল কেন্দ্র হচ্ছে নিজ কার্যালয়।পৌরসভার ভূখণ্ডের মাঝখানেই পৌরভবন নির্মাণ করতে হবে, যাতে পৌরসভার সকল এলাকার জনসাধারণ মূলকেন্দ্রে এসে সেবাগ্রহণ করতে পারেন। পৌরভবন যদি ব্যক্তি স্বার্থে একপাশে লবণ মাঠের মাঝখানে সীমানায় নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে জনগণের ভোগান্তি বাড়বে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ করছি, যাতে জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্তগ্রহণ করেন। বর্তমানে পৌর কার্যালয় স্থানান্তরের জন্য যে স্থানটি নির্ধারণ করে প্রকল্প গ্ৰহন করা হয়েছে সেই স্থানটির দক্ষিণে-উত্তরে ও পূর্বে কয় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শত শত একর জমি নামে-বেনামে শুধুই বদির মালিকানাধীন জমি বলে জানিয়েছে স্থানীয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে, মেয়রের দায়িত্বপ্রাপ্ত টেকনাফ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ উল্লাহ নিজামীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সবেমাত্র তিনি টেকনাফে যোগদান করেছেন, পৌরভবন স্থানান্তর বিষয়ে তিনি অবগত নন। এবিষয়ে জনস্বার্থ উপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
পৌরসভার সচিব মহিউদ্দীন ফরায়েজী এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অপরদিকে সাবেক পৌর মেয়র হাজী মো ইসলামের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অছাড়া আব্দুর রহমান বদি বর্তমানে কারাগারে অন্তরীন থাকায় তারও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে বছর দুয়েক পূর্বে সাবেক যুবনেতা সাবেক সাংসদ আব্দুল গণির সন্তান সাইফুদ্দিন খালেদ এই বিষয়টি নিয়ে সর্বপ্রথম তার ফেসবুক টাইমলাইনে পৌরভবন স্থানান্তরের বিরোধিতা করে স্ট্যাটাস দেয়ায় বদি অশ্রাব্য ভাষায় সেখানে কমেন্ট করেন। লিখেন পৌরসভায় কিছু কুকুর আছে গাঁও গাঁও করে কিন্তু কামড় দেয় না। তিনি প্রস্তাবিত পৌরভবনটিকে পৌরসভার গাড়ি পার্কিং ও মালামাল রাখার জন্য করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন।e2657946 ad98 4e85 8e8c eebaf49b86d0 TEKNAF TODAY - সীমান্তের সর্বশেষ খবর 45aacd48 01b9 4d1b 9602 6865b6c3da41 TEKNAF TODAY - সীমান্তের সর্বশেষ খবরIMG 2802 TEKNAF TODAY - সীমান্তের সর্বশেষ খবর