প্রেস বিজ্ঞপ্তি : ফার্মাসিউটিক্যালস রিপ্রেজেন্টটেটিভ অ্যাসোসিয়েশন (ফারিয়া)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২০ মে) সকাল ১১ টার দিকে সম্মেলনের উদ্ধোধন করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহে আলম মুরাদ।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য শাজাহান খান। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট্রের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন।
এসময় নেতারা ফার্মাসিউটিক্যালস রিপ্রেজেন্টটেটিভ অ্যাসোসিয়েশন (ফারিয়া)কে ট্রেড ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য শ্রম আইন সংশোধন করতে সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি শ্রম অধিদপ্তরে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে ফিল্ড লেভেলে ভিজিট করে ফার্মাসিউটিক্যালস সেলস রিপ্রেজেন্টটেটিভ/ বিক্রয় প্রতিনিধিদের সাথে প্রচলিত শ্রম আইনের সাথে সাংঘর্ষিক যে অন্যায় ও অবিচার করা হয় তা খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করেন।
সংগঠনটি জানায়, বাংলাদেশে ঔষধ শিল্পের অভ্যন্তরীণ বর্তমান বাজার প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর সিংহভাগ চাহিদা মেটায় ছোট বড় বিভিন্ন দেশীয় ঔষধ কোম্পানিগুলো। এই শিল্পের সাথে জীবিকা নির্বাহ করছে দেশের অনেক লোক। তার মধ্যে প্রায় দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজারের বেশি উচ্চ শিক্ষিত যুবক যারা মাঠ পর্যায়ে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসাবে কর্মরত আছেন।
চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে অব্যাহতি পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এই বিক্রয় প্রতিনিধিদের সাথে বিভিন্ন ধরণের অন্যায় ও অবিচার করা হয়। এছাড়াও তাদেরকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা যেমন- সাপ্তাহিক ছুটি, সরকারি ছুটি থেকে বঞ্চিত করে তাদেরকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়া হয়। প্রতি দিন আট ঘণ্টার বেশি প্রায় ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা জোর করে ফিল্ডে কাজ করানো হলেও অতিরিক্ত শ্রম ঘণ্টার কোন টাকা প্রদান করা হয় না।
সংগঠনটির নেতারা অভিযোগ করে বলেন, অনেক ঔষধ কোম্পানি ঠিকমত প্রভিডেন্ট ফান্ড, আচুইটি, চিকিৎসা ব্যায়, আনলিড প্রদান করে না। চাকুরি প্রদান কালিন সময়ে শিক্ষা সনদ/সার্টিফিকেট, ব্যাংক চেক ও জোর পূর্বক অবৈধ চুক্তি সম্পাদন করিয়ে নেওয়া হয়।
এসময় সংগঠনটির নেতারা দাবি জানিয়ে বলেন, ফার্মাসিউটিক্যালস রিপ্রেজেন্টটেটিভ অ্যাসোসিয়েশন (ফারিয়া) দেশের সরকার ও সকল ঔষধ কোম্পানিকে অনুরোধ করছে তারা যেন- তাদের বিক্রয় কর্মীদের শ্রম আইনে প্রাপ্য সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করেন। বিশেষ করে- সাপ্তাহিক ছুটি, সরকারি ছুটি, বাৎসরিক ছুটি, অসুস্থ জনিত ছুটিসহ সকল প্রকার ছুটি প্রদান, নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা প্রদান (৮ ঘন্টার বেশি নয়), নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি ও আনলিড প্রদান, স্বাস্থ্য বীমা ও কর্মীদের ইনসুরেন্স পলিসি চালু করা, মোবাইল ফোনে প্রিসক্রিপশন সার্ভের নামে রোগীদের হয়রানী বন্ধ করা, নারী কর্মীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি বাধ্যতামূলক করা, কথায় কথায় চাকুরি ছাটাই বন্ধ করা, বর্তমান বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বেতন ও টিএ/ডিএ প্রদান করা। সর্বোপরি সকল ক্ষেত্রে শ্রমিকদের সাথে শ্রম আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাজাহান খান বলেন, ঔষধ রিপ্রেজেনটেটিভ দেখে আসছি কিন্তু আপনাদের নিয়ে এভাবে চিন্তাও করি নাই আর ধারনাও ছিলো না। আপনাদের যদি কোন দাবিদাওয়া থাকে আর তা সরকারে কাছে উপস্থাপন করতে পারেন। এই শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সেটা বাস্তয়ায়ন হবে না, এটা আমি বিশ্বাস করি না।
তিনি বলেন, সংগঠন চাইলে সংগঠন আইনে গুরুত্ব দিতে হবে। তবে প্রচলিত আইনেই আপনাদের ইউনিয়ন গঠন করতে পারবেন। আইনের পরিবর্তন লাগবে না। আমার কোন সহায়তা লাগলে করব।
এ শ্রমিক নেতা আরো বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী ছুটিছাটাসহ সব সহায়তা দেয়ার দায়িত্ব কোম্পানিগুলোর। আপনারা সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেন। শ্রম মন্ত্রণালয় আপনাদের পাশে আছে।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি জনাব রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ঔষধ শিল্প বিকাশমান। শিল্প বিকাশমান কিন্তু শ্রমজীবিদের বঞ্চনা। ঔষধ শিল্পের আয় ৩০ হাজার কোটি টাকা। ৯৮% পূরণ করে দেশীয় কোম্পানী। ঔষধ শিল্পে প্রবৃদ্ধি ১২ শতাংশ। কিন্তু ঔষধ শিল্পে যুক্ত আড়াই লক্ষ মানুষের জীবনের নিশ্চয়তা, চাকরি নিশ্চয়তা নাই।
তিনি বলেন, শ্রমীক আইনে যে ধারায় আপনাদের সুবিধা সে ধারা বাস্তবায়ন এবং যে ধারায় আপনাদের গলা টিপে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে সে ধারাকে প্রতিহত করতে যদি সমাজতান্ত্রিক শ্রমিকফ্রন্ট্রের কোনো সহায়তা প্রয়োজন হয়, আমরা করব।
এরপর ফারিয়া পদক ২০২২ প্রদান করা হয়। এতে মোবারক হোসেন, এবিএম সোবাহান হাওলাদার, আশিক সুমন, সোহেল বিশ্বাস, আর আই বাবু, মোস্তাফিজার রহমান, মাহবুব আলম ভুঞা রাশেল ফারিয়া পদক-২০২২ এর জন্য মনোনিত হন। মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় মানবিক সংগঠক হিসেবে পুরষ্কার পান মানসিক রোগীদের তহবিল মারোত এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ফারিয়া ১ম সহসভাপতি আবু সুফিয়ান । ২ য় অধিবেশনে শফিক রহমান সভাপতি ও হাবিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।