টেকনাফ টুডে ডেস্ক : দুই বছরের মধ্যে প্রথম শিরোপা জয়ের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিল বার্সেলোনা। আক্রমণে আধিপত্য করেও হারের মুখে পড়েছিল আথলেতিক বিলবাও। ম্যাচ জুড়ে দুর্দান্ত খেলা দলটি খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়ায় শেষ মুহূর্তে। পরে অতিরিক্ত সময়ে ইনাকি উইলিয়ামসের চমৎকার গোলে শিরোপা উল্লাসে মেতে ওঠে মার্সেলিনোর দল।
গতকাল রোববার রাতে সেভিয়ায় অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে ৩-২ গোলে জিতেছে বিলবাও। তৃতীয়বারের মতো এর শিরোপা জিতল দলটি।
বল দখলে পিছিয়ে থাকলেও প্রতিপক্ষের রক্ষণে চাপ ধরে রাখার কাজটা পুরো ম্যাচেই করেছে বিলবাও। তবে অঁতোয়ান গ্রিজমানের জোড়া গোলে দুবার এগিয়ে গিয়েছিল বার্সেলোনা। প্রথমবার অস্কার দে মার্কোসের গোলে সমতায় ফেরার পর ৯০তম মিনিটে আসিয়েরের লক্ষ্যভেদে শিরোপা লড়াইয়ে ফেরে বিলবাও। আর সবশেষে ইনাকির ওই পার্থক্য গড়ে দেওয়া গোল।
ম্যাচের কয়েক ঘণ্টা আগেও নিশ্চিত ছিল না লিওনেল মেসির খেলা। সব অনিশ্চয়তা পেছনে ফেলে শুরুর একাদশেই নামেন তিনি। তবে পুরো ম্যাচেই ছিলেন যেন নিজের ছায়া হয়ে। উল্টো শেষ মুহূর্তে মেজাজ হারিয়ে লাল কার্ড দেখেন তিনি।
বিলবাও সবশেষ প্রতিযোগিতাটির শিরোপা জিতেছিল ২০১৫ সালে, বার্সেলোনাকে হারিয়েই। সেবার দুই লেগের লড়াইয়ে কাতালান ক্লাবটিকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল তারা।
বল দখলের প্রশ্নে সবসময়ের মতো ম্যাচের শুরু থেকে এগিয়ে ছিল বার্সেলোনা, তবে এদিনের চিত্রটা ছিল ভিন্ন। প্রতিপক্ষের আক্রমণ সামলাতে ও নিজেদের খেলা গুছিয়ে নিতেই ব্যস্ত সময় কাটছিল তারা। লং পাসে তাদের রক্ষণে বারবার ভীতি ছড়াচ্ছিল বিলবাও। যদিও তারাও পারছিল না কোনো সুযোগ তৈরি করতে।
ম্যাচের ২৬তম মিনিটে গোলের উদ্দেশে প্রথম শট দেখা যায়। ডি-বক্সের মধ্যে থেকে আন্দের কাপার বুলেট গতির শট লাফিয়ে এক হাত বাড়িয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন।
১১ মিনিট পর প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে মেসির জোরালো শট ক্রসবারের একটু ওপর দিয়ে যায়। ৪০তম মিনিটে কাঙ্ক্ষিত গোল পেয়ে যায় বার্সেলোনা।
মেসির বাড়ানো বল ডি-বক্সে ফাঁকায় পেয়ে শট না নিয়ে ফিরতি পাস দেন জর্দি আলবা। তবে প্রতিপক্ষের বাধার মুখে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি বার্সেলোনা অধিনায়ক। বিলবাও ডিফেন্ডাররাও পারেনি বিপদমুক্ত করতে, ফাঁকায় বল পেয়ে নিচু শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন গ্রিজমান।
জবাব দিতে মোটেও দেরি করেনি সেমি-ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে হারানো বিলবাও। ইনাকির ক্রসে কাছ থেকে ডান পায়ের টোকায় বল জালে পাঠান মার্কোস। এখানে দায় এড়াতে পারবেন না ডিফেন্ডার আলবা। পেছনে থাকা প্রতিপক্ষের দিকে নজর না দিয়ে শুধু বলেই চোখ রেখেছিলেন তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে হেডে বল জালে পাঠিয়েছিলেন রিয়ালের বিপক্ষে জোড়া গোল করা রাউল গার্সিয়া। তবে ভিএআরের সাহায্যে অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি। ৬৬তম মিনিটে দারুণ পজিশন থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নিয়ে হতাশ করেন ইনাকি।
৭৭তম মিনিটে ফের এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। বাঁ দিক থেকে আলবার ছয় গজ বক্সের মুখে বাড়ানো নিচু পাস ফাঁকায় পেয়ে প্লেসিং শটে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন গ্রিজমান।
ব্যবধান ধরে রেখে শিরোপার সুবাস পাচ্ছিল বার্সেলোনা। তখনই আসিয়েরের আঘাত। নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে ডান দিক থেকে ইকের মুনিয়াইনের দারুণ ফ্রি-কিকে কাছ থেকে বলে পা লাগিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড।
হারের মুখ থেকে ঘুরে দাঁড়ানো বিলবাও অতিরিক্ত সময়ের তৃতীয় মিনিটে ইনাকির অসাধারণ নৈপুণ্যে এগিয়ে যায়। সতীর্থের পাস ডি-বক্সে পেয়ে জায়গা বানিয়ে জোরালো কোনাকুনি শট নেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড; বল দূরের পোস্টের ভেতরের দিকে লেগে জালে জড়ায়।
১১০তম মিনিটে আত্মঘাতী গোল খেতে বসেছিল বিলবাও। পরের মিনিটেই সমতা টানার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন গ্রিজমান। ফাঁকায় বল পেয়েও ভলিতে উড়িয়ে মারেন তিনি। তাদের হতাশার ষোলোকলা পূর্ণ হয় শেষে গিয়ে। খুব কাছে গিয়ে শিরোপা হারাতে হচ্ছে, এই হতাশা থেকেই কি-না মাঝমাঠের কাছে আসিয়েরকে অহেতুক আঘাত করে বসেন মেসি। ভিএআরের সাহায্যে লাল কার্ড দেখান রেফারি। মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়েন ছয়বারের বর্ষসেরা ফুটবলার।
বার্সেলোনার হয়ে আর্জেন্টাইন তারকার এটিই প্রথম লাল কার্ড পাওয়ার ঘটনা। ৭৫৩তম ম্যাচে এসে তেতো স্বাদটি পেলেন তিনি। খানিক পরেই বাজে ম্যাচ শেষের বাঁশি। শুরু হয় বিলবাওয়ের শিরোপা উৎসব।