নিজস্ব প্রতিনিধি, টেকনাফ টুডে ডটকম :
সদ্য প্রকাশিত টেকনাফ কলেজের এইচএসসির ফলাফল বিপর্যয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এছাড়া অনলাইন ও পত্রিকায় ফল বিপর্যয়ের পরবর্তী কলেজ খোলার দিনের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তবুও টনক নড়ছে না কলেজ কর্তৃপক্ষের।
রোববারও কলেজে একই চিত্র বিরাজমান ছিল। ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপস্থিতি ছিল কম। এদিন রুটিন অনুযায়ী ৫৪টি ক্লাস থাকলেও ২০টি ক্লাসও হয়নি ছাত্র-শিক্ষকদের অনুপস্থিতির কারণে। ফল বিপর্যয়ের পর গত শনিবার প্রথম কলেজ খোলার দিন ৩৩ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৫ জনেই ছিলেন অনুপস্থিত। রোববার ও কলেজে একই অবস্থা বিরাজ করছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর সম্প্রতি এক কলেজটি সরকারীকরণের ঘোষনা হয়েছে সম্প্রতি।
এদিকে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেলেও সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই কলেজ কর্তৃপক্ষের। গত শনিবার কলেজের প্রথম কার্যদিবসে দেখা গেছে হতাশাজনক চিত্র। এদিন ৩৩ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৫ ছিলেন অনুপস্থিত। আবার প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীর অর্ধেকও কলেজে উপস্থিত ছিলেন না। অপরদিকে শনিবার রুটিন অনুযায়ী কলেজে ৫২ টি ক্লাসের মধ্যে অনুষ্টিত হয়েছে ১৬টি ক্লাস। শিক্ষকগন কলেজে না আসায় বাকি ক্লাস গুলো অনুষ্টিত হয়নি।
আবার রোববার সকাল ১০টায় কলেজের বিভিন্ন শ্রেনীর ৮টি ক্লাসের একটিও অনুষ্টিত হয়নি।
রুটিন অনুযায়ী রোববার সকাল ১০টায় ইংরেজী প্রথম পত্রের নির্ধারিত শিক্ষক ছিলেন মঈন উদ্দিন। কিন্তু তিনি কলেজে উপস্থিত না থাকায় ক্লাস হয়নি। একই সময় গণিত ২য় পত্রের ক্লাসের শিক্ষক ছিলেন কৃঞ্চমিলন মজুমদার দেরীতে আসার কারণে ১ম ক্লাস তিনি করতে পারেননি। বানিজ্য বিভাগের একই সময় হিসাব বিজ্ঞান ২য় পত্রের শিক্ষক ছিলেন নুরুল আলম। তিনিও কলেজে অনুপস্থিত। ব্যবস্থাপনা ¯œাতক ১ম পত্রের শিক্ষক আসাদুল ইসলাম দেরীতে কলেজে আসায় ক্লাস হয়নি। অর্থনীতি ¯œাতক ১ম ফারুক আহমদ দেরীতে আসায় ক্লাস হয়নি। ইসলামী শিক্ষা আব্দুল গফুর দেরীতে আসায় ১০টার ক্লাস নিতে পারেননি। দর্শন ¯œাতক ২য় আসাদুজ জামান দেরীতে আসায় ক্লাস নিতে পারেননি। সমাজ বিজ্ঞান ¯œাতক আবু তাহের কলেজে ছিলেন কিন্তু তিনিও ক্লাস করেননি।
এব্যাপারে দ্বাদশ মানবিক শ্রেনীর দুইজন ছাত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে, (নাম গোপন রাখা হলো) রোববার দ্বাদশ শ্রেনীর ৭টি করে ক্লাস হওয়ার কথা থাকলেও ৩টি করে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাকি ক্লাস গুলো কেন হয়নি তারা জানেনা।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দ্বাদশ শ্রেনীর এক ছাত্রী জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সহ কলেজের অধিকাংশ স্যার প্রতিদিন কক্সবাজার থেকে এসে ক্লাস করেন ফলে যানজট সহ নানা সমস্যায় সময় মতো উনারা কলেজে পৌঁছাতে পারেননা। যেহেতু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সময়মতো পৌঁছাতে পারেন না তাই উনি অন্যরা দেরী করে আসলেও কিছু বলতে পারেন না। পরিচালনা কমিটির লোকজন এইসব কখনো দেখেননা ফলে কলেজের শিক্ষার মান দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে।
অন্য এক শিক্ষার্থী জানান, হিসাব বিজ্ঞানের নুরুল আলম ও ইংরেজীর মঈন উদ্দিন স্যারকে মাঝে মধ্যে কলেজে দেখা যায়। মাসের অধিকাংশ সময় উনারা কলেজে অনুপস্থিত থাকেন।
জানা গেছে অনুপস্থিত থাকলেও মাসের কোন একদিন এসে তারা হাজিরা খাতায় পুরো মাসের হাজিরার দস্তখত দিয়ে দেন।
আবার টেকনাফ কলেজের সাবেক এক শিক্ষার্থী জানান, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেনীর দুই বছরে ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক মঈন উদ্দিনের দুইটি মাত্র ক্লাস পেয়েছিলেন মাত্র।
কলেজে ছাত্র-শিক্ষকের উপস্থিতি কেন কম, অনুপস্থিত শিক্ষকগন কি ছুটিতে নাকি অসুস্থ্য এস সব সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে টেকনাফ ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শেখ জয়নাল আবেদীনের কাছে মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ না করাই বক্তব্য জানা যায়নি।