প্রিয়জনকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে চাইলে

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৩ years ago

হে মুমিনরা! তোমরা তোমাদের নিজেদের আর তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে মোতায়েন আছে পাষাণ হৃদয় কঠোর স্বভাবের ফেরেশতা।… সুরা তাহরিম, আয়াত : ০৬

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা : প্রত্যেক মানুষ তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নিরাপত্তা নিয়ে সর্বদা শঙ্কায় থাকে। কেউই তার প্রিয়জনের বিপদ স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে না। যাদের প্রিয়জনরা প্রবাসে থাকে, তারা সর্বদা তাদের প্রিয়জনকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে, বিশেষ করে প্রিয়জন যদি কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় থাকে, তাহলে তার দুশ্চিন্তার কোনো অন্ত থাকে না।

আমাদের উচিত, নিজেদের ও পরিবার-পরিজনের পরকালীন নিরাপত্তা বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা।

কারণ দুনিয়ার বিপদ থেকে কোনো না কোনোভাবে পরিত্রাণের উপায় থাকলেও জাহান্নামের ফায়সালা হয়ে যাওয়ার পর আখেরাতের বিপদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো রাস্তা খোলা থাকবে না। তাই মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের দুনিয়াতেই আখেরাতের বিষয়ে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা তোমাদের নিজেদের আর তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে মোতায়েন আছে পাষাণ হৃদয় কঠোর স্বভাবের ফেরেশতা। আল্লাহ যা আদেশ করেন, তা তারা অমান্য করে না, আর তারা তাই করে, তাদেরকে যা করার জন্য আদেশ দেওয়া হয়। ’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ০৬)

অর্থাৎ কোনো কিছু দিয়েই সেই ফেরেশতাদের থামানো সম্ভব হবে না। যতক্ষণ আল্লাহর নির্দেশ না হবে। তাই প্রত্যেক মানুষেরই উচিত, তার পরিবার-পরিজনদের জাহান্নামের আগুন সম্পর্কে সতর্ক করা। এমন কাজ থেকে বিরত রাখা, যা মানুষকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়।

দুনিয়াতে মানুষ তার প্রিয়জনের ওপর একটি ফুলের টোকাও সহ্য করতে পারে না। তাহলে তার প্রিয়জনকে কিভাবে গুনাহের কাজে উৎসাহ দেয়। কিংবা গুনাহের কাজ থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানায় না। পবিত্র কোরআনে জাহান্নামের শাস্তির বর্ণনা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, অচিরেই আমি তাদের প্রবেশ করাব আগুনে। যখনই তাদের চামড়াগুলো পুড়ে যাবে তখনই আমি তাদের পাল্টে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আস্বাদন করে আজাব। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৬)

এ আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে মুআজ (রা.) বলেছেন যে, তাদের শরীরের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন সেগুলো পাল্টে দেওয়া হবে এবং এ কাজটি এত দ্রুতগতিতে সম্পাদিত হবে যে এক মুহূর্তে শতবার চামড়া পাল্টানো যাবে। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘আগুন তাদের চামড়াকে এক দিনে সত্তর হাজারবার খাবে। যখন তাদের চামড়া খেয়ে ফেলবে, অমনি সেসব লোককে বলা হবে, তোমরা পূর্বাবস্থায় ফিরে যাও। সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো পূর্বের মতো হয়ে যাবে। ’ (ইবনে কাসির : ১/৫১৪)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে এবং তাদেরকে ফুটন্ত পানি পান করানো হবে, ফলে তা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেবে?’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ১৫)

জাহান্নামের সর্বনিম্ন শাস্তি কতটা ভংয়কর হবে—তার বর্ণনা পবিত্র হাদিস শরিফে পাওয়া যায়। নোমান ইবনে বাশির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তিকে জাহান্নামিদের মধ্যে সবচেয়ে কম শাস্তি প্রদান করা হবে তার পায়ের তালুর নিচে দুটি জ্বলন্ত অঙ্গার রাখা হবে। তাতে তার মগজ পর্যন্ত টগবগ করে ফুটতে থাকবে। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬০৪)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন; এবং প্রিয়জনদের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করুন। আমরা যদি সত্যিই আমাদের পরিবার-পরিজনকে ভালোবাসি, তবে আমাদের উচিত, গুনাহের কাজ থেকে তাদের বিরত রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। নিজেরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন।