দুই সেশনে প্রাপ্তি এক উইকেট

লেখক: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৮ years ago

টেকনাফ টুডে ডেস্ক:প্রথম সেশনে ৯৯ রান তুলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় সেশনেও উঠল ঠিক ৯৯ রান। পার্থক্য অবশ্য থাকল একটু। প্রথম সেশন ছিল উইকেটবিহীন। দ্বিতীয় সেশন শেষের ঠিক আগে বাংলাদেশ পেয়েছে প্রথম উইকেটের দেখা। ৯৭ রানে রান আউট অভিষিক্ত ওপেনার এইডেন মারক্রাম।

তবে সেঞ্চুরি করে এগিয়ে চলেছেন এলগার। তার সঙ্গী বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন হাশিম আমলা।

চা বিরতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ১ উইকেটে ১৯৮। এলগার অপরাজিত ১০১ রানে।

এলগারের সেঞ্চুরি

৯২ রান থেকে মাহমুদউল্লাহকে বেরিয়ে ছক্কা মেরে এগোলেন সেঞ্চুরির কাছে। পরের ওভারে মারক্রামের রান আউটে একটি বিরতি আর হতাশা। এক বল পরই স্পর্শ করলেন সেঞ্চুরি। সাফল্য প্রসবা বছরে এলগারের আরেকটি মাইফলক।

৪০ টেস্টে এলগারের এটি নবম সেঞ্চুরি। এই বছরে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে করলেন চতুর্থ সেঞ্চুরি।

এই ইনিংসের পথে উঠে গেছেন এই বছর সবচেয়ে বেশি রানের চূড়ায়। ৮৫ রানের সময়ই ছাড়িয়ে গেছেন চেতেশ্বর পুজারাকে। ৮ টেস্ট ৮৫১ রান পুজারার। এলগার ছাড়িয়ে গেলেন দশম টেস্টে।

মারক্রামের হতাশার রান আউট

বোলাররা যখন কিছুই করতে পারছিলেন না, বাংলাদেশকে তখন প্রথম উইকেট উপহার দিল দক্ষিণ আফ্রিকাই। ৯৯ রানে থাকা এলগারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি, নন স্ট্রাইক প্রান্তে রান আউট এইডেন মারক্রাম। অভিষিক্ত ওপেনারের নামের পাশে তখন ৯৭ রান!

তরুণ ওপেনারের শরীরী ভাষাই বলে দিচ্ছিল, অভিষেকে শতরানের এত কাছে গিয়ে রান আউটে কতটা হতাশ তিনি!

ভাঙল ১৯৬ রানের উদ্বোধনী জুটি। বাংলাদেশের জন্য সামান্য আলোর রেখা।

অভিষেকে নব্বইয়ে রান আউট হওয়া মাত্র তৃতীয় ব্যাটসম্যান মারক্রাম। ১৯৬৪ সালে ৯৫ রানে রান আউট হয়েছিলেন পাকিস্তানের আব্দুল কাদির। ১৯৭৪ সালে ৯৩ রানে রান আউট হয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের গর্ডন গ্রিনিজ।

দেড়শ রানের জুটি

লাঞ্চের পরও বাংলাদেশের বোলিংয়ে নেই আশা জাগানিয়া কিছু। বেড়ে চলেছে দক্ষিণ আফ্রিকার রান। প্রথমবার জুটি বেধে ডিন এলগার ও এইডেন মারক্রাম গড়ে ফেললেন দেড়শ রানের জুটি।

দক্ষিণ আফ্রিকা সবশেষ উদ্বোধনী জুটিতে দেড়শ পেয়েছিল সেই ২০১০ সালের নভেম্বরে। দুবাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৫৩ রানের জুটি গড়েছিলেন গ্রায়েম স্মিথ ও আলভিরো পিটারসেন।

৪৭ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান বিনা উইকেটে ১৫৩। ৭৯ রান নিয়ে খেলছেন এলগার, ৭৫ রান নিয়ে মারক্রাম।

অভিষেকে মারক্রামের পঞ্চাশ

যে আশা নিয়ে এইডেন মারক্রামকে দলে এনেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, শুরুটায় সেই আশা পূরণের প্রতিফলন। অভিষেক ইনিংসেই তরুণ ওপেনার করলেন অর্ধশতক।

৪৩ রান নিয়ে লাঞ্চে গিয়েছিলেন। লাঞ্চের পর তৃতীয় ওভারেই করে ফেললেন অর্ধশতক, ৭৭ বলে। অভিষেকে হাফসেঞ্চুরি করা নবম প্রোটিয়া ওপেনার তিনি।

৩০ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা বিনা উইকেটে ১১২। ৫৭ রানে উইকেটে এলগার, ৫৫ রানে মারক্রাম।

শতরানের উদ্বোধনী জুটি

নতুন উদ্বোধনী জুটির শুরুটা হলো দুর্দান্ত। ঘরোয়া ক্রিকেটের সফল জুটি ডিন এলগার ও এইডেন মারক্রাম টেস্টেও প্রথমবার একসঙ্গে ব্যাট করে দলকে এনে দিলেন শতরান।

লাঞ্চের পর প্রথম ওভারেই পূর্ণ হয় দলের শতরান। ২৯ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা বিনা উইকেটে ১০২।

বাংলাদেশের নিষ্ফলা সেশন

উইকেটে বোলারদের জন্য নেই তেমন কিছু। বাংলাদেশের বোলাররাও পারেনি বিশেষ কিছু করতে। বোলিং ছিল একদমই ধারহীন। ফিল্ডিংয়ে ছিল না তেজ। প্রথম সেশনটা তাই নির্বিঘ্নেই পার করে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

প্রোটিয়াদের নতুন উদ্বোধনী জুটি সফল প্রথম সুযোগেই। লাঞ্চের সময় ২৭ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে স্বাগতিকদের রান ৯৯।

৫৬ রান নিয়ে লাঞ্চে গেছেন এলগার। সঙ্গী মারক্রামের রান ৪৩।

লাঞ্চের আগে ৫ জন বোলার ব্যবহার করেছে বাংলাদেশ। বলার পর কিছু করতে পারেননি কেউ।

দক্ষিণ আফ্রিকা শুরুতে ছিল সাবধানী। প্রথম ১০ ওভারে রান ছিল ২৮। থিতু হওয়ার পর দুজনই খেলেছেন বেশ কিছু শট।

টস জিতে মুশফিক বোলিং নেওয়ায় অবাক হয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক। সময়ের সঙ্গে আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এরকম নিষ্প্রাণ, শুষ্ক ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিবেচনায় বেশ মন্থর উইকেটে টস জিতে বোলিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত।

মাত্র দুবারই এসেছিল উইকেটের সুযোগ। দুবারই ব্যাটসম্যান ছিলেন এইডেন মারক্রাম। ২৮ রানে তাসকিনের বলে তার বাতাসে ভাসানো বল পয়েন্টে সময়মত হাতে জমাতে পারেননি মুস্তাফিজ। ৩৬ রানে হতে পারতেন রান আউট। তবে সুযোগটা নিতে পারেনি বাংলাদেশ।

বেঁচে গেলেন মারক্রাম

তাসকিনের লেংথ বলটিতে ড্রাইভ করেছিলেন এইডেন মারক্রাম। বল হাওয়ায় ভেসে গেল পয়েন্টে। কিন্তু পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলেন না ফিল্ডার মুস্তাফিজুর রহমান। বল বেশ অনেক সময় বাতাসে ভাসলেও সময়মতো যেতে পারলেন না বলের নিচে। বল ফিল্ডারের হাতে জমল মাটিতে চুমু দিয়ে।

২৮ রানে বেঁচে গেলেন মারক্রাম। পয়েন্টের মত গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে কেন মুস্তাফিজ, সেই প্রশ্ন তোলাই যায়।

২০ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান বিনা উইকেটে ৭২।

উইকেটবিহীন প্রথম ঘণ্টা

শুরুতে উইকেট নেওয়ার আশায় আগে বোলিং নিয়েছিলেন মুশফিক। হলো উল্টো। ভালো শুরু করল দক্ষিণ আফ্রিকা। ডিন এলগার ও অভিষিক্ত এইডেন মারক্রাম উদ্বোধনী জুটিতে গড়লেন পঞ্চাশ রানের জুটি।

ওপেনিং জুটির সমস্যা মেটাতে মারক্রামকে এনেছে প্রোটিয়ারা। শুরুতেই সেটি সফল হওয়ার ইঙ্গিত। ১৭ ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম পঞ্চাশ রানের উদ্বোধনী জুটি এটি।

প্রথম ঘণ্টায় ১৫ ওভার বোলিং করেছে বাংলাদেশ। কোনো উইকেট মেলেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার রান কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৮।

প্রথম ১০ ওভারে রান এসেছিল ২৮। পরের ৫ ওভারে ৩০! ২২ রান নিয়ে উইকেটে মারক্রাম, ৩৬ রান নিয়ে এলগার।

ষষ্ঠ ওভারেই স্পিন

উইকেটে শুরুর আর্দ্রতা কাজে লাগাতে টস জিতে বোলিং নিলেন মুশফিক। কিন্তু আর্দ্রতার লেশ মাত্র চোখে পড়ল না উইকেটে। বরং বেশ শুষ্ক, বাউন্স খুব বেশি নেই। ফল হিসেবে, ষষ্ঠ ওভারেই স্পিন!

একাদশে তিন পেসার, কিন্তু প্রথম পরিবর্তন হিসেবে আক্রমণে মেহেদী হাসান মিরাজ। শুরুটাও বেশ ভালো করেছেন মিরাজ। ফ্লাইট, লেংথ ও গতি বৈচিত্রে একটু হলেও ভাবাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটসম্যানদের।

দক্ষিণ আফ্রিকার সাবধানী শুরু

ছবি: ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা

ছবি: ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা
৪০ টেস্টের অভিজ্ঞ ডিন এলগারের সঙ্গে অভিষিক্ত এইডেন মারক্রাম। দুজনে মিলে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা করলেন সতর্ক ব্যাটিংয়ে।

বাংলাদেশের শুরুটা ছিল প্রথম দুই ওভারে মেইডেন নিয়ে। শুরু করেছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। যদিও ব্যাটসম্যান ডিন এলগারের পরীক্ষা নিতে পারেননি সেভাবে। সব বলই ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে। পরের ওভার মেইডেন নেন শফিউল ইসলাম।

পরে দুই ব্যাটসম্যানই পেয়েছেন নিজেদের প্রথম বাউন্ডারি। ৫ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৩/০।

চোটের কারণে নেই সৌম্য, একাদশে মাহমুদউল্লাহ

চোটের কারণে বাংলাদেশ পাচ্ছে না ওপেনার সৌম্য সরকারকে। দলে এসেছেন লিটন দাস, মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশ একাদশ সাজিয়েছে তিন পেসার ও এক স্পিনার নিয়ে।

বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির রহমান, লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, শফিউল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান।

অনুমিতভাবেই দক্ষিণ আফ্রিকা দলে অভিষেক হচ্ছে ওপেনার এইডেন মারক্রামের। সঙ্গে টেস্ট ক্যাপ পেয়েছেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার আন্দিলে ফেলুকওয়ায়ো।

টস জিতে বোলিংয়ে বাংলাদেশ

ছবি: ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা

ছবি: ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা
মুশফিকুর রহিম ডাকলেন ‘হেড।’ ম্যাচ রেফারি জানালেন, টস জিতেছে বাংলাদেশ। মুশফিকের মুখে হাসি। তবে তার সিদ্ধান্তে হাসি ফুটে উঠল দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়কের কণ্ঠেও। বাংলাদেশ নিয়েছে বোলিং, দক্ষিণ আফ্রিকার পছন্দও ছিল আগে ব্যাটিং!

মুশফিক জানালেন, উইকেট ব্যাটিং সহায়কই; তবে পেসারদের জন্য কিছু থাকলে সেটা শুরুতেই থাকবে। সেই ভাবনা থেকেই বোলিং নেওয়া।

বাংলাদেশের সিদ্ধান্তে বিস্মিত দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসি। জানালেন, এই ব্যাটিং উইকেটে আগে ব্যাট করার সুযোগ তারা লুফে নিতে চান।

শুষ্ক উইকেট

পিচ রিপোর্টে শন পোলক জানালেন, উপরিভাগ শক্ত থাকলেও নিচে একটু নরম উইকেট। একই সঙ্গে বেশ শুষ্ক। ম্যাচের পরের দিকে টার্ন পেতে পারেন স্পিনাররা।

একই ধারণা মুশফিকেরও। বাংলাদেশ অধিনায়কের বিশ্বাস, তৃতীয় দিন থেকে টার্ন করতে পারে বল।

না থাকা তারা

ক্লান্তি ও অবসাদ কাটাতে সাকিব আল হাসান বিশ্রামে যাওয়ায় বাংলাদেশ এই সিরিজ খেলবে দলের সেরা ক্রিকেটারকে ছাড়া।

তবে না থাকা তারকার পাল্লা অনেক ভারী দক্ষিণ আফ্রিকা দলে। খেলছেন না এবি ডি ভিলিয়ার্স। চোটের কারণে নেই তিন পেসার ডেল স্টেইন, ভার্নন ফিল্যান্ডার ও ক্রিস মরিস।

দক্ষিণ আফ্রিকা দলে অভিষেক হতে যাচ্ছে এইডেন মারক্রামের। দক্ষিণ আফ্রিকার একমাত্র বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক তিনি, যদিও সেটি যুব বিশ্বকাপ। ২৩ ছুঁইছুঁই ওপেনার শুধু ভবিষ্যতের ব্যাটিং ভরসাই নন, মনে করা হচ্ছে প্রোটিয়াদের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক।

৯ বছর পর

ইমরুল কায়েসের সেটি অভিষেক সিরিজ। তামিম ইকবাল তখনও নবীন, সাকিব আল হাসান ব্যাট করতেন সাত-আটে। তখনও টেস্ট খেলছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশ সবশেষ দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট খেলেছিল তখন, সেই ২০০৮ সালে। ৯ বছর পর আবার প্রোটিয়া আঙিনায় বাংলাদেশ।

২০০২ ও ২০০৮, দক্ষিণ আফ্রিকায় দুবারের সফরে চার টেস্টের সবকটিতেই বাংলাদেশ হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে। তবে সেই সময়ের দলের সঙ্গে অনেক ব্যবধান এই সফরের দলের। মাঠের পারফরম্যান্সে এবার সেটি প্রমাণ করার পালা।

সুত্র:বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম.