তামাকের বিজ্ঞাপন ও বিক্রি বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৫ years ago

বার্তা পরিবেশক : তামাকের বিজ্ঞাপন ও বিক্রি বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে এবং সিগারেটের খুচরা বিক্রি বন্ধ করা হবে বলেন প্রধান অতিথি বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো: হেলাল উদ্দিন। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি (বিডিএমএস) ও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন এর যৌথ উদ্যোগে আজ ২০ জুলাই, শনিবার, বেলা ১১.০০টায় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি (বিডিএমএস), (সেঞ্চুরী আর্কেড, ৪র্থ তলা, ১২০, আউট সার্কুলার রোড, মগবাজার) কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে তামাক কোম্পানির বিজ্ঞাপন ও প্রচার- প্রচারণা বন্ধে ‘বিগ টোব্যাকো টাইনি টার্গেট বাংলাদেশ’ প্রতিবেদন উপস্থাপন ও করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সহ সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম তালুকদার। তিনি বলেন, স্কুল ও খেলার মাঠে ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকপণ্য বিক্রি বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং সরকারের ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গঠনে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি পদক্ষেপ গ্রহন করবে। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন দোকান মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মো: জহিরুল হক ভঁ‚ইয়া। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাভার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। ঢাকা মহানগর ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন মাকের্টের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। তামাক কোম্পানির বিজ্ঞাপন ও প্রচার- প্রচারণা বন্ধে ‘বিগ টোব্যাকো টাইনি টার্গেট বাংলাদেশ’ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সহকারী পরিচালক ও তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী মো: মোখলেছুর রহমান।

তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ব্যাপকতা ও ক্ষতির ভয়াবহতা বিভিন্নমূখি। সরকারের গেøাবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ এর তথ্যে দেখা যায় বাংলাদেশে ১৫ বছরের উর্ধ্বে ৩৫.৩% (৩ কোটি ৭৮ লক্ষ) প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষ তামাকজাত দ্রব্য (ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন) ব্যবহার করে। টোব্যাকো এটলাস-২০১৮ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে মারা যায় এক লক্ষ ষাট হাজার দুইশত জন। অথচ ২০০৪ সালে তামাকের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি একটি বিরাট হুমকি। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ অনুসারে আইনে বলা আছে সকল ধরনের তামাকের বিজ্ঞাপন, প্রচার-প্রচারণা নিষিদ্ধ এবং তামাক পণ্য ১৮ বছরের কম বয়সী কারো কাছে বিক্রি ও কারো দ্বারা বিক্রি উভয়ই নিষিদ্ধ, কিন্তু মানছেনা তামাক কোম্পানী। শিশু, কিশোর ও যুব সমাজকে তামাক ও ধূমপানে আসক্ত করা ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে তামাক কোম্পানীসমূহ বিভিন্ন কূট কৌশলের মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন, প্রচার-প্রচরণা চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে দোকানে যেভাবে তামাকজাতদ্রব্য প্রদর্শিত হচ্ছে তাতে করে শিশু-কিশোরদের তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি এক ধরনে আগ্রহ জন্মাচ্ছে। ফলে শিশুরা তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করছে এবং তারা স্বাস্থ্য ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
সম্প্রতি ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস্রে সহযোগিতায় বাংলাদেশে শিশুদেরকে তামাকজাতদ্রব্যের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে তামাক কোম্পানীগুলো যে সকল কৌশলসমূহ অবলম্বন করছে সে সক্রান্ত ‘বিগ টোব্যাকো টাইনি টার্গেট বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৯০.৬% স্কুল ও খেলার মাঠের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রিয় হয়; ৮১.৮৭% দোকানে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন হয় শিশুদের দৃষ্টি সীমানার মধ্যে (১ মিটারের মধ্যে); ৬৪.১৯% দোকানে ক্যান্ডি, চকোলেট এবং খেলনার পাশে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করতে দেখা যায় এবং ৮২.১৭% দোকানে তামাকের বিজ্ঞাপণ দেখা যায় মধ্যে ৬৭.৩৯% স্টিকার / খালি মোড়ক/ ফেস্টুন/ ফøায়ার এর বিজ্ঞাপন ছিল এবং ২৯.৬০% পোস্টার বিজ্ঞাপন ছিল। সুতরাং ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে তামাকের করাল গ্রাস হতে রক্ষায় সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন। অধিকন্তু, দেশের ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেও SDG এর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত লক্ষ্য-৩ অর্জনে আন্তর্জাতিক চুক্তি Framework Convention on Tobacco Control (FCTC)বাস্তবায়ন ও তামাকজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।