টেকনাফ টুডে ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়েছে। সতর্ক বার্তা দেওয়ার পরও তা ভঙ্গ করায় গতকাল শুক্রবার তার টুইটার বন্ধ করে দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার জানিয়েছে, ভবিষ্যতে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার ঝুঁকি থাকার কারণে এটা করা হয়েছে।
কোম্পানিটি বলছে, ‘@realDonaldTrump অ্যাকাউন্ট থেকে টুইটগুলো গভীর পর্যবেক্ষণ এবং সেটাকে ঘিরে যে প্রেক্ষাপট তৈরি’ হয়েছে তার ভিত্তিতে তারা এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছে। এর আগে একই অভিযোগে ট্রাম্পের ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্টে ফলোয়ার ছিল ৮ কোটি ৮০ লাখ। গত বুধবার ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে তার সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলার পর ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্টটি ১২ ঘণ্টার জন্য স্থগিত করা হয়েছিল।
ওইদিন বেশ কিছু টুইট করেন ট্রাম্প, যেখানে ক্যাপিটল হিলে হামলাকারীদের ‘দেশপ্রেমিক’ বলা হয়েছিল। টুইটার তখন সতর্ক করে বলেছিল, তারা ট্রাম্পকে চিরস্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করবে যদি তিনি এই প্ল্যাটফর্মের নিয়মনীতি তিনি ভঙ্গ করেন।
বুধবার টুইটারে ট্রাম্পের উসকানিমূলক বক্তব্যের পর শ্বেতাঙ্গ দাঙ্গাবাজরা ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালায় এবং এর ফলে এক নারী ও এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটে।
এদিকে, ট্রাম্পের টুইট অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করার প্রতিক্রিয়ায় তার ২০২০ সালের ক্যাম্পেইন উপদেষ্টা জ্যাসন মিলার টুইট করেছেন, ‘জঘন্য, আপনি যদি ভাবেন তারা পরবর্তী সময়ে আপনার দিকে আসবে না তাহলে আপনি ভুল করছেন।’
অনলাইনভিত্তিক বেশ কিছু প্ল্যাটফর্মে নিষিদ্ধ ট্রাম্প
বৃহস্পতিবার ফেসবুক বলেছে, তারা ট্রাম্পকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। জনপ্রিয় গেমিং প্ল্যাটফর্ম টুইস্ট ট্রাম্পকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। এই চ্যানেল ব্যবহার করে তিনি তার সমাবেশ সম্প্রচার করতেন।
স্ন্যাপচ্যাট থেকে নিষিদ্ধ ট্রাম্প। তার মেমোরিবিলিয়া বিক্রি করে এমন দুটি অনলাইন স্টোরকে এ সপ্তাহে নিষিদ্ধ করেছে ই-কর্মাস কোম্পানি শপিফাই।
ট্রাম্প টুইটারে তার প্রতিপক্ষদের অপমান করতেন, মিত্রদের উৎসাহিত করতেন, কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতি করতেন এবং তার ক্ষোভ প্রকাশ করতেন। তিনি প্রায়ই ইংরেজি ক্যাপিটাল লেটার অর্থাৎ বড় অক্ষর ব্যবহার করতেন। এবং তার তার পয়েন্টটা নজরে আনার জন্য বিস্ময়সূচক চিহ্ন ব্যবহার করতেন।
যদিও সমালোচকরা বলেন, তার সেসব পোষ্ট ছিল ভুল-তথ্য প্রবাহ, এই মাধ্যম ব্যবহার করে তিনি মূলধারার গণমাধ্যমকে পাশ কাটিয়ে মুহূর্তের মধ্যে তার ৮৯ মিলিয়ন অনুসারীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন। তার টুইট ভুল বানানের জন্য পরিচিত ছিল।
কী ঘটেছিল?
আমেরিকার আইন-প্রণেতারা বুধবার যখন নভেম্বরের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার জন্য অধিবেশনে বসেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শত শত সমর্থক তখন আমেরিকার আইনসভা কংগ্রেসের ভবন ক্যাপিটল-এ ঢুকে পড়ে। কয়েক ঘণ্টা ভবন কার্যত দখল করে রাখার পর বিক্ষোভকারীরা ধীরে ধীরে ক্যাপিটল প্রাঙ্গণ ছেড়ে বাইরে চলে যেতে থাকে।
রাজধানী ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১২ ঘণ্টার কারফিউ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সান্ধ্য আইন শুরু হওয়ার পরও শত শত বিক্ষোভকারীকে রাজপথে জটলা পাকাতে দেখা গেছে।
দুপুরের পরই আমেরিকার রাজধানীতে নাটকীয় দৃশ্যে দেখা যায় – শত শত বিক্ষোভকারী ভবনটিতে ঢুকে পড়ে আর পুলিশ কংগ্রেস সদস্যদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছে। কয়েক ঘণ্টা ভবন কার্যত দখল করে রাখার পর বিক্ষোভকারীরা ধীরে ধীরে ক্যাপিটল প্রাঙ্গণ ছেড়ে বাইরে চলে যেতে থাকে। ওই দিনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।