মোঃ আশেক উল্লাহ ফারুকী, টেকনাফ :
মাদক নির্মূলের নামে দেশব্যাপী অভিযান চলমান থাকলেও মাদকের গেটওয়ে টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন খালাসের পয়েন্ট এখনো অরক্ষিত রয়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সরকার নাফ নদী ও সাগরে জেলেদের মাছ আহরন বন্ধ করলেও রাতের আধারে বানের স্রোতের ন্যায় মাদকের শীর্ষ ইয়াবার চালান প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এসব ইয়াবার ছোট বড় চালান আইন শৃংখলা বাহিনী, বিজিবি, কোষ্টগার্ড, র্যাব ও পুলিশের হাতে প্রতিনিয়তই জব্দ হচ্ছে। অভিযানের শুরুতে টেকনাফ সীমান্তে তালিকাভূক্ত দুই মাদক ব্যবসায়ীকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যার পর এর প্রভাব পড়ে মাদক ব্যবসায়ীদের উপর। এর পর থেকে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকা ছাড়া হয়ে যায়। যুবলীগ নেতা ও কাউন্সিলার একরাম কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যার পর প্রশাসন এ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ মাদক বিরোধী অভিযান থমকে পড়ে। পরবর্তীতে টেকনাফ মাদক বিরোধী আরো বেগবান করতে সরকার টেকনাফের ৫ ইউনিয়নে র্যাব ক্যাম্প স্থাপন করে। এর পরও কিন্তু মাদক নির্মূল বা প্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছেনা। এ নিয়ে সীমান্তের সচেতন জনগণের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বলতে শুনা যায়, সেনাবাহিনীর দ্বারা মাদক ঠেকানো সম্ভব হবে। তাও না হলে মনে করতে হবে এটি আল্লাহর গজব। মাদক ও রোহিঙ্গা এ ২টি সমস্যার কারণে সীমান্তের সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা ও বসবাস অসহনীয় হয়ে উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিত্তশালীরা ইজ্জত আবরো ও ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ জীবনের দিকে থাকিয়ে অনেকেই এলাকা ছেড়ে শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বেসরকারী তথ্যমতে টেকনাফ সীমান্ত এলাকা ৮০% শতাংশ মানুষ মাদক ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। এর মধ্যে সরকারী তালিকা মতে প্রায় ২ হাজার শীর্ষ মাদক ও নব্য ব্যবসায়ী রয়েছে। এদের মধ্যে আলোচিত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা ক্রস ফায়ার আতংকে এলাকা ছাড়া হয়ে গেলেও বাকিরা স্ব স্ব এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরা ফেরা করছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে কতিপয় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা অকপটে বলেন, আমরা আইন শৃংখলা বাহিনীকে ম্যানেইজ করে এলাকায় এসেছি। এসেই ফের মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত হয়ে পড়ে। নাফ নদী ও সাগর পাড় দিয়ে নিশি রাতে আসা আলোচিত মাদক চোরাইপয়েন্ট গুলো এখন তরতাজা। মাছ আহরণ নিষিদ্ধ হলেও মাদক ও স্বর্নের চালান কিন্তু থামেনী।
পয়েন্টগুলো হচ্ছে, সাবরাং কাটাবনিয়া, খুরের মুখ, শাহপরীরদ্বীপ ঘোলার পাড়া, জালিয়াপাড়া, নয়াপাড়া ঘাট, কবিরের চিংড়ী প্রজেক্ট, নাজির পাড়া, মৌলভী পাড়া, মধ্যবর্তী ঘাট, টেকনাফ পৌর এলাকা জালিয়াপাড়া, কায়ুকখালী খাল, হেচ্ছাখাল, নাইট্যং পাড়া ঘাট, বরইতলী, কেরুনতলী, হ্নীলা, ওয়াব্রাং ও হোয়াইক্যং এর উনচিপ্রাং ঘাট।
সীমান্তের এসব পয়েন্ট দিবানিশি সংশ্লিষ্ট বাহিনীর পাহারা থাকলেও কিভাবে মিয়ানমার থেকে মাদক স্বর্ণ ও রোহিঙ্গা প্রবেশ করে তা নিয়েও সীমান্ত এলাকা প্রায় অভিযোগ উঠেছে।
সাবরাং ইউনিয়ন হচ্ছে, মাদকের জোন ও গেটওয়ে হিসাবে খ্যাত।
এ ইউনিয়নে শাহপরীরদ্বীপ জালিয়াপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, উত্তর পাড়া, দক্ষিণ পাড়া, জিনাপাড়া, হারিয়াখালী, নয়াপাড়া, পূর্ব পুরান পাড়া, মধ্যম নয়াপাড়া, পশ্চিম ও দক্ষিণ পুরান পাড়ার প্রায় ৫৯ জনের মাদকের তালিকা পাওয়া গেছে। এসব তালিকা সত্যতা নিশ্চিৎ করতে অনুসন্ধান চলছে। নিশ্চিৎ হলে মাদকের তথ্যসহ ওদের অতীত ও বর্তমান আয়ের উৎস মুখোশ উম্মোচন করা হবে।
মাদক বা ইয়াবা পল্লী হিসাবে পরিচিত টেকনাফ সদরের নাজির পাড়া ও মৌলভী পাড়ার শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ক্রসফায়ারের আতংকে পলাতক থাকলেও মাদক ব্যবসা ও পাচার নিয়ন্ত্রন করছেন, ওদের কেয়ারটেকার নামক কর্মচারীরা। এ দুই পাড়ায় মাদকের আদিপাত্যের প্রভাব প্রতিপাত্য বিস্তার নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকায় এক ক্রাসের রাজত্ব চলছে। ভবিষ্যতে এ নিয়ে খুনাখুনির আশংখা করছেন এলাকাবাসী। মাদকের কালো টাকা অর্জন এবং বড় লোক বনে যাবার প্রতিযোগিতা চলছে মাদক ব্যবসায়ীদের। আইন শৃংখলা বাহিনীর অভিযান জিমিয়ে পড়ায় এ সুযোগকে ওরা হাতে নিয়ে ইয়াবা পল্লীকে আরো সাজাতে শুরু করেছে।
এছাড়া ছোট ও বড় হাবিরপাড়ায় সমানতালে চলছে, মাদকের রমরমা বাণিজ্য। এখানে যে ক’জন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী রয়েছেন, তারা রাজনৈতিক নেতাদের লেজ ধরে ব্যবসা চালিয়ে ওরা কোটিপতির কাতারে শামিল হয়েছে। ওরা কালো টাকা সাদা করে ফেলেছে। ওদের অতীত ও বর্তমান আয় ও ব্যায়ের হিসাব নীরিক্ষা করলে থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে। এমন অভিযোগ এলাকাবাসী।
এদিকে টেকনাফ পৌরসভা পুরাতন পল্লান পাড়ায় ২ বর্মী নাগরিকের বসবাস নিয়ে এলাকায় আতংক বিরাজ করছে। এলাকাবাসী জানায়, উগ্রবাদী আরসা বাহিনীর স্বক্রিয় সদস্য কামাল ও জাবেদ নামে এ দুই যুবক এলাকায় স্থানীয়ভাবে বসবাস করে আসছে। ওরা স্থানীয় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে যোগসাজশে মাদক বা ইয়াবা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এলাকার যুবসমাজকে ওরা বিপদগামী ছাড়া ও নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। এনিয়ে অভিভাবকেরা চিন্তিত ও হতাশাগ্রস্থ। পুলিশ প্রশাসনের অভিযান নিতান্ত প্রয়োজন বলে এলাকাবাসী জানান।