টেকনাফ এজাহার গার্লস হাইস্কুল সরকারীকরণের দারপ্রান্তে

লেখক: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৭ years ago

হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম,টেকনাফ:দীর্ঘ ৩৩ বছরের পথ পরিক্রমায় অবশেষে সরকারীকরণের দোরগোড়ায় টেকনাফ এজাহার গার্লস হাইস্কুল। ১৯৮৫ সালের ১ জানুয়ারী প্রতিষ্টিত তৎকালে উপজেলায় নারী শিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্টান টেকনাফ এজাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকার জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়েছে। খবরটি সর্বপ্রথম ২৯ আগস্ট সকালে দৈনিক শিক্ষা অনলাইন বাংলা সংস্করনে প্রকাশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একাধিক সুত্রের বরাত দিয়ে ‘১৪৮টি স্কুল জাতীয়করণে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের তালিকায় কক্সবাজার জেলার একমাত্র স্কুল হচ্ছে টেকনাফ এজাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। বর্তমানে জাতীয়করণের চুড়ান্ত প্রক্রিয়া চলছে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ২৫ সেপ্টেম্বর উপ-সচিব আবু আলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন স্বাক্ষরিত স্মারক নং-৩৭.০০.০০০০.০৭১.০৮.০০৩.১৭/৮৮৬ মুলে এসংক্রান্ত চিঠি জারী করা হয়েছে।
বিভিন্নমুখী চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজকের এ অবস্থানে পৌঁছতে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করতে হয়েছে। টেকনাফ-উখিয়া থেকে নির্বাচিত সরকার দলীয় এমপি আলহাজ্ব আবদুর রহমান বদি সিআইপির পিতা টেকনাফ সদর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এজাহার মিয়া কোম্পানী (বর্তমানে প্রয়াত) ১৯৮৫ সালের ১ জানুয়ারী টেকনাফ উপজেলা পরিষদ এলাকা সংলগ্ন নিজস্ব ২.১০ একর জমিতে স্কুলটি প্রতিষ্টিত করেছিলেন।
১ম স্বীকৃতি লাভ করেছিল ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারী। ১ম এমপিওভুক্তির তারিখ ছিল ১ জুন ১৯৮৬ ইংরেজী। এমপিও কোড নং-০৩০৬০২১৩০২। ইআইআইএন নং-১০৬৪০১। শিক্ষা বোর্ড কতৃক প্রদত্ত কোড নং-৪৪৫১। উপবৃত্তির কোড নং-০১০০০৭১২। আইসিটি ল্যাব ১টি, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম ১টি, বিজ্ঞানাগার ১টি, গ্রন্থাগার ১টি, পুস্তকের সংখ্যা ৪৩৮০টি। বর্তমানে এ স্কুলে ৩টি ভবনে ১৪টি কক্ষ রয়েছে। ৪৮৩ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। তম্মধ্যে ৬ষ্ট শ্রেনীতে ১২৫ জন, ৭ম শ্রেনীতে ১০১ জন, ৮ম শ্রেনীতে ৮৯ জন, ৯ম শ্রেনীতে ৯৪ জন, ১০ম শ্রেনীতে ৭৪ জন। ১১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ৫ জন কর্মচারীসহ মোট ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। এরা হলেন প্রধান শিক্ষিকা শিউলী চৌধুরী বিএবিএড (যোগদান ১৬.৯.১৯৮৯), সহকারী প্রধান শিক্ষক শব্বির আহমদ বিএসএসএস অনার্স এমএসএস (যোগদান ১.১০.২০১০), সহকারী শিক্ষিকা সমাজ বিজ্ঞান জাহেরা বেগম বিএবিএড (যোগদান ১.২.১৯৮৭), সহকারী শিক্ষক গণিত বাবু লক্ষী হরি দে বিএসসিবিএড (যোগদান ১.১.১৯৯০), সহকারী শিক্ষিকা বাংলা বেগম নুর জাহান আজাদ এমএবিএড (যোগদান ৪.২.১৯৮৫), সহকারী শিক্ষক ধর্ম মোঃ আশেকুল্লাহ ফারুকী কামিল (যোগদান ১০.২.১৯৮৭), সহকারী শিক্ষক বিজ্ঞান মোঃ আজিজুল হক বিএসসিবিএড (যোগদান ২.১২.১৯৮৯), সহকারী শিক্ষিকা ইংরেজী দিলনেছা বেগম বিএবিএড (যোগদান ১.৮.১৯৯২), সহকারী শিক্ষক কাব্যতীর্থ বাবু সিঁদুল কান্তি দে এমএবিএড (যোগদান ৩.৮.২০০২), সহকারী শিক্ষক আইসিটি মোঃ জয়নাল আবেদীন এমএবিএড (যোগদান ২০.৯.২০০৪), সহকারী শিক্ষিকা শরীর চর্চা শিখা রাণী পাল জেডিপিসিএনএড (যোগদান ৭.৮.১৯৮৮), সহকারী গ্রন্থগারিক ছৈয়দ হোসেন বিএ অনার্স এমএপিজিডিএলআইএস (যোগদান ১.১০.২০১৫), অফিস সহকারী আনিস উদ্দিন আইকম (যোগদান ২.১১.১৯৮৭)। এছাড়াও বিপ্লব দাশ (যোগদান ২.৫.২০১৭),, লাল মিয়া নাইটগার্ড (যোগদান ১.১০.২০০২), ও বেবী শর্মা আয়া (যোগদান ১.১১.২০১৩) নামে ৩ জন কর্মচারী রয়েছেন।
১৯৮৯ সালের ১৬ জুলাই থেকে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করে আসছেন শিউলী চৌধুরী। তাঁর পৈত্রিক নিবাস কক্সবাজারের খুরুস্কুল। স্বামী প্রিয়তোষ দেব টেকনাফ কৃষি ব্যাংকের ম্যানেজার। তাঁর আগে আরও ৫ জন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। স্কুল প্রতিষ্টার পর প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন বিমল বড়–য়া। এরপর মিনাক্ষী বড়–য়া, হাসান আলী, আবদুল গফুর এবং তৎকালীন উপজেলা কৃষি অফিসার গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী তহুরা বেগম।
বিগত ৩ বছরের জেএসসি এবং এসএসসি পরিক্ষার ফলাফলে দেখা যায় প্রতি বছরই স্কুলটি সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে আসছে। ২০১৪ সালের জেএসসি পরিক্ষায় ৬৬ জন অংশ নিয়ে ৫৪ জন পাশ করেছিল। পাশের হার ৮২%। ২০১৫ সালের জেএসসি পরিক্ষায় ৬৮ জন অংশ নিয়ে ৬৮ জনই পাশ করেছিল। পাশের হার শতভাগ। ২০১৬ সালের জেএসসি পরিক্ষায় ৮০ জন অংশ নিয়ে ৭৯ জন পাশ করেছিল। পাশের হার ৯৮%। ২০১৪ সালের এসএসসি পরিক্ষায় ৪২ জন অংশ নিয়ে ৩৮ জন পাশ করে। পাশের হার ৯০.০৫%। ২০১৫ সালের এসএসসি পরিক্ষায় ৪১ জন অংশ নিয়ে ৩৭ জন পাশ করে। পাশের হার ৯০.২৪%। ২০১৬ সালের এসএসসি পরিক্ষায় ৬৩ জন অংশ নিয়ে ৬০ জন পাশ করে। পাশের হার ৯৫.০৫%।
চট্রগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক কাজী নাজিমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল স্মারক নং-চশিবো/বিদ্যা/কক্স/(টেক)/৮৮/৯৬/৯৩২২ (৩) মুলে ইস্যুকৃত আদেশ মতে ১১ সদস্য বিশিষ্ট ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে স্কুলের প্রতিষ্টাতা আলহাজ্ব এজাহার মিয়া কোম্পানীর ছোট ভাই টেকনাফ পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব মোঃ ইসলাম সভাপতি, পদাধিকার বলে প্রধান শিক্ষিকা সদস্য সচিব, আলহাজ্ব আবদুল গফুর শরীফ দাতা সদস্য, আলহাজ্ব মোঃ আবু হারেছ কাউন্সিলার অভিভাবক সদস্য, হাজী আমির হোসেন অভিভাবক সদস্য, মোঃ আবদুল করিম অভিভাবক সদস্য, মোঃ আলী অভিভাবক সদস্য, কাউন্সিলার কুহিনুর আক্তার সংরক্ষিত মহিলা অভিভাবক সদস্য, লক্ষী হরি দে শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য,মোঃ জয়নাল আবেদীন শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য, দিলনেছা বেগম সংরক্ষিত মহিলা শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য রয়েছেন।
এদিকে খবরটি জানাজানি হওয়ার সাথে সাথে স্কুল বন্দ হওয়া সত্বেও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ ও শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ আনন্দিত হয়ে স্কুলে উপস্থিত হন। তাৎক্ষনিক শুকরিয়া সভার আয়োজন করা হয়। মুনাজাত পরিচালনা করেন হেড মাওলানা মোঃ আশেকুল্লাহ ফারুকী। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও টেকনাফ পৌরসভার মেয়র হাজী মোহাম্মদ ইসলাম প্রতিক্রিয়ায় মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে এজন্য প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব বিশেষতঃ প্রধান ভুমিকা পালনকারী এমপি আলহাজ্ব আবদুর রহমান বদি সিআইপিকে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
উল্লেখ্য, প্রয়াত আলহাজ্ব এজাহার মিয়া কোম্পানীর প্রাতিষ্টানিক বিদ্যা ছিলনা। তা সত্বেও টেকনাফের শিক্ষার উন্নয়নে অনুকরণীয় ভুমিকা রেখে গেছেন। তিনি এবং তাঁর ভাই ও তাঁদের সন্তান বর্তমান এমপি আলহাজ্ব আবদুর রহমান বদি সিআইপি ধর্ম-কর্মসহ শিক্ষার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখেছেন। তাঁর জীবদ্দশায় টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লম্বরী গ্রামে প্রথমা স্ত্রীর নামে প্রতিষ্টা করেছেন ‘লম্বরী মলকাবানু হাইস্কুল’। বর্তমানে এ স্কুলটিও সুনামের সাথে পরিচালিত হচ্ছে।