টেকনাফ টুডে ডেস্ক : টেকনাফে র্যাবের হাতে বিপূল পরিমাণ ইয়াবা ও অস্ত্রসহ আটক মাদক কারবারী সিন্ডিকেটের সদস্য মাফিয়া ডন বার্মাইয়া নুর হাফিজ এবং সহযোগী সোহেলকে নিয়ে পুলিশের অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার অভিযানে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে মারা গেছে। এতে পুলিশের ৫ জন সদস্য আহত হলেও বিপূল পরিমাণ মাদক এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। হ্নীলা-হোয়াইক্যংয়ের সবচেয়ে বড় মাদক সিন্ডিকেটের গডফাদার নিহত হওয়ার পর সীমান্তের অপরাধ জগত ভেঙ্গে তছনছ হয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সুত্র জানায়, ১৪ডিসেম্বর (শনিবার) ভোররাতে টেকনাফ মডেল থানার এসআই মশিউর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ র্যাব-৭ কর্তৃক ৮ লাখ ১০ হাজার ইয়াবা, ৬টি অস্ত্র ও ৭০ রাউন্ড বুলেটসহ সোর্পদকৃত হ্নীলা রঙ্গীখালীর গাজী পাড়ায় বসবাসরত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত ইয়াবা কারবারী নয়াবাজারের মৃত দিল মোহাম্মদের পুত্র বার্মাইয়া নুর হাফিজ (৩২) এবং সহযোগী সব্বির আহমদের পুত্র মোঃ সোহেল (২৭) এর স্বীকারোক্তিতে তাদের আস্তানায় অবৈধ অস্ত্র এবং মাদক উদ্ধার অভিযানে যায়।
এসময় নুর হাফিজ সিন্ডিকেটের স্বশস্ত্র সদস্যরা পুলিশের নিকট হতে তাদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করলে পুলিশের এসআই কামরুজ্জামান (৫০), এএসআই সনজিব দত্ত (৩২), মিশকাত উদ্দিন (৩০), কনস্টেবল সিকান্দর আলী (২৩) ও মহিউদ্দিন (২২) আহত হয়। পুলিশও সরকারী সম্পদ এবং আতœরক্ষার্থে বেশ কয়েক রাউন্ড পাল্টা গুলিবর্ষণ করলে কিছুক্ষণ পর হামলাকারীরা পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়। তখন পুলিশ ঘটনাস্থল তল্লাশী করে ৯৫হাজার পিস ইয়াবা, ৬টি দেশীয় তৈরী এলজি, ১৮রাউন্ড তাজা কার্তুজ ও ১৩ রাউন্ড খালি খোসাসহ গুলিবিদ্ধ নুর হাফিজ এবং সোহেলকে উদ্ধার করে দ্রæত চিকিৎসার জন্য টেকনাফ উপজেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সেখানে আহত পুলিশ সদস্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গুলিবিদ্ধ মাদক কারবারীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাদের মৃত ঘোষণা করেন। মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এই ঘটনায় সরকারী কাজে বাঁধা প্রদান, মাদক, অবৈধ অস্ত্র ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় পৃথক মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
উল্লেখ্য, হোয়াইক্যং নয়াবাজারের ফেরারী আসামী রাকিব আহমেদ মেম্বারের সাথে চোরাচালানের সুবাদে নুর হাফিজ ও মোঃ নুর সহোদর বাংলাদেশ ভূখন্ডে আশ্রয় নেয়। স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার এবং গ্রুপিং রাজনীতির বলীর পাঠা হয়ে এই নুর হাফিজ সহোদর কাছার পাড়ায় বসতি গড়ে জীবন-যাপন শুরু করে। পরিস্থিতির কারণে রাকিব মেম্বারের সাথে নুর হাফিজদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হলে ওপারে ঘণিষ্টজন থাকায় দুই সহোদরই সীমান্ত চোরাচালান এবং মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় হয়ে উঠে। ২০১৭ সালে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা, রোহিঙ্গা উগ্রপন্থী নেতাদের সাথে আতাঁত, বাংলাদেশী স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে এই সীমান্তে হয়ে উঠে মাফিয়া ডন। পার্শ্ববর্তী কিছু গরীব অসহায় মানুষকে টাকা-পয়সা দিয়ে দানবীর সাজানোর চেষ্টা চালালেও মুলত হ্নীলা-হোয়াইক্যংয়ের মাফিয়া জগতই এই নুর হাফিজদের অঘোষিত নিয়ন্ত্রণে থাকতো। কেউ এই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করলে ষড়যন্ত্রের পাতানো জালে আটকে হয়রানির শিকার হতে হতো।
এইদিকে সরকারের মাদক বিরোধী অভিযান জোরদার হওয়ার পর আইন-শৃংখলা বাহিনীর চাপের মুখে প্রাণে রক্ষার্থে হ্নীলা গাজী পাড়ায় এক মহিলাকে বিয়ে করে আত্নগোপনে থাকার চেষ্টা চালালেও মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালানের অপকর্ম বন্ধ করতে পারেনি। এই মাদক কারবারীর ইয়াবা ও স্বর্ণের চালান খালাসকালে লুটপাট এবং প্রশাসনিক অভিযানে অনেক নাটকীয় ঘটনার সুত্রপাত পর্যন্ত ঘটে। বন্দুকযুদ্ধে এই দুইজন নিহত হওয়ার পর হ্নীলা-হোয়াইক্যংয়ের মাদক সম্রাজ্য ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে লেদায় মৌলভী পাড়ায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গা মৌলভী আনসার উল্লাহ, পূর্ব লেদা,দক্ষিণ লেদা,মোচনী,নয়াপাড়া,জাদিমোরা-দমদমিয়ার রোহিঙ্গা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে মাদক বিরোধী অভিযানের এই অর্জন ব্যাহত হতে পারে!