টেকনাফের নাফনদীতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা ৪ বছরেও জেলেদের ভাগ্য খুলেনি ; মাদক কারবারীদের পোয়াবারো

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৪ years ago

রহমত উল্লাহ : মিয়ানমার‌ থেকে ইয়াবার চালান রোধকল্পে নাফনদীতে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা ৪ বছর শেষে হলেও জেলেদের ভাগ্য খুলেনি এখনও। পাওয়া যায়নি নাফনদীতে মাছ ধরার অনুমতি। টেকনাফের ৭ হাজার জেলে পরিবারে দুর্ভোগ বেড়েছে। সাথে সাথে বাড়ছে মাদক কারবারীদের অপতৎপরতা। যা মোটেও সীমান্তের জন্য শুভ লক্ষণ বলে মনে হচ্ছে না।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৭আগস্ট থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেয়ায়২০১৮ (জানুয়ারি পর্যন্ত) রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামার পরবর্তী‌ সময় ৪ বছর পার হয়ে গেছে। ওই সময় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও ইয়াবার চালান রোধে নাফনদীতে মাছধরা বন্ধ করে দেয়া হয়। মাদক-ইয়াবা বাংলাদেশে প্রবেশ রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

রোহিঙ্গাসহ কিছু স্থানীয় ইয়াবা গডফাদারদের ইশারায় বর্তমানেও মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান আসছে নাফনদী হয়ে টেকনাফে।

৪ বছরের বেশী সময় ধরে জেলে পরিবারে দুর্দিন চললেও নাফনদীতে মাছ ধরার অনুমতি মিলছেনা। তখন থেকে টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অর্ধ শতাধিক নৌকা ঘাটে নোঙর করে আছে।কিছু কিছু নৌকা অকেজো হয়ে পড়ে ব্যবহার অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। জেলেরা বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে এমনিতেই নাফ নদীতে নানা সময়েই মাছ ধরার উপর বিজিবির বিধি নিষেধ থাকে।

নাফ নদীতে মাছ ধরার অনুমতি মিললেও নাফ নদীতে এখনও নামতে পারছে না টেকনাফের ১০ হাজারের বেশি জেলে।

এর ফলে জেলা পরিবারে অভাব-অনটন দেখা দিয়েছে। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী জেলেদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা থাকলেও কিছু সংখ্যক জেলে সে ভাতার মুখ দেখেন। আরও অধিকাংশ জেলে বছরের পর বছর ধরে ভাতা বঞ্চিত হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শাহপরীর দ্বীপের জেলেদের অভিযোগ মায়ানমারের জেলেদের বিরুদ্ধে। নাফ নদীর মোহনায় বঙ্গোপসাগরের স্বচ্ছ পানিতে লাইট জাল ফেলে মাছ ধরেন মায়ানমারের জেলেরা। মাছধরার কয়েকটি নৌকা একত্রিত হয়ে একসঙ্গে ৪০-৫০টি লাইটের আলো ফেলে সমুদ্রের পানিতে। তখন মাছ ছুটে আসে আলোর দিকে। জেলেরা চারিদিকে জালের ব্যারিকেড দিয়ে মাছ ধরে ফেলে। আবার অনেক সময় সীমান্ত বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবা নিয়ে আসে তারা। সাম্প্রতি সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্টে এই ধরনের অপতৎপরতা সুশীল সমাজে অজানা আতংক দেখা দিয়েছে।

টেকনাফ পৌরসভার জেলেরা জানায়, মিয়ানমার থেকে ঢালাওভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আগে ভালই চলছিল প্রতিটি জেলে পরিবারের সংসার। নাফনদীতে জাল ফেলে তারা প্রতিদিন আহরণকৃত মাছ বিক্রি করে ২-৩ হাজার টাকা হারে কামাই করতে পারত। এখন ইয়াবা আসতেছে সে সুযোগ আর নেই।সীমানা চিহ্নিত ওই নদীতে শুধু নামতে পারছেনা বাংলাদেশী জেলেদের নৌকাগুলো।

সম্প্রীতি সময়ে কোটি, কোটি টাকার মালিকবিহীন ইয়াবা উদ্ধার করতেছে বিজিবি তাও ইয়াবা বন্ধ হচ্ছে না।

শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ার জেলে হামিদ কায়সার বলেন,নদীর তীরে খাস জমিতে ঘর বেঁধে দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করছি। নাফ নদীতে মাছ ধরাই আমার একমাত্র জীবিকা ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জীবিকায় দেখা দিয়েছে নানা সংকট। নাফ নদীতে মাছ ধরে আগে আমরা অনেক ভালো ছিলাম। এখন সংসার চালিয়ে নিতেই কষ্ট হয়।

আমরা স্বাধীন দেশের মানুষ। স্বাধীনভাবে জীবিকা নির্বাহ করে বাঁচতে চাই নাফ নদীতে মাছ ধরার অনুমতি ছাড়া আমাদের বাঁচার বিকল্প পথ নেই।জেলেরা বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। এলাকার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে।উল্লেখ্য টেকনাফে ৭ হাজার ৮৮৩ জন, নিবন্ধিত জেলে রয়েছে।

নাফ নদী জেলেদের কষ্টের কথা ভেবে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন- সাবরাং নয়া বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্বাস উদ্দীন রাজুর একটি কমেন্ট নজরে আসে। তিনি লিখেছেন,আমার খালার পরিবার অভাবের কারণে পথে বসেছে। কত সুন্দর সুখের সংসার ছিলো,যখন নাফ নদীতে মাছ ধরতো।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এরশাদের কমেন্ট ও চোখে পড়েছে,, টেকনাফের ৮০% মানুষের প্রধান জীবিকা আসে মাছ শিকার করে।দীর্ঘ ৪ বছর যাবত নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ করে দিয়ে অনাহারে জীবন চালাতে হচ্ছে জেলেদের।এগুলো কারো চোখে পড়তেছেনা।ইয়াবার কারবারীর দোহাই দিয়ে গরিব জেলেরা না খেয়ে মারা যাবে, তাদের জীবিকা বন্ধ করে দিবে এইটা মেনে নেওয়া সম্ভব না।ইয়াবা কারবারীরা ঠিকই টাকা পয়সা দিয়ে মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে ব্যবসা চলমান রাখছে কিন্তু গরিব জেলেদের কোন ঠাই হচ্ছে না।এই ব্যাপারে উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে বিষয়টা জানানোর জন্য এলাকার ক্ষমতাশালী মানুষের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন,, নাফ নদী খুলে দেওয়ার জন্য অনেক বার প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি ও দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সম্প্রীতি সময়ে কোটি টাকার ইয়াবার চালান আসতেছে। ইয়াবার জন্য নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ করা হলে ও কিন্তু ইয়াবা পাচারতু বন্ধ হচ্ছে না! তাইলে জেলেদের শর্ত সাপেক্ষে নাফ নদী খুলে দিলে সমস্যাটা কী?তবে আমি স্থানীয় সরকার বিভাগকে বলব আমাদের অসহায় জেলেরা যেন মাছ ধরার অনুমতি পান। বিভিন্ন সময়ে জেলেদের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যতটা সম্ভব সহায়তা করা হয়।