টইটংয়ে মুক্তিযোদ্ধার বাগান লুটে জড়িত কিশোর গ্যাং চক্রের হোতা বুলেট : পুলিশের তদন্তে সত্যতা

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৫ years ago

এম.জিয়াবুল হক : পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রথম চেয়ারম্যান ও বীরমুক্তিযোদ্ধা রমিজউদ্দিন আহমদের বাগান কেটে গাছ লুটের ঘটনায় অবশেষে পেকুয়া থানায় সাতজনের বিরুদ্ধে এজাহার দেওয়া হয়েছে। গত ৩ মে মুক্তিযোদ্ধা রমিজউদ্দিন আহমদ বাদি হয়ে অভিযোগটি দাখিল করেছেন। এতে আসামি করা হয়েছে, টইটং ইউনিয়নের পূর্ব সোনাইছড়ি রমিজপাড়া গ্রামের মৃত নুরুল হকের ছেলে আহমদ ছফা, তার ছেলে মিনার উদ্দিন বুলেট, রাজা মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ হোছন, শাকেরের ছেলে আতিকুর রহমান, লাতু মিয়ার ছেলে রাসেল, তোফায়েল, রোবেলকে।
সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা রমিজ উদ্দিন আহমদের অভিযোগটি আমলে নিয়ে পেকুয়া থানার ওসি মো.কামরুল আজম ঘটনাটি তদন্তে পেকুয়া থানার এসআই সুমন সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে ৪ মে এসআই সুমন সরকারসহ সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স উপজেলার টইটং ইউনিয়নের পূর্ব সোনাইছড়ি রমিজপাড়ায় পরিদর্শন করেছেন। ওইসময় পুলিশের তদন্ত টিম মুক্তিযোদ্ধার বাগান থেকে বিপুল পরিমাণ শিব বাঁশ ও গর্জনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে লুটের বিষয়টি সত্যতা পেয়েছে।
পেকুয়া থানায় বাগান মালিক লিখিত অভিযোগ জমা দেয়ার পর থানার এসআই সুমন সরকার ৪ মে দুপুর ১২ টার দিকে তদন্তে ঘটনাস্থলে পৌঁছে। ওইসময় পুলিশের উপস্থিতির খবর পেয়ে রমিজপাড়া গ্রামের বিপুল লোকজন সেখানে জড়ো হন।
এ সময় পুলিশকে স্থানীয় লোকজন বাগানের গাছ লুটের বিষয়টি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবহিত করেছেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্বাক্ষীরা পুলিশকে জানান, গত ২২ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে স্থানীয় একটি কিশোর গ্যাং চক্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রমিজ উদ্দিন আহমদের বসতবাড়ি লাগোয়া সৃজিত নিজস্ব বাগানে হানা দেয়। তারা ওইসময় ধারালো দা, কিরিচ, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ভীতি ও আতংক ছড়িয়ে চেয়ারম্যানের বাগান থেকে বড়, মাঝারি ও বিভিন্ন আকৃতির বিপুল পরিমাণ বৃক্ষ কেটে সাবাড় করে দেয়। পরবর্তীতে চক্রটি বাগানের অন্তত চারশত শিব বাঁশ, তিনটি গর্জনসহ একাধিক বনজ বৃক্ষ কেটে লুট করে নিয়ে যায়।
তদন্তকালে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে জানায়, বাগান লুটের ঘটনায় অভিযুক্ত চক্রটি অন্তত তিন লাখ টাকার গাছ চেয়ারম্যানের বাগান থেকে পাচার করে। পরবর্তীতে লুন্ডিট তিনটি গর্জন গাছ আরবশাহ বাজারের একটি স’মিলে আটক করে।
এলাকাবাসি জানিয়েছে, রমিজপাড়া গ্রামের মৃত নুরুল হকের ছেলে আহমদ ছফা দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশি লোকজনের জায়গা-জমি দখলের সঙ্গে জড়িত। আগেও তিনি চেয়ারম্যান রমিজউদ্দিন আহমদের জমি-জমা দখলে হামলা চালিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে ধর্ষণ হত্যা দুস্যতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ধর্ষন ও হত্যা মামলায় আদালত থেকে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী থাকলেও রহস্যজনক কারণে গ্রেফতার হচ্ছেনা আহমদ ছফা। এই সুযোগে দিনের পর দিন এলাকায় ভয়ংকর অপর্কম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ তুলেছেন, আহমদ ছফার মতো কিশোর বয়সের শুরুতে তাঁর ছেলে মিনার উদ্দিন বুলেট নানাধরণের অপর্কমে জড়িয়েছে। বর্তমানে এলাকায় সর্বসাধারণের মাঝে মুক্তিমান আতঙ্ক এই বুলেট। বেশ কিছুদিন ধরে এলাকায় কিশোর গ্যাং গড়ে তোলে দিব্যি অপরাধকর্ম সংগঠিত করে যাচ্ছে বুলেট। পুলিশের নিস্কৃতার সুযোগে সর্বশেষ কিশোর গ্যাং চক্রের হোতা বুলেটের নেতৃত্বে ঘটেছে মুক্তিযোদ্ধার বাগান কেটে গাছ লুটের ঘটনা।
এলাকাবাসি জানায়, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে পেকুয়া উপজেলার টইটং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দেশসেরা খেতাব অর্জন করেন। সেইদিন আহমদ ছফার ছেলে মিনার উদ্দিন বুলেট টইটং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পক্ষে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তাকে সরকারিভাবে বিকেএসপিতে খেলার সুযোগ দেয়া হয়।
এলাকাবাসি জানিয়েছে, বিকেএসপিতে সুযোগ পেয়ে বেশ ক’বছর সেখানে খেলাধুলা করলেও একবছর আগে অনৈতিক কর্মকাÐ জনিত কারণে বাদ পড়েন বুলেট। সেই থেকে এলাকায় ফিরে বেপরোয়া জীবন-যাপন শুরু করেন বুলেট। তারপর এলাকায় বিভিন্ন পরিবারের স্কুলপড়–য়া শিক্ষার্থীদের বিপদগামী কাজে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে কিশোর গ্যাং তৈরী করেন মিনার উদ্দিন বুলেট। সেই থেকে বুলেট তার বাবার মতো এলাকায় বিভিন্ন জনের জমি-জমা দখল বেদখল থেকে শুরু করে সামাজিক নানা ধরণের অপরাধমুলক কর্মকাÐ করে যাচ্ছেন নিবিগ্নে। সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধা রমিজউদ্দিন আহমদের বাগান কেটে গাছ লুটের ঘটনা জন্ম দিয়ে আলোচনায় আসেন কিশোর গ্যাং চক্রের হোতা বুলেট।
পেকুয়া থানার এসআই সুমন সরকার তদন্ত কার্যক্রম শেষে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী নুরুল আলমের ছেলে ওসমান গণি, তার ভাই নুরুল আজিম উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, চেয়ারম্যান রমিজউদ্দিন আহমদ একজন সম্মানী ব্যক্তি। তার ছেলেরা দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন। এই সুযোগে সম্মানী এই মানুষটিকে জিম্মী করে তারা গাছ লুট করছে। স্থানীয় আবদুল করিমের ছেলে মো: বাচ্চু, হাজী আলী হোসেনের ছেলে আসিফ জানান, আমরা তিনটি গাছ রাজা মিয়ার পুকুরে স্তুপ করেছে সেটি জেনেছি। একবার চেয়ারম্যান সাহেব আমাদেরকে নিয়ে গাছ রক্ষার জন্য ভিটায় গিয়েছিলাম। পেটান সওদাগর নামক পশ্চিম টইটংয়ের একজন গাছ ব্যবসায়ীকে বুলেট ও আহমদ ছফাসহ ওই চক্র গাছগুলি বিক্রি করেছে। আহমদ নবী নামক এক পেঁপে বাগান মালিক শিব বাঁশ কিনেছে। তবে বাঁশগুলি ওদের বলেছে।
অভিযোগটির তদন্ত কর্মকর্তা পেকুয়া থানার এসআই সুমন সরকার সাংবাদিকদের জানান, আমি সরেজমিনে গিয়েছিলাম। গাছের তরতাজা গুড়ালি দেখেছি। আসলে গাছগুলি সেখান থেকে কেটে নিয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। স্বাক্ষী প্রমাণ নিয়েছি।
বিষয়টি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার রাতে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.কামরুল আজম বলেন, টইটং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা রমিজউদ্দিন আহমদের বাগানের গাছ কেটে লুটের ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। সেটি তদন্তের জন্য থানার এসআই সুমন সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই অভিযোগটি মামলা হিসেবে রের্কড করা হবে। তাতে কাউকে রেহায় দেওয়া হবেনা। ##