টেকনাফ টুডে ডেস্ক |
লর্ডসে সেঞ্চুরির পর তামিম ইকবালের রাজকীয় উদযাপন আজও ক্রিকেট রোমান্টিকদের চোখে ভাসে। অনুশীলনের জন্য মাঠে নামার পর কালও ড্রেসিংরুমের ব্যালকনির দিকে একবার চেয়ে দেখলেন তামিম। পুরনো সুখস্মৃতি নিশ্চয় মনের ক্যানভাসে উঁকি দিচ্ছিল। ক্রিকেটের সূতিকাগার লর্ডসে নামার জন্যই তো ভাগ্য লাগে। টেস্টে সেই সুযোগ পেয়ে অনার্স বোর্ডে নাম লিখিয়ে উপলক্ষটা রাঙিয়েছিলেন তামিম। তারপর পেরিয়ে গেছে নয় বছর।
এতদিনে লর্ডসে ওয়ানডে খেলার সৌভাগ্য হচ্ছে বাংলাদেশের। এতে রোমাঞ্চিত হওয়ার কথা পুরো দলের। কিন্তু ভেতরে ভেতরে চাপা উত্তেজনা থাকলেও বাইরে সেটা দেখানোর উপায় নেই। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার যে স্বপ্ন নিয়ে ইংল্যান্ডে আসা সেটা তো ভারতের বিপক্ষে হেরেই শেষ হয়ে গেছে। লিগপর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা আজ বাংলাদেশের জন্য শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। এ ম্যাচ দিয়েই শেষ হচ্ছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ।
পাকিস্তানের বিপক্ষে নামার আগে শেষ ধাক্কাটা দিলেন মুশফিকুর রহিম। কাল অনুশীলনের সময় ডান হাতের কনুইয়ে চোট পেয়েছেন। যদিও টিম ম্যানেজমেন্ট আশা করছে তার খেলতে কোনো সমস্যা হবে না।
ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের, শেষটাও জয় দিয়ে রাঙাতে চায় বাংলাদেশ। আজ ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে পাকিস্তানকে হারাতে পারলে পঞ্চম স্থানে থেকে বিশ্বকাপকে বিদায় বলার সম্ভাবনা থাকবে মাশরাফিদের। নিয়মরক্ষার ম্যাচ হলেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এ ম্যাচেরও গুরুত্ব কম নয়।
ভারতের বিপক্ষে হারের পর যন্ত্রণা ভোলার উপায় খুঁজছিল বাংলাদেশ। বুধবার ইংল্যান্ড জেতায় সেই উপলক্ষটা হয়তো পেয়ে গেছেন মাশরাফিরা। এখন অন্তত এটা বলে বাংলাদেশ দল নিজেদের সান্ত্বনা দিতে পারবে যে, ভারতের বিপক্ষে জয় পেলেও সেমিফাইনালে খেলার আশা থাকত শুধু কাগজে-কলমে।
বার্মিংহাম থেকে বাসে লন্ডন ফেরার পথে এ নিয়ে বাংলাদেশ দলের কয়েকজন আলোচনাও করেছেন। ভারতকে হারানোর পর নিউজিল্যান্ডকেও উড়িয়ে তৃতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপের স্বপ্ন আগেই শেষ হয়েছে, তবে এখনও কিছু প্রাপ্তির হাতছানি রয়েছে বাংলাদেশের। বিশ্বমঞ্চে পঞ্চম দল হওয়া কম গৌরবের নয়। বাংলাদেশ যে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়েছে সেটাও দেখানোর সুযোগ বটে।
বিশ্বকাপের নিজের শেষ ম্যাচ অথচ অনুশীলনে নামলেন না অধিনায়ক মাশরাফি। শেষ সংবাদ সম্মেলনেও হাজির হলেন না। এ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে কানাকানি শুরু হয়ে যায়। দলের মধ্যে মতের অমিলের কথা শোনা যাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ভারতীয় মিডিয়ায় যা লেখালেখি হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে ব্যর্থতার সব দায় মাশরাফিরই। সংবাদ সম্মেলনেও তাই উঠে এলো মাশরাফির প্রসঙ্গ।
কোচ স্টিভ রোডস জানালেন, ‘দলকে সে দারুণ উজ্জীবিত করে রাখে। জীবনে অনেক লড়াই করে খেলেছে। শেষ বিশ্বকাপটা তার আরও একটু ভালো হতে পারত।’ এরপর মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম কৌশলী উত্তরে জানালেন, ‘সংবাদ সম্মেলনে না আসার বিশেষ কোনো কারণ নেই মাশরাফির।’
২০ বছর আগে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে এই ইংল্যান্ডের মাটিতেই পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। নর্দাম্পটনে সেদিনের জয়টা আজও ক্রিকেট বিশ্ব অঘটন হিসেবে দেখে। আজ জিতলে নিশ্চয় সে কথা কেউ বলবে না। র্যাংকিংয়ে পাকিস্তান ঠিক বাংলাদেশের উপরে। পাকিস্তান আছে ছয় নম্বরে, বাংলাদেশ সাতে। কিন্তু দু’দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিবেচনায় এগিয়ে টাইগাররা।
দু’দলের সর্বশেষ চার ম্যাচেই জিতেছে বাংলাদেশ। আগামীকাল শ্রীলংকা যদি ভারতের কাছে হারে তাহলে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচে যে দল জিতবে তারাই হবে বিশ্বকাপের পঞ্চম সেরা দল। পাকিস্তানের শেষ চারেরও সুযোগ আছে। সেটা অবশ্য কাগজে-কলমে। বাস্তবে অসম্ভব। পরে ব্যাট করলে পাকিস্তানকে শূন্য বলে জিততে হবে, যেটা সম্ভব নয়। আর প্রথম ব্যাট করলে অন্তত ৩১১ রানের ব্যবধানে জিততে হবে।
ইনজুরির কারণে ভারতের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে খেলতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। আজ তিনি একাদশে ফিরছেন। চিন্তা এখন মুশফিককে নিয়ে। মিডল অর্ডারে দলের রান মেশিন মুশফিক খেলতে না পারলে বাংলাদেশের জন্য সেটা বড় ধাক্কা হবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হেরে বিশ্বকাপ শুরু করা পাকিস্তানকে শেষ ম্যাচেও হারের স্বাদ দিতে চায় বাংলাদেশ। ওভাল থেকে লর্ডস, জয়ে শুরু ও জয়ে শেষ- যা সান্ত্বনা পাওয়ার বড় জায়গা হবে বাংলাদেশের জন্য। মাঝে টন্টন ও সাউদাম্পটনের সুখস্মৃতি মনে ধারণ করে বার্মিংহামের দুঃখ মুছে ফেলার চেষ্টা করবে বাংলাদেশ। শেষটা রাঙিয়ে বীরের মতো মাথা উঁচু করে দেশে ফেরার অপেক্ষায় দল।