এম.এ আজিজ রাসেল : ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী ছিলেন বহুগুণে গুণান্বিত। তিনি একাধারে সুবক্তা, ক্রীড়া সংগঠক, দক্ষ রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক সংগঠক, শিক্ষানুরাগী, চৌকষ কূটনীতিক, সমাজ সেবক ও ইসলাম প্রিয়সহ আরও একাধিক গুণের অধিকারি। জীবনের প্রতিটি ক্ষণে তিনি অনুকরণীয়। বৃহস্পতিবার (২৭ আগষ্ট) বিকালে রামু খিজারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী মিলনায়তনে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহকর্মী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, কক্সবাজার জেলার শ্রেষ্ঠ সমাজসেবক, সাবেক সাংসদ ও রাষ্ট্রদূত জননেতা ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী’র ১০ম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড, সিরাজুল মোস্তাফা। সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাফর আলম চৌধুরী।
স্মরণ সভায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন আলহাজ্ব ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী’র সুযোগ্য পুত্র কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল।
বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃক্ষের চেয়ারম্যান লে, কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদ, কক্সবাজারের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. ফরিদুল আলম, রামু মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার নুরুল হক চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রেজাউল করিম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. তাপস রক্ষিত, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবদুর রহিম, জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি আ.জ.ম মঈন উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন জিয়া, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদেরর সাধারণ সম্পাদক ও হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বাবুল শর্মা, রামু উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সুবীর বড়–য়া ভুলু ও মাস্টার মো. আলম।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী সব বিষয়ে মহাশিক্ষক। রাজনীতিবিদদের জন্য তিনি আদর্শের মডেল। বর্তমানে ওসমান সরওয়ার আলমের মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর। রাজনীতিবিদরা কথা দিয়ে কথা রাখেন না। মানুষের সাথে প্রতারণা করা তাদের কাছে স্বাভাবিক বিষয়। তাই জনগণের গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীকে অনুসরণ করুন। কি পেয়েছেন কি পাননি তা নিয়ে না ভেবে মানুষের সেবা করেন। তবেই ক্ষমতা ও পদবী পেছন পেছন ঘুরবে।’
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিটি অনুষ্ঠানে তার পরিচালনায় ‘দুর্বার শিল্পী গোষ্ঠী’ পারফরম্যান্স করতো। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের তিনি অগ্রপথিক। এছাড়া বন্যা বা দুর্যোগে তিনি সরকারের দিকে না চেয়ে সাদা কাপড়সহ আমাদের নিয়ে রাস্তায় নেমে যেতেন। অসহায় মানুষের জন্য অনুদান সংগ্রহ করতেন। আজীবন তিনি কারও মুখাপেক্ষী না থেকে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী ছিলেন আওয়ামী লীগের অভিভাবক। সব বিষয়ে তিনি পারদর্শী ছিলেন। মানুষের জন্য কাজ করাই ছিল তার মূল লক্ষ্য। প্রত্যেক ঘরে ঘরে তিনি ছিলেন প্রিয় ব্যক্তিত্ব। আলোকিত কর্মেই তিনি মানুষের হৃদয়ে রয়ে যাবে।’
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৪ বছর সেনাবাহিনীতে থাকাকালে মানুষের সাথে তেমন মেলামেশা হয়নি। অবসরের পর অল্পদিনে জনবান্ধব হওয়ার প্রচেষ্টা করছি। গত ৪ বছরে আমি চাইলে ৫০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ কক্সবাজারে করতে পারতাম। কিন্তু কতিপয় হায়েনাদের কারণে তা সম্ভব হয়নি। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে আমি জননেতা ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর মতো নেতা খুঁজে ফিরছি। কিন্তু এখনও পাইনি। তার মতো মানুষ সত্যিই বিরল। আমি সবসময় এই মহান ব্যক্তিকে অনুসরণ করি। যাতে আগামীতে আধুনিক কক্সবাজার বিনির্মান করতে পারি। অচিরেই তা করা হবে। রামুকেও আলোকিত করা হবে।’
রামু উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তপন মল্লিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন, জননেতা ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর বিশস্থ সহচর আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কবির, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক এইচ,এম ইউনুছ বাঙ্গালী, জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মুসরাত জাহান মুন্নি, খুনিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ, চাকমারকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার, ফতেখারকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম, রশিদ নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু মো. ইসমাঈল নোমান, কাওয়ারখোপ ইউনিয়নের চেয়ার্যামন মোস্তাক আহমদ, রাজারকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান, মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টো, রামু উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়–য়া ও সোয়েব সাঈদ।
এর আগে সকাল ৯টায় মরহুমের সুযোগ্য উত্তরসূরী আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি’র রামুস্থ বাসভবন ওসমান ভবনে খতমে কোরআন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ২ টায় বিশাল শোক র্যালী ও আলহাজ্ব ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী’র কবর জেয়ারতসহ তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পন করা হয়।