জাহান্নাম থেকে নিজে বাঁচা এবং পরিবারকে বাঁচানো

: হুমায়ুন রশিদ
প্রকাশ: ১০ মাস আগে

মুস্তাকিম বিল্লাহ : মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর। যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকুল। মহান আল্লাহ তাদের যে নির্দেশ দেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তাই করে, যা তাদের আদেশ করা হয়।’ -সুরা তাহরিম ৬

কোরআনের এই আয়াতে মুসলমানদের সম্বোধন করে বলা হয়েছে, তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন থেকে রক্ষা করো। অতঃপর জাহান্নামের আগুনের ভয়াবহতা উল্লেখ করে এ কথাও বলা হয়েছে, যাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হবে, তারা কোনো শক্তি, নেতা, দল ও ঘুষের মাধ্যমে জাহান্নামে নিয়োজিত কঠোর ফেরেশতাদের কবল থেকে আত্মরক্ষা করতে পারবে না। এ আয়াত থেকে প্রকাশ পায়, আল্লাহর আজাব থেকে শুধু নিজেকে রক্ষার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর মধ্যেই কোনো মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য সীমাবদ্ধ নয়। বরং যার কাছে যে পরিবারের দায়িত্ব, তার সদস্যরা যাতে আল্লাহর প্রিয় মানুষরূপে গড়ে উঠতে পারে, সাধ্যমতো সেই শিক্ষা দেওয়াও তার কাজ। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই রাখাল বা দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার অধীনস্ত লোকদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। শাসকও রাখাল বা দায়িত্বশীল। তাকে তার অধীনস্ত লোকদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। স্ত্রী তার স্বামীর বাড়ি এবং তার সন্তান-সন্ততির তত্ত্বাবধায়ক। তাকে তাদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে।’ -সহিহ বুখারি

এই আয়াত থেকে আরেকটি বিষয় প্রকাশ পায়, আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন, তারা যেন তাদের পরিবারের সদস্যদেরও সেসব কাজ করতে নিষেধ করে এবং যেসব কাজ করতে আদেশ করেছেন, তারাও যেন পরিবারের সদস্যদের সেগুলো করতে আদেশ করে। তাহলে এই কর্মপন্থা তাদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে পারবে। -ইবন কাসির

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা ঐ ব্যক্তির ওপর রহম করুন, যে ব্যক্তি নিজে রাতে নামাজ আদায় করতে দাঁড়িয়েছে এবং তার স্ত্রীকেও জাগিয়েছে। সে যদি দাঁড়াতে অস্বীকার করে তবে তার মুখে পানি ছিটিয়েছে। আল্লাহতায়লা ঐ মহিলার ওপরও রহম করুন, যে মহিলা নিজে রাতে নামাজ আদায় করতে দাঁড়িয়েছে এবং তার স্বামীকেও জাগিয়েছে। যদি সে দাঁড়াতে অস্বীকার করে তবে তার মুখে পানি ছিটিয়েছে।’- সুনানে আবু দাউদ

তাই নামাজের সময় হলে নিজে নামাজ পড়ার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদেরও নামাজের জন্য তাগাদা দেওয়া আবশ্যক। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বেতরের নামাজ পড়তেন তখন হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে ডাকতেন এবং বলতেন, হে আয়েশা! দাঁড়াও এবং বেতর আদায় করো।’ -সহিহ মুসলিম

আমরা যদি আমাদের পরিবারের সব সদস্যের প্রতি এভাবে খেয়াল রাখি তাহলে তারা নিয়মিতভাবে ধর্মীয় বিধিনিষেধ পালনে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। আর এভাবে যদি একটি পরিবারের সব সদস্য ধর্মীয় বিধান পালনে নিজেদের নিয়োজিত করে তাহলে পর্যায়ক্রমে সমাজের সবার মধ্যে এই অভ্যাস ছড়িয়ে পড়বে। তখন আমরা একটি আলোকিত সমাজ পাব। যে সমাজের সবার মধ্যে থাকবে ধর্মভীতি ও ধর্মচর্চা। আর তাদের থেকে দূর হবে সব ধরনের অরাজকতা।