জমে উঠেছে কক্সবাজার শিল্প ও বাণিজ্য মেলা

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৫ years ago

এম.এ আজিজ রাসেল : জমে উঠেছে কক্সবাজার শিল্প ও বাণিজ্য মেলা। দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। টিকিট কাউন্টারে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে মেলায় ঢুকতে হয়েছে সবাইকে। কেনা আর দেখার আনন্দ পেতে ভীড়ের মাঝেও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় এসেছেন অনেকেই।

বৃহস্পতিবার বিকালে মেলায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মোটেল সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় নজর কাড়ে মেলার দৃষ্টিনন্দন রাজকীয় গেইট। প্রতিদিন মেলায় বাড়ছে ক্রেতার সমাগম। দলে দলে মানুষ শুধু মেলার দিকে ছুটছেন। কেউ এক স্টল থেকে আরেক স্টলে ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করছেন। আর কেউবা ছবি তুলছেন আপন আনন্দে। মেলায় ঐতিহ্যবাহী শিল্পের প্রতি ঝুঁঁকছে মানুষ, ব্যাপক আগ্রহভরে হাতের তৈরি বিভিন্ন পণ্য দেখছেন ক্রেতা দর্শনার্থীরা। শুধু যে দেখছেন, তা নয় সাধ্যমতো কিনছেনও তারা। ফলে উৎসাহিত হচ্ছেন উদ্যোক্তারা।

প্যাভেলিয়নগুলো ঘুরে দেখা যায়, নানা জাতের শতরঞ্জির কার্পেট, ওয়ালম্যাট, পাপস, টেবিলম্যাট, ফ্লোরম্যাট, জামা, ব্যাগসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। ক্রেতাদের আকর্ষণ করছে এসব পণ্য। প্যাভিলিয়নের বিক্রেতারা জানান, মেলায় অংশ নিয়ে আমরা বেশ খুশি। কারণ শুরু থেকেই ক্রেতাদের বেশ সাড়া মিলছে। প্রতিদিন যে পরিমাণ পণ্য বিক্রি হচ্ছে এতে আমরা আশাবাদী। মেলার শেষ দিকে আরো বেশি বিক্রি বাড়বে।

মেলায় কথা হয় বার্মিজ মার্কেট এলাকা থেকে আসা গৃহিণী আয়েশা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, বাণিজ্যমেলায় গৃহস্থলীর নানা সামগ্রীসহ কসমেটিকস ও শীতের কাপড় কিনেছি সুলভ মূল্যে। এসব পণ্য অন্যান্য স্থানে দাম আরও বেশি। তাছাড়া অনেক পণ্য কক্সবাজারে পাওয়া যায় না। মেলায় এসে পণ্যগুলো কিনতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।

অন্যদিকে নাগরদোলা, ওয়াটার বোটসহ শিশুদের জন্য আনা হয়েছে নান্দনিক বিভিন্ন রাইডস। এতে ছোটদের পাশাপাশি বড়রাও মজা নিচ্ছে মনের মতো। স্পটগুলোতে প্রচন্ড ভিড় দেখা গেছে। মেলায় স্থানীয়দের পাশপাশি বিপুল পর্যটকও আসছেন প্রতিদিন।

মেলায় আসা কলেজছাত্রী মালিহা বলেন, ‘কক্সবাজার শিল্প ও বাণিজ্য বরাবরই আমাকে টানে। মেলায় এসে বেশ কিছু কেনাকাটাও করেছি। দাম খুব সাশ্রয়ী হওয়ায় কেনাকাটা অনেক স্বাচ্ছন্দ্য পেয়েছি।’ তার মতো আরো অনেক দর্শনার্থী এমন অভিব্যক্তি জানিয়েছেন।

ঢাকা শ্যামলী থেকে আগত পর্যটক দম্পতি ইমতিয়াজ চৌধুরী ও নাবিলা চৌধুরী বলেন, তিনদিনের জন্য কক্সবাজারে ঘুরতে এসেছি। এখানে অন্যান্য স্থান উপভোগের পাশাপাশি আমরা প্রতিদিন বাণিজ্য মেলায় আসছি। এখানে বেশ কেনাকাটাও করছি। সাথে বিভিন্ন রাইডস এ শিশুদের সাথে আনন্দ উপভোগ করছি। সত্যিই ঢাকার বাইরে এতো উন্নতমানের মেলা সত্যি বিরল।

মেলা পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান মাশেদুল হক রাশেদ, সদস্য সচিব সালাউদ্দিন সেতু (কাউন্সিলর), কো-চেয়ারম্যান কাজী মোরশেদ আহমেদ বাবু (কাউন্সিলর), কো- চেয়ারম্যান সাহেদ আলী সাহেদ ও প্রধান সমন্বয়ক নাছির উদ্দিন বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও মেলায় রয়েছে প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, সাধারণ প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার স্টল, সাধারণ স্টল, শিশুদের বিনোদনমূলক রাইডস, খাবারের দোকানসহ দেড় শতাধিক স্টলের জমজমাট আয়োজন। মেলায় এসেছে আরএফএল, ভিশন, ওয়াকার, ইটালিয়ানো, কম্পী, হোম টেক্সটাইল, ইরানী গোল্ডসহ উন্নতমানের সব ব্র্যান্ড। পছন্দের কাপড় যেমন কিনতে পারবেন, তেমনি পায়ের জন্য আরামদায়ক ওয়াকার ব্র্যান্ডের সব ধরণের জুতোও রয়েছে। মেরিন সিটি মেগামার্টের বিশাল স্টলে মিলবে প্রয়োজনীয় সবকিছু। মহিলাদের কসমেটিকস ও কাপড়ের বাহারী সামগ্রী নিয়ে স্টল খুলেছে অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফ্যাশন জোন। নারীদের উন্নতমানের সাশ্রয়ীমূল্যে সবকিছু থাকছে এই স্টলে। মেলায় এবার খাবারেও এসেছে ভিন্নতা। দই ফুসকা এবারের বিশেষ আকর্ষণ। মেলার মাঠে গেলে সিলেটের বিখ্যাত রূহানী আচার সবাইকে টানবেই। কারণ স্বাদে আর রুচিতে বেশ ব্যতিক্রম এই আচার। বড়দের বিনোদনের জন্যও নানা আয়োজন রয়েছে মেলায়। চলছে জাদু প্রদর্শনী, মাগ্যাজিন অনুষ্ঠান।

উল্লেখ্যঃ কক্সবাজার পর্যটন গলফ মাঠে বিগত ১১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার শিল্প ও বাণিজ্যমেলার আনুষ্ঠানিকভাবে পর্দা উঠে। প্রায় দুই মাস এই মেলা চলবে। মেলার আয়োজন করেছে যৌথভাবে কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কক্সবাজার জেলা ইউনিট ও কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রী।