: দেশ জুরে একের পর এক গণপিটুনিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গুজব প্রতিরোধে পুলিশের সব ইউনিট প্রধান ও জেলা পুলিশ সুপারদের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।
সোমবার পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-অপারেশন্স) সাঈদ তারিকুল হাসান স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে দেশব্যাপী পুলিশের সব ইউনিটকে।
এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেলেধরা সংক্রান্ত পোস্ট বা মন্তব্য ছাড়ানোদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়াও গুজব ঠেকাতে প্রতিটি এলাকায় মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও পোস্টারিং করার কথা বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনিতে হত্যার মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। গণপিটুনি দিয়ে হত্যা ও গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা ফৌজদারি অপরাধ। গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা বন্ধে সংশ্লিষ্ট ইউনিট/জেলা পুলিশ সুপারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
পুলিশ সদর দফতরের এ বার্তায় চারটি উপায়ে ছেলেধরা গুজব ও গণপিটুনি প্রতিরোধে পুলিশের ইউনিটগুলোকে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক নির্দেশনায় বলা হয়েছে- দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো, স্কুলে অভিভাবক ও গভর্নিং বডির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়, ছুটির পর অভিবাবকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্কুল ত্যাগের বিষয়টি শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের মাধ্যমে নিশ্চিত করা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সিসিটিভি স্থাপন করা।
জনসচেতনতা বাড়াতে প্রতিটি এলাকায় ছেলেধরার গুজবে কান না দিতে এবং পুলিশকে তাৎক্ষণিক তথ্য জানানোর জন্য মাইকিং করা, লিফলেট বিতরণ ও পোস্টারিং করতে বলা হয়েছে। এছাড়া এলাকার জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, জনসাধারণদের নিয়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানো, আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করা, প্রতিদিন মসজিদে এ সংক্রান্ত বক্তব্য দেওয়ার ব্যবস্থা এবং মেট্রোপলিটন ও জেলা শহরের বস্তিতে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনিটরিংয়ের বিষয়ে- ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ব্লগসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেলেধরা সংক্রান্ত বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট, মন্তব্য বা গুজব ছড়ানোদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া গুজবে কান দিয়ে ছেলেধরা বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ইউনিট প্রধান নিজ নিজ এলাকায় গৃহীত আইনানুগ ব্যবস্থা সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে দিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।
শনিবার সকালে উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে তাসলিমা নামে এক নারীকে পিটিয়ে আহত করে বিক্ষুব্ধ জনতা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ময়নাতদন্ত শেষে রোববার দুপুরে তাসলিমার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। পরে দাফনের জন্য স্বজনরা নিহতের লাশ লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সোনাপুর গ্রামে নিয়ে গেছেন। তার ১১ বছরের এক ছেলে ও চার বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে। আড়াই বছর আগে স্বামী তসলিম উদ্দিনের সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে ছেলেমেয়েকে নিয়ে মহাখালী ওয়ারলেস গেট এলাকায় একটি বাড়িতে থাকতেন তিনি।
শনিবার সকালে এ ঘটনার পর এদিন রাতেই নিহতের বোনের ছেলে নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত ৪ থেকে ৫শ জনকে আসামি করা হয়েছে।