টেকনাফ টুডে ডেস্ক : বিশ্বকাপকে ঘিরে মূল স্বপ্ন বা লক্ষ্য ভেস্তে গেছে অনেক আগেই। পয়েন্ট টেবিলে ভদ্রস্থ পর্যায়ে থাকার আশাও শেষ। বাংলাদেশের লড়াইটা এখন তলানির সেরা হওয়ার। শীর্ষ আটের মধ্যে থেকে যদি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গাটা মেলে! সেই চেষ্টায় মহাগুরুত্বপূর্ণ এক লড়াই সোমবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। দিল্লির আরুন জেটলি স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায়।
গত কয়েক দিনে এখানে মূল আলোচনা ছিল বায়ু দূষণকে ঘিরে। দূষণের মাত্রা আগের দিনের চেয়ে একটু কমই ছিল রোববার। তারপরও তা আসলে মারাত্মক পর্যায়ে। দুই দলের সংবাদ সম্মেলনেই দূষণ নিয়ে অনেক কথা হলো। তবে দিল্লিতে আসার আগে থেকেই দুই দলই তো আক্রান্ত ক্রিকেটীয় ব্যর্থতার দূষণে!
সেই প্রথম ম্যাচে জয়ের পর টানা ৬ ম্যাচে বিধ্বস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। কোনো ম্যাচেই ঠিক লড়াই জমাতে পারেনি সাকিব আল হাসানের দল। ধাক্কার পর ধাক্কা তো খেয়েছেই, সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি এসেছে সম্ভবত কলকাতায়। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও বাজেভাবে হেরে গেছে তারা। এরপর পাকিস্তানের কাছেও পাত্তা না পেয়ে কলকাতা থেকে দিল্লি এসেছে দলটি।
শ্রীলঙ্কার অবস্থা সেই তুলনায় ভালো। তবে সেই ভালোর পরিমাণ বলা যায় ‘একটু।’ প্রথম তিন ম্যাচে হারার পর টানা দুটি জয়ের স্বাদ পায় তারা। নেদারল্যান্ডসকে হারানোর পর বড় ব্যবধানে হারিয়ে দেয় চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে। এরপর আবার সেই হারের ধারা। আফগানিস্তানের সঙ্গে পারেনি তারা লড়াই জমাতে। সবশেষ ম্যাচে ভারতের কাছে ৫৫ রানে গুঁড়িয়ে গিয়ে ম্যাচ হেরেছে ৩০২ রানে।
দুই দলই এখন তলানির সেরা হওয়ার লড়াইয়েই আছে। দুই দলেরই চোখ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। কলকাতা পর্বে সেই লক্ষ্যের কথা বারবার বলা হয়েছে বাংলাদেশ দল থেকে। কিন্তু দুই ম্যাচে জয় ধরা দেয়নি। এবার দিল্লিতেও সেই একই লক্ষ্যের কথা বললেন বাংলাদেশ কোচ হাথুরুসিংহে।
“চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গা করে নেওয়ার ব্যাপার এখনও আছে। যতটা সম্ভব পয়েন্ট টেবিলের উঁচুতে থেকে শেষ করতে চাই আমরা। কোন দল ওপরে থেকে শেষ করবে, সেটি নির্ধারণে বড় ভূমিকা থাকবে এই ম্যাচের।”
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে হলে একটি জয় তো অবশ্যই প্রয়োজন, এমনকি পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারালেও তা যথেষ্ট নাও হতে পারে। জয় ছাড়া তাই কোনো উপায় নেই।
বাংলাদেশ যেভাবে খেলছে, তাতে জয়ের দেখা কীভাবে মিলবে, সেই সংশয় থাকতে পারে। মাঠের ক্রিকেটে কোনো কিছুই তেমন একটা ঠিকঠাক হচ্ছে না। টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ দুদিন আগেই বলেছেন, ক্রিকেটাররা সবাই হতাশা ও অনুতাপে পুড়ছেন। ভাঙা মন নিয়ে তো মাঠে লড়াই করা কঠিন।
তবে এখনও পর্যন্ত দল সেরাটা খেলতে পারেনি বলেই এখনও সেই দিনটির আশায় আছেন হাথুরুসিংহে।
“চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গা করে নেওয়া খুবই সম্ভব, কারণ এখনও আমরা ভালো দল। এখনও পর্যন্ত আমরা যা দেখিয়েছি, তার চেয়ে ভালো দল আমরা। নিজেদের সেরাটা এখনও খেলতে পারিনি। সেরার ধারেকাছেও নেই আমরা। সেরাটা খেলতে পারলে জয়ের আশা আমরা করি এবং এখনও পর্যন্ত আমরা মনে করি, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আমরা খেলতে পারব।”
বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে এ দিন ব্যাটিংয়ের সময় হাতে বল লেগে চোট পান মুশফিকুর রহিম। তাৎক্ষনিক চিকিৎসা নেওয়ার পর আবার ব্যাটিং শুরু করেন তিনি। তবে একটু পরই নেট ছেড়ে যান। নেটের পাশে কিছুক্ষণ বসে থেকে পরে তিনি ফিরে যান ড্রেসিং রুমে। আপাতত তার চোট গুরুতর নয় বলেই ধারণা করা হচ্ছে। মুশফিক শেষ পর্যন্ত খেলতে পারুন বা না পারুন, বাংলাদেশকে জিততেই হবে।
শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশের লড়াই গত ৫-৬ বছরে ভিন্ন একটা মাত্রা নিয়েছে। ঠিক চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলির মতো না হলেও এই ম্যাচে এখন লড়াইয়ের ঝাঁজ থাকে দারুণ। বাড়তি উত্তেজনা ও নিজেদের মেলে ধরার একটু বাড়তি তাগিদও থাকে। লড়াইটা তাই ক্রিকেটীয় স্কিলের পাশাপাশি মানসিকতারও।
মানসিকতার লড়াইয়ে কিছুটা এগিয়ে থাকতে পারে শ্রীলঙ্কা। দুই দলের সবশেষ তিন ওয়ানডেই তারা জিতেছে। বিশেষ করে কিছুদিন আগেই এশিয়া কাপে তারা দুই দফায় হারিয়েছে বাংলাদেশকে। গত ম্যাচে ব্যাটিং লাইন আপ বিধ্বস্ত হওয়ার ধাক্কা অবশ্য আছে। তবে সেটিকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশকে তারা হারাতে পারবেন বলেই বিশ্বাস শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক কুসাল মেন্ডিসের।
“বাংলাদেশের বিপক্ষে আমরা অনেক ম্যাচ খেলেছি। তাদেরকে খুব ভালোভাবে জানি। আমাদের আত্মবিশ্বাসের কমতিও নেই। অতীতেও এরকম হয়েছে যে, এক ম্যাচে বাজে খেলে আমরা পরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আগামীকালের ম্যাচেও আমরা ভালো করব এবং জিততে পারব বলে বিশ্বাস আমাদের আছে।”
ক্রিকেটীয় লড়াইয়ের পাশাপাশি দূষণের সঙ্গে লড়তে হবে দুই দলকেই। ২০১৭ সালে এই মাঠেই টেস্ট খেলতে এসে দূষণের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন শ্রীলঙ্কার বেশ কজন ক্রিকেটার। সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে শনিবার অনুশীলন বাতিল করে দেয় তারা। রোববার অবশ্য অবস্থা একটু ভালো থাকায় সন্ধ্যায় অনুশীলন করেছে তারা।
বাংলাদেশ শুক্রবার অনুশীলন বাতিলের পর শনি ও রোববার অনুশীলন করেছে। তবে রানিং বা পরিপূর্ণ ফিল্ডিং অনুশীলন করেনি। হাথুরুসিংহে জানালেন, স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি যতটা সম্ভব এড়িয়ে নিরাপদ থেকে অনুশীলনের পথই বেছে নিয়েছেন তারা।
আইসিসি থেকেই বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দুই দলকে। আইসিসির চিকিৎসক দল থেকে শুরু করে দলীয় চিকিৎসকরা সতর্ক পর্যবেক্ষণ করছেন ও করবেন। মাঠে দূষণরোধী যন্ত্র বসানোসহ বিশেষ কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছে আইসিসি।
ক্রিকেটারদের মূল চ্যালেঞ্জ অবশ্য ব্যর্থতার দূষণ রোধ করা। একাদশ, কম্বিনেশন, ব্যাটিং অর্ডার-এসব নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে বিশ্বকাপজুড়ে। শেষ প্রান্তে এসে সেসব আলোচনার মূল্য এখন সামান্যই। এখন মূল্যবান কেবল ফলাফল। জয়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা। শেষটা অন্তত স্বস্তিতে করতে পারা।
সেই স্বস্তির সান্ত্বনাই এখন লক্ষ্য বাংলাদেশের। শ্রীলঙ্কারও।