এম.জিয়াবুল হক : তাৎক্ষনিক সবধরণের অপরাধপ্রবণতা রুখতে এবার চকরিয়া উপজেলা সদরের শহীদ আবদুল হামিদ পৌরটার্মিনালে বিট পুলিশিং কার্যালয় স্থাপনে ৩৫ লাখ টাকা মুল্যের জায়গা দিয়েছেন কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাফর আলম। নির্ধারিত জায়গায় স্থাপিত বিট পুলিশিং কার্যালয় বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করা হয়েছে।
চকরিয়া বাস টার্মিনাল সংলগ্ন পৌরসভার কিচেন মার্কেটের দোতলায় এমপি জাফর আলমের ক্রয়কৃত পজেশনেই এই বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালানো হবে। আগামী ৯৯ বছরের জন্য পুলিশকে রেজিষ্ট্রি কবলার মাধ্যমে সেই পজেশন হস্তান্তর করার ঘোষণা দিয়েছেন এমপি জাফর আলম। উল্লেখিত জায়গার বর্তমান বাজারমূল্য অন্তত ৩৫ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার সকালে চকরিয়া পৌরবাস টার্মিনালে মাষ্টার পাড়া বিট পুলিশিং কার্যালয় উদ্বোধন উপলক্ষে চকরিয়া থানা পুলিশের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় মতবিনিময় সভার। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলম। অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান (পিপিএম সেবা)।
‘বিট পুলিশিং বাড়ি বাড়ি, নিরাপদ সমাজ গড়ি’ শ্লোগানে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন চকরিয়া থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের। থানার সেকেন্ড অফিসার মোজাম্মেল হোসেনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন পুলিশের চকরিয়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারি পুলিশ সুপার মো. তফিকুল আলম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ ফজলুল করিম সাঈদী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম লিটু।
উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম, পৌরসভার সভাপতি অধ্যাপক একেএম শাহাবুদ্দিন, চকরিয়া প্রেস কাবের সভাপতি এম আর মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুর রশীদ দুলাল, সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহাবুদ্দিন মাহমুদ, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন হক জেসি চৌধুরী, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী, পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. বশিরুল আইয়ুব, আবাসিক মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ এস এম মনজুর আলম চৌধুরী, পৌরসভার কাউন্সিলর ও মেয়র প্রার্থী জিয়াবুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা জামাল হোসেন চৌধুরী, কাকারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত ওসমান, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কছির, ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ রেজাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ।
প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলম বলেন, মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু সেই তুলনায় যথাযথ সুযোগ-সুবিধা পায় না। অনেক বাধ্যবাধকতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তারা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন শুধুমাত্র জনগণকে পুলিশি সেবা প্রদানে।
বর্তমান পুলিশ সুপার, সহকারি পুলিশ সুপারসহ চকরিয়া ও পেকুয়া থানায় কর্মরত সকল পুলিশ সদস্যদের সততা ও আন্তরিকতার চিত্র তুলে ধরে এমপি জাফর বলেন, আমি জানি, ঘুষ-বাণিজ্য ছাড়াই চকরিয়া ও পেকুয়ার মানুষ পুলিশি সেবা পাচ্ছেন। কোন মামলা বা জিডি করতে গেলে পুলিশকে টাকা দিতে হচ্ছে না। যা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের এবং বিরল ঘটনা।
তাই পুলিশের যে কোন কাজে এবং সমস্যায় আমি ব্যক্তিগতভাবে পাশে থাকার চেষ্টা করি। ইতোমধ্যে চকরিয়া এবং পেকুয়া থানায় যেসব সমস্যা বিদ্যমান ছিল তা একে একে সমাধান করে দিয়েছি। পুলিশও কোন ধরণের উৎকোচ ছাড়াই জনগণকে পুলিশি সেবা প্রদান করছেন। এজন্য আমি ব্যক্তিগত এবং চকরিয়া-পেকুয়াবাসীর পক্ষ থেকে পুলিশকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।
এমপি জাফর আলম ঘোষণা দেন, আজ যেখানে মাষ্টার পাড়া বিট পুলিশিং কার্যালয় উদ্বোধন হচ্ছে সেই পজেশন আমার ব্যক্তিগতভাবে ক্রয় করা। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেই পজেশন আগামী ৯৯ বছরের জন্য রেজিষ্ট্রি কবলার মাধ্যমে হস্তান্তর করা হবে। একইভাবে যেখানে পুলিশের বিট কার্যালয় স্থাপন হবে, সেখানেই জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হবে ব্যক্তিগতভাবে।
উদ্বোধকের বক্তব্যে কক্সবাজার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান (পিপিএম সেবা) বলেন, থানা হচ্ছে পুলিশি সেবার কেন্দ্রস্থল, তবে জনসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে। দিনরাত মানুষের সেবায় বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালু রাখা হবে এবং সরাসরি বিটে এসে অভিযোগও জানাতে পারবেন ভুক্তভোগীরা।
তিনি বলেন, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, ঘুষমুক্তভাবে দায়িত্ব পালনসহ মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোন ধরণের অনৈতিক লেনদেন বা ঘুষ-বাণিজ্যে লিপ্ত না থাকার কঠোর নির্দেশনা দিয়ে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে জেলা পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান বলেন, জনগণকে পুলিশি সেবা দিতে হবে সম্পূর্ণ ফ্রি-তে। এর পরও যদি কোন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসাথে আপনারাও (জনগণ) টাকা নিতে প্রলুব্ধ করবেন না পুলিশকে।#