চকরিয়ায় পিবিআই পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা চলে যাবার পরে হিন্দু পরিবারের জমিতে স্থাপনা নির্মাণ

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৪ years ago
Exif_JPEG_420

নিজস্ব প্রতিবেদক : চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ইসলামনগরে হিন্দু পরিবারের বাড়িভিটার জায়গা দখলে হামলা ও তাÐবের ঘটনায় আদালতে মামলার প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে তদন্তে এসেছিলেন পিবিআই পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা। শনিবার সকালে কক্সবাজার পিবিআই পুলিশের এসআই ইকবাল হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাদি-বিবাদি ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তদন্তের প্রয়োজনে তিনি সকল তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এরপর তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে পরবর্তীতে আসামিপক্ষের লোকজন বিরোধীয় ওই জায়গায় রাতারাতি অবৈধ স্থাপনা তৈরী করে নিয়েছেন। ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারটির গৃহকর্ত্রী সাবেক ইউপি সদস্য ভানুপ্রভা দে চকরিয়া থানা পুলিশ এবং বনবিভাগকে ফোনে অভিযোগ করলেও ততক্ষনে দখলবাজ চক্র জায়গাটি দখলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ভিকটিম ভানুপ্রভা দে।
আক্রান্ত পরিবারের অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নে বাড়িভিটার জায়গা দখলে নিতে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র ইসলামনগরে সংখ্যালঘু পরিবারকে উচ্ছেদে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি প্রায় ৪০বছরের ভোগদলীয় বাড়িভিটা দখলে নিতে সংখ্যালঘু ওই পরিবারের উপর দফায় দফায় হামলা ও তাÐব চালাচ্ছ ওই চক্রটি। সর্বশেষ গত ২৯ ডিসেম্বর সকালে হামলা চালিয়ে চক্রের লেলিয়ে দুর্বৃত্তরা বাড়িভিটা থেকে লুটে নিয়ে গেছে প্রায় দুই লাখ টাকার রকমারি গাছ। তারআগে বাড়িভিটার পাহাড় কেটে লুটে নিয়েছে মাটি। হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় বাঁধা দিতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন পরিবারটির গৃহকর্ত্রী কৈয়ারবিলের সাবেক নারী মেম্বার ভানু প্রভা দে।
এদিকে সর্বশেষ হামলা ও বাড়িভিটার গাছ কেটে লুটের ঘটনায় গৃহকর্ত্রী ভানু প্রভা দে গত ৩০ ডিসেম্বর চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে ৬জনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন হামলা ও জবরদখলে জড়িত স্থানীয় কৈলাশ কান্তি দে, লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মাইন উদ্দিন ফারুক ওয়াসিম, সহযোগি কমল কান্তি দে, রতন দে, সজল কান্তি দাশ ও শরীফ উদ্দিন।
বাদির এজাহারটি আমলে নিয়ে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক এব্যাপারে তদন্তপুর্বক প্রতিবেদন দাখিল করতে পুলিশ বুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে অভিযোগটি তদন্ত করছেন পিবিআই পুলিশের এসআই মো.ইকবাল হোসেন।
জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশের এসআই মো.ইকবাল হোসেন বলেন, অভিযোগের তদন্ত করতে শনিবার আমি ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে বাদি-বিবাদি ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে বিরোধীয় বিষয় এবং সংগঠিত ঘটনা সর্ম্পকে কথা বলেছি।
তিনি বলেন, বাদি ভানুপ্রভা দে আমাকে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি জানিয়েছে। আমি তাকে থানায় জানাতে বলেছি। যেহেতু আমরা (পিবিআই) শুধু অভিযোগের তদন্ত করছি। মুলত বিরোধীয় জায়গাটি সরকারি সম্পদ। বাদি-বিবাদী সবাই অবৈধ।
আদালতে দায়েরকৃত মামলার আর্জিতে বাদি কৈয়ারবিলের সাবেক মেম্বার ভানুপ্রভা দে বলেন, বন্যার তাÐবে বাস্তুচ্যুত হবার পর ১৯৮০ সালে পাশের ইসলামনগর এলাকার পাহাড়ি জনপদে এসে বসতবাড়ি নির্মাণপুর্বক সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন। সেই থেকে বিগত ৪০বছর যাবত শান্তিপুর্ণভাবে ভোগদখলে থেকে বাড়িভিটায় বসবাস করলেও সম্প্রতি সময়ে তাঁর বাড়িভিটার জমি দখলে নিতে একটি প্রভাবশালী চক্র সক্রিয় হয়ে পড়ে।
ভুক্তভোগী ভানুপ্রভা দে অভিযোগ করে বলেন, কৈয়ারবিলের পাশের ইউনিয়ন লক্ষ্যারচরের মেম্বার মাইন উদ্দিন ফারুক মুলত জায়গা দখলের মুল নাটেরগুরু। তিনি কুটকৌশল অবলম্বন করে একটি ভুঁয়া কাগজ তৈরী করেই আমার বাড়িভিটা দখলে মেতে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর মাসে দুইদফা হামলা চালায় মেম্বার ওয়াসিমের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ চক্রটি। ওইসময় হামলাকারীরা বাড়িভিটার পাহাড় কেটে মাটি লুটে নিয়ে যায়। পাশাপাশি প্রায় ১লাখ টাকা মূল্যের ৩০টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে সাবাড় করে নেন। ভাংচুর করে আমার পোল্টি খামারে। এসব ঘটনায় ২১ সেপ্টেম্বর চকরিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ, ১৬ নভেম্বর চকরিয়া থানায় একটি জিডি ও ১৭ নভেম্বর চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আরও একটি জিডি দায়ের করি।
মামলার বাদি ভানুপ্রভা দে আরও বলেন, আমার বাড়িভিটার জায়গা দখল চেষ্ঠা ও হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে থানা-আদালতে অভিযোগ দিয়েছি বলে তাঁরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এরই জেরধরে সর্বশেষ গত ২৯ ডিসেম্বর সকালে হামলা চালিয়ে চক্রের লেলিয়ে দুর্বৃত্তরা বাড়িভিটা থেকে লুটে নিয়ে গেছে প্রায় দুই লাখ টাকার রকমারি গাছ। বর্তমানে অভিযুক্তরা ফের হামলা চালিয়ে আমার বসতঘর পুড়িয়ে দিয়ে জায়গা জবর দখলে নেবে বলেও হুমকি দিচ্ছে। এই অবস্থায় আমি পরিবার ও বাড়িভিটা নিয়ে চরম আতঙ্কে ভুগছি। সর্বশেষে আমি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশাসনের কাছে আইনী সহায়তা প্রার্থনা করছি। ##