চকরিয়া দরবেশকাটায় বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে উল্টো বিপাকে দরিদ্র শহিদ উল্লাহর পরিবার

লেখক: হুমায়ুন রশিদ
প্রকাশ: ২ years ago

নিজস্ব প্রতিবেদক : চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডেে দরবেশকাটা মসজিদপাড়া এলাকায় আপন ভাইকে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে বিপাকে পড়েছেন দরিদ্র শহিদ উল্লাহর পরিবার। বাড়ির কাজ করতে গিয়ে আশ্রয় দেওয়া ভাইকে চলে যেতে বলার কারণে এখন স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের তোপের মুখে জিন্মি হয়ে পড়েছেন পরিবার। উল্টো আসল ঘটনা ধামাচাপা দিতে আশ্রয়দাতা ভাইসহ পরিবার সদস্যদের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী হতদরিদ্র শহিদ উল্লাহ।

ভুক্তভোগী পরিবারের গৃহকর্তা স্থানীয় দরবেশকাটা মসজিদপাড়া এলাকার মৃত আবদুর রহিমের ছেলে শহিদ উল্লাহ (৬০) বলেন, আমার দাদা আবদুল জব্বার স্বাধীনতার আগে স্থানীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেসময় দরবেশকাটা উমেদ আলী সিকদার গং মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে আমার দাদাকে অনুমতি দখল হিসেবে ৭২ শতক জমি দান করেন। পরবর্তী সময়ে আমার দাদার ৫ ছেলে উল্লেখিত জমি ভাগবন্টনমুলে ভোগদখলে রয়েছেন।

শহিদ উল্লাহ ও তার ভাই হামিদ উল্লাহ বলেন, দাদার অংশিদার মালিক হিসেবে আমাদের পিতা মৃত আবদুর রহিম প্রায় ৪৩ কড়া জমির মালিকানা হিসেবে ভোগদখলে থেকে ছেলেদের মধ্যে বন্টন করে দেন। তৎমধ্যে আমাদের ভাই হাবিব উল্লাহ আলীকদম ও খালেদ উল্লাহ ডুলাহাজারা ইউনিয়নে পৈতৃক অংশের জায়গা নিয়ে পরিবার সদস্যদের নিয়ে বসবাস করছেন। অন্যদিকে দরবেশকাটা এলাকায় দাদার অংশে প্রাপ্ত ৪৩ কড়া জমিতে আপোষ বন্টনমুলে অপর পাঁচ ভাই শফি উল্লাহ, আতা উল্লাহ, শহিদ উল্লাহ, হামিদ উল্লাহ ও আমান উল্লাহ বাড়ি তৈরি পুর্বক পরিবার সদস্যদের নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভোগ দখলে রয়েছেন।

হামিদ উল্লাহ (৪৫) বলেন, আমার ভাই আমান উল্লাহ পরিবার নিয়ে পাশের বিএমচর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর এলাকায় শ্বশুর বাড়ি এলাকায় চলে যান। ওইসময় পৈতৃক অংশের জায়গাটি বাড়িসহ বিক্রি করার প্রস্তাব দেন। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর লিখিত চুক্তি মোতাবেক ভাই আমান উল্লাহর অংশের ৯ কড়া জমির মধ্যে আমি হামিদ উল্লাহ ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বাড়িসহ সাড়ে ৪ কড়া ও অপর ছোট ভাই আতা উল্লাহ ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে সাড়ে ৪ কড়া জমি দখল ক্রয় করি।

ভুক্তভোগী হতদরিদ্র শহিদ উল্লাহ দাবি করেন, চারমাস আগে ভাই আমান উল্লাহ শ্বশুর বাড়ি এলাকা থেকে পরিবার সদস্যদের নিয়ে পৈতৃক বাড়িতে চলে আসে। কিন্তু তার বাড়ি বা জায়গা না থাকায় মানবিক কারণে তাকে আমার বাড়িতে থাকার আশ্রয় দিই। তবে ওইসময় কথা ছিল, তিনমাসের মধ্যে ভাই আমান উল্লাহ একটি জায়গা ক্রয় করে বাড়ি বানাবেন, তারপর আমার বাড়ি থেকে চলে যাবেন। কিন্তু চারমাস সময় অতিবাহিত হলেও আমান উল্লাহ পরিবার সদস্যদের নিয়ে আমার বাড়ি থেকে আর বের হতে রাজি নন।

বাড়ি মালিক ভুক্তভোগী শহিদ উল্লাহ বলেন পরিবারে আমার ছেলে মেয়ে বেশি। বাড়িতে জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। ভাই আমান উল্লাহকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বললেও কর্ণপাত করছেনা। এই অবস্থায় আমি ইতোমধ্যে বাড়ির মেরামত কাজ শুরু করেছি। বুধবার সকালে বাড়ির বারান্দা ভেঙে কাজ করার সময় স্থানীয় কিছু দাপটশালী লোক বাড়িতে এসে উল্টো আমার ভাই আমান উল্লাহর পক্ষ নিয়ে আমাকে নানাভাবে হুমকি ধমকি দিয়েছে। এমনকি কতিপয় মহলের ইন্ধনে আমিসহ আমার অপর ভাইকে জড়িয়ে চকরিয়া থানায় ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

ভুক্তভোগী শহিদ উল্লাহর ভাই হামিদ উল্লাহ বলেন, পৈতৃক অংশের জায়গা বাড়িসহ বিক্রি করে শ্বশুর বাড়িতে চলে গেছেন ছোট ভাই আমান উল্লাহ। সাতবছর পর শ্বশুর বাড়ি থেকে ফিরে অপর ভাই শহিদ উল্লাহর ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন আমান উল্লাহ।
এখন তাকে বাড়ি চেড়ে দিতে বলায় উল্টো বাড়ির মালিক শহিদ উল্লাহ ও আমাকে জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তাকে এসব ঘটনার পেছনে ইন্ধন দিচ্ছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও তার লোকজন।

হামিদ উল্লাহর অভিযোগ, গত ইউপি নির্বাচনে তারা নাকি চেয়ারম্যান প্রার্থী রবিউল এহেছান লিটনের পক্ষে ছিলেন, এই ধরণের কান কথা কে বা কারা লাগিয়ে দিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলাকে। তার কারণে ক্ষুদ্ধ হয়ে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আমার পরিবারের উপর খড়ক চালাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, নির্বাচনের সময় আমরা কারো পক্ষে প্রচার প্রচারণায় ছিলাম না। নাগরিক হিসেবে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছি মাত্র। এটাই আমাদের অপরাধ।

দরবেশকাটা এলাকার বাসিন্দা এডভোকেট রবিউল এহেছান লিটন বলেন, আমান উল্লাহ অনেক আগে তার পৈতৃক অংশের জমি বাড়িসহ ভাইদের কাছে বিক্রি করে শ্বশুর বাড়ি চলে গেছেন। বিষয়টি এলাকাবাসী থেকে শুরু করে সবাই জানে। সেখানে নির্বাচনী ইস্যু নিয়ে গরীব মানুষগুলোকে হয়রানি করা একবারে অমুলক।
তিনি বলেন, চেয়ারম্যান মহোদয় ইচ্ছা করলে দরিদ্র আমান উল্লাহকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার মুজিব শতবর্ষের প্রকল্প থেকে একটি ঘর পাইয়ে দিয়ে মানবিকতার উদাহরণ তৈরি করতে পারতো।
কিন্তু সেটি না করে চেয়ারম্যানের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে উল্টো ভাইয়ের বিরুদ্ধে ভাইকে উস্কে দিয়েছেন থানায় মামলা করে হয়রানি করার জন্য।

ঘটনার বিষয়ে চকরিয়া থানায় একটি এজাহার জমা দিয়েছেন আমান উল্লাহ। এরই প্রেক্ষিতে থানার ওসি বিষয়টি তদন্তের জন্য এসআই কামরুল ইসলামকে দায়িত্ব দিয়েছেন। বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এসআই কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভাইয়ে ভাইয়ে সৃষ্ট জটিলতা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমান উল্লাহর পরিবার সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় দেওয়া অপর ভাই শহিদ উল্লাহর ঘরে থাকবে।
তিনি বলেন, দুইপক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টির সুষ্ঠুভাবে সমাধান করার চেষ্টা করা হবে। তাতে যদি কোন সমস্যা তৈরি হয়, তা হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে এব্যাপারে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ##