চকরিয়ায় রাতের অন্ধকারে বসতবাড়ির সীমানা দেয়াল ভেঙে দিয়েছে দুবৃর্ত্তরা, লাখ টাকার ক্ষতিসাধন

: হুমায়ুন রশিদ
প্রকাশ: ১০ মাস আগে

নিজস্ব প্রতিবেদক,চকরিয়া : চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা হিন্দুপাড়া এলাকায় রাতের আঁধারে হামলা চালিয়ে একটি পরিবারের বসতবাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছেন দুবৃর্ত্তরা। ওইসময় বাড়ির দরজা বাইির থেকে আটকে দেয়ায় হামলার ঘটনায় বাঁধা দিতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন। শুক্রবার রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে চকরিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হিন্দুপাড়া (ডিস অফিসের সামনে) সোনা রঞ্জন দে’র বসতবাড়িতে ঘটেছে এ হামলার ঘটনা। ভাংচুরের ঘটনায় প্রায় লক্ষাধিক টাকা ক্ষতিসাধন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

আক্রান্ত পরিবারের গৃহকর্তা স্থানীয় হিন্দুপাড়া এলাকার মৃত বাদল চন্দ্র দে’র ছেলে সোনা রঞ্জন দে বলেন, চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা মৌজার বিএস ৪১৯ নম্বর খতিয়ান থেকে সৃজিত নামজারি জমাভাগ খতিয়ান ৪১৯ এর বিএস ১০৯ দাগের আন্দরবাড়িসহ দুই শতক (৬ কড়া) জমি আগের মালিক তপন তালুকদার থেকে আমি ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর তারিখে রেজিস্ট্রাট দলিলমুলে ক্রয় করি। জমির বিপরীতে আমার নামে ১৮৭৭ নম্বর নামজারি জমাভাগ খতিয়ানও সৃজিত হয়েছে। ওইসময় জমি বিক্রেতা তপন তালুকদার আমাকে বিক্রিত ৬ কড়া জমির মধ্যে ৫ কড়া জমি দখলে দিলেও অবশিষ্ট এক কড়া জমি পরে দখল দেবেন জানিয়ে সময় নেন।
এরই মধ্যে তিনি (তপন তালুকদার) আমাকে বিক্রিত জমিতে স্থিরথাকা বাড়িতে ভাগাটিয়া হিসেবে সাময়িক সময়ের জন্য পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করে। এভাবে তিনি ওই বাসায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে বসবাস করলেও ভাড়া বাবত সমুদয় টাকা আমাকে পরিশোধ করেনি। এই অবস্থায় বিষয়টি সম্পর্কে আমি স্থানীয় পুজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে অভিযোগ করি। পরে তাদের উপস্থিতিতে বৈঠকে বিষয়টি সমাধানের কথায় তপন তালুকদার ও তার স্ত্রী কাজলী রানী দে একটি ব্যাংক চেক জমা দেন।

বাড়ি মালিক সোনা রঞ্জন দে বলেন, স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি ও বিচারকদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুইজন সার্ভেয়ার দিয়ে আমাকে বিক্রি করা ৬ কড়া জমির অংশ পরিমাপ করা হয়। সেখানে আমার এক কড়া জমি তপন তালুকদার এর অংশে থাকার বিষয়টি চিহ্নিত করা হয়। পরে ওই এক কড়া জমি আমাকে ছেড়ে দিতে বিচারকরা জানিয়ে দিলে উল্টো তপন তালুকদার ও তার স্ত্রী কাজলী রানী দে নানাভাবে চল-চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে জায়গা ছেড়ে দিতে তালবাহানা শুরু করে। এরই মধ্যে জমা দেওয়া ব্যাংক চেক নিয়ে তপন তালুকদার ও তার স্ত্রী কাজলী রানী আদালতে সাজানো মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানির অপচেষ্টা শুরু করে।
পাশাপাশি আমাকে বিক্রিত জায়গার মধ্যে তাঁর কাছে থেকে যাওয়া ১ কড়া জমি ছেড়ে না দিয়ে রাতারাতি সেখানে বাড়ি নির্মাণের তোড়জোড় শুরু করে তপন তালুকদার ও তার স্ত্রী। এ ঘটনায় আমি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে আইনের আশ্রয় নিই। বর্তমানে দুইপক্ষের মামলাগুলো আদালতে চলমান রয়েছে।

আক্রান্ত বাড়ির গৃহকর্তা সোনা রঞ্জন দে দাবি করেন, গত শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) সকালে সার্ভেয়ার কতৃক চিহ্নিত করে দেওয়া আমার ক্রয়কৃত ৬ কড়া জমির অংশের ভেতরে বসতবাড়ির সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। দিনের বেলায় সীমানা প্রাচীরের কাজ করলেও কেউ কোনধরনের বাঁধা বিপত্তি দেয়া বা আপত্তি তুলেনি। অথচ একইদিন রাতের আঁধারে জায়গা জবরদখলের জন্য পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালিয়ে আমার বসতবাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে দিয়েছে তপন তালুকদার ও তার স্ত্রী কাজলী রানী দে, ছেলে সঞ্চয় তালুকদার এর নেতৃত্বে দখলবাজ চক্র।

বাড়ি ও জায়গার মালিক সোনা রঞ্জন দে’র শ্বাশুড় অরুণ কৃষ্ণ নাথ বলেন, রাতের আঁধারে সীমানা প্রাচীর ভাংচুর করার সময় আমরা বাড়িতে ছিলাম। ওইসময় বাড়ির দরজা বাইির থেকে আটকে দেয়ায় আমরা কেউ বের হতে পারিনি। পরে তাঁরা ভাংচুর চালিয়ে চলে যাবার পর কোনমতে আমরা বাড়ি থেকে বের হই। এসময় সীমানা দেয়াল ভেঙে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে উল্টো তপন তালুকদার ও তার স্ত্রী কাজলী রানী দে আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দেয়। বলে বেশি বাড়াবাড়ি করলে পরিণতি খারাপ হবে।

বাড়ির মালিক সোনা রঞ্জন দে বলেন, জমি বিক্রেতা তপন তালুকদার ও তার স্ত্রী কাজলী রানীর কাছে পাঁচ বছরের বাসা ভাড়া পাওনা , বাড়ির পেছনে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করার টাকা এবং তাদের ছেলেকে বিদেশে কম্পিউটার কিনে দিয়েছি, সেই টাকা এখনো আমি পাওনা আছি। তারপরও মানবিক কারণে আমি তাদেরকে সময় ও সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু তাঁরা রাতের আঁধারে হামলা চালিয়ে আমার বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে দিয়েছে। আমি হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি। পাশাপাশি চকরিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা কামনা করছি। ##