চকরিয়ায় মুক্তিযোদ্ধার জমি দখলে নিতে হা*ম*লা ; নারীকে পি*টি*য়ে হাত ভেঙে দিয়েছে ইউপি মেম্বার

লেখক: হুমায়ুন রশিদ
প্রকাশ: ২ years ago

নিজস্ব প্রতিবেদক : চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার ৪৫ বছর আগে ক্রয়কৃত ও ভোগদখলীয় জমি দখলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় বাঁধা দিতে গেলে হালিমা ছাদিয়া মৌসুমী (২১) নামের এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছেন জবরদখলে জড়িত ইউপি মেম্বার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন। গত ১২ জুন সকাল আনুমানিক এগারোটার দিকে বরইতলী ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের চাঁদের বাপেরপাড়া এলাকায় ঘটেছে এ হামলা ও জবরদখল চেষ্টার ঘটনা।
এ ঘটনায় আহত গৃহবধূর শ্বাশুড়ি স্থানীয় মৃত মনজুর আলমের স্ত্রী তাহেরা বেগম (৬৪) বাদি হয়ে পরদিন ১৩ জুন চকরিয়া থানায় পাঁচজনকে আসামি করে একটি এজাহার জমা দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আলমগীর হোসেন, স্থানীয় নুর মোহাম্মদের স্ত্রী খতিজা বেগম, মোহাম্মদ মামুন এর স্ত্রী শাহিন আরা বেগম, নুর মোহাম্মদ এর ছেলে মোহাম্মদ খোকা ও নুর মোহাম্মদকে আসামি করা হয়েছে। চকরিয়া থানার ওসি বাদির এজাহারটি তদন্তের জন্য হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে নির্দেশ দিয়েছেন।
অপরদিকে হামলায় আহত গৃহবধূকে চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছে।

মামলার বাদি বরইতলী চাঁদের বাপেরপাড়া গ্রামের মৃত মনজুর আলমের স্ত্রী তাহেরা বেগম বলেন, ১৯৭৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর তারিখে ৫২৮৮ নং দলিলমুলে আমার মামা চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নুরুল কবির, তার ভাই বশির আহমদ ও তার ছেলে রাসেল উদ্দিন প্রকাশ রুহুল উদ্দিনের নামে উচিত মুল্যে টাকা পরিশোধ পুর্বক পুর্বের মালিক রাম কুমার এর অংশ থেকে বরইতলী মৌজার আরএস ১৩৭৪ নম্বর খতিয়ান থেকে ১ একর সাড়ে ৪১ শতক জমি ক্রয় করেন।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নুরুল কবির, ভাই বশির আহমদ ও তার ছেলে মাস্টার রাসেল উদ্দিন নিকটতম আত্মীয় হিসেবে আমার দুই ছেলে (তাদের নাতিকে) জাহেদুল ইসলাম বকুল ও অহিদুল ইসলামের নামে ৬০ শতক জমি দানপত্র করে দেন। সেই থেকে আমার পরিবার দানপত্র মুলে প্রাপ্ত জমি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল কবির গংয়ের অবশিষ্ট জমি বর্গাচাষী হিসেবে শান্তিপূর্ণ ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন।

বাদি তাহেরা বেগম বলেন, ১৯৭৮ সালে উল্লেখিত জমি আরএস ১৩৭৪ নম্বর খতিয়ান মালিক রাম কুমার গং থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নুরুল কবির গং ক্রয় করে ভোগদখলে থাকলেও পরবর্তী সময় ১৯৮০/৮২ সালে বিএস জরিপকালে স্থানীয় দেবব্রত শর্মা গং শঠামির আশ্রয় নিয়ে তাদের নামে বিএস জরিপে রেকর্ডভুক্ত করে নেয়। এরই প্রেক্ষিতে তাদের নামে ১৪৫৪ নম্বর বিএস খতিয়ান সৃজন হয়। এই অবস্থায় বিষয়টি জানতে পেরে ২০০২ সালে জমির ওয়ারিশ হিসেবে আমার ছেলে জাহেদুল ইসলাম গং বাদি হয়ে স্থানীয় বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে দেবব্রত শর্মা গংকে আসামি করে একটি মামলা রুজু করেন।

তাহেরা বেগম আরও বলেন, দলিলপত্র পর্যালোচনা পুর্বক দীর্ঘসময় মামলার পক্ষে বিপক্ষে শুনানি শেষে ২০০২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালত উল্লেখিত জমির মালিকানা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল কবির গংয়ের বলে রায়ডিগ্রি দিয়েছেন। তারপরও দেবব্রত শর্মা গং উল্লেখিত জমি নিয়ে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করতে থাকায় সর্বশেষ ২০০৬ সালে আমার ছেলে জাহেদুল ইসলাম গং বাদি হয়ে সিনিয়র সহকারী জজ চকরিয়া আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কূটকৌশলে সৃজিত ১৪৫৪ নম্বর বিএস খতিয়ানটি বাতিল চেয়ে একটি অপর মামলা রুজু করেছেন।
ওই মামলার প্রাথমিক শুনানি করে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক বিবাদিপক্ষের সৃজিত বিএস ১৪৫৪ নম্বর খতিয়ানের সবধরনের কার্যকারিতা স্থগিত ঘোষণা করে। বর্তমানে মামলাটি আদালতে রায়ের জন্য অপেক্ষামান অবস্থায় রয়েছে।

বাদি তাহেরা বেগম দাবি করেন, ৪৫ বছর আগে আমার মামা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল কবির গংয়ের পরিবারের নামীয় ক্রয়কৃত জমি আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে রক্ষণাবেক্ষণে থাকলেও সম্প্রতি কিছুদিন ধরে এই জমি দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে ইউপি মেম্বার ও বরইতলী ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি আলমগীর হোসেন। এমনকি তিনি জমি দখলে নিতে ইতোমধ্যে এলাকায় বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে দানপত্র মুলে প্রাপ্ত আমার ছেলেদের মালিকানাধীন ও বর্গা নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধার জমি থেকে চিরতরে উচ্ছেদ করবে।
এই অবস্থায় সর্বশেষ গত ১২ জুন সকালে আমার পুত্রবধু হালিমা ছাদিয়া মৌসুমী বাড়ির চলাচল পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ইউপি মেম্বারসহ অভিযুক্ত আসামিরা পুর্ব শক্রতার জের ধরে পথরোধ পুর্বক আমার পুত্রবধূর উপর অর্তকিত হামলা চালায়। এসময় তার পরণের কাপড়চোপড় টেনেহিঁচড়ে চিড়ে ফেলে তাকে শ্লীলতাহানিও করেছে। পিটিয়ে সর্বশরীর থেঁতলে দিয়েছে। ঘটনার সময় আসামিদের কবল থেকে নিজের সশ্রম রক্ষার চেষ্টাকালে লোহার রডের আঘাতে ভেঙে দিয়েছে একটি হাতের আঙুল। একপর্যায়ে গলা চেপে ধরে তাকে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টাও করে আসামিরা।

আহত গৃহবধূর শ্বাশুড়ি তাহেরা বেগম এজাহারে আরও বলেন, হামলার সময় অভিযুক্তরা তার পুত্রবধূর গলায় থাকা একভরি ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন লুটে নিয়ে গেছে। পরে তার শোর-চিৎকারে আমরা এগিয়ে গিয়ে তাকে গুরুত্বর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শাররীক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

মামলার বাদি তাহেরা বেগম ও তার পরিবার সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধার জমি দখল চেষ্টা এবং পুত্রবধূর উপর হামলার ঘটনায় জড়িত ইউপি মেম্বার স্থানীয়ভাবে দাপটশালী। থানায় এজাহার জমা দেওয়ার খবর পেয়ে এখন আমার পরিবার সদস্যদেরকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে তারা। এই অবস্থায় আমি পুলিশ প্রশাসনের কাছে জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

আনীত অভিযোগগুলো সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ১২ জুন আমি কক্সবাজার ছিলাম। এদিন সকালে গ্রামে দুইপক্ষের সংঘাতে গৃহবধূ আহত হওয়ার বিষয়টি আমি ফোনে জানতে পেরে তাদেরকে মহিলা মেম্বার খালেদা বেগমের কাছে যেতে বলেছি। সেখানে আমাকে জড়ানোর ঘটনাটি একবারে অমুলক।

তিনি বলেন, বরইতলী মৌজার বিএস ১৪৫৪ নম্বর খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিক থেকে চারমাস আগে উল্লেখিত জমি আমি ক্রয় করেছি। তা আমার দখলে আছে এবং জমি ক্রয়করার আমার বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। তবে আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোন জমি দখল করিনি। মুলত হয়রানি করার জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। ##