ঘুমধুম তুমব্রু সীমান্ত নিস্তব্ধ, স্বস্তি এসেছে মানুষের মনে নির্ভয় ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যাচ্ছে, অবাধে চলাফেরা করছে এলাকাবাসীরা

লেখক: হুমায়ুন রশিদ
প্রকাশ: ৩ years ago

শামীম ইকবাল চৌধুরী : নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তের তুমব্রুর ওপারে মর্টারশেল ছোঁড়া নিয়ে মাসখানেক আতঙ্কিত ছিল সীমান্তবাসী ও জিরো লাইনের মানুষেরা।

বলতে গেলে, এতোদিন উত্তেজনা সব মিয়ানমার অভ্যন্তরে। গোলাগুলিও হচ্ছিল মিয়ানমারে। তবে আচমকা কিছু মটর গোলা আর গুলির খোসা
বাংলাদেশ ভূখন্ডে ছুঁড়ে আসছিল।

সীমান্ত পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। সীমান্ত এখন নিস্তব্ধ স্বস্তি এসেছে মানুষের মনে নির্ভয়ে স্কুলে যাচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা জুমিরা যাচ্ছেন জুমে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো জানান, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় দীর্ঘ দিন পর গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছেনা। বন্ধ হয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ও যুদ্ধ বিমান থেকে ছোঁড়া গুলি ও গুলির শব্দ। গত প্রায় দেড় মাস ধরে প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শোনা যেত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মর্টারশেলের গোলার শব্দ ও বিমানের বোমা বর্ষণের বিকট শব্দ।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে এ রিপোর্ট পাঠানো পর্যন্ত কোন ধরনের গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি বলে জানালেন সীমান্ত ঘেষা তুমব্রু বাজার সার্বজনীন দুর্গা মন্দির কমিটির সভাপতি রুপলা ধর।
সরেজমিনে সীমান্তের সোনাইছড়ি, বরইতলী, বৈদ্দের ছড়া, গর্জন বুনিয়া, বাইশ পাড়ী, তুমব্রু ঘুমধুম ইউনিয়ন এলাকা ঘুরে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ একমাস পর সীমান্তে আজ গোলাগুলির শব্দ বন্ধ রয়েছে। এতে স্থানীয় লোকজনের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে কৃষকেরা নির্ভয়ে কাজে ফিরছেন।

এদিকে এতদিন মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর গুলাগুলির কারণে সীমান্ত পাড়ের স্কুল ছাত্র ছাত্রীদের অভিভাবকরা আতঙ্কে ছিল।

রেজু গর্জন বুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছৈয়দ হামজা বলেন, প্রতিদিন মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর গোলাগুলিতে বিদ্যালয়ে বিকট শব্দ শোনা যেত। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের মনে আতঙ্ক দেখা দেয়।
কিন্তু অনেক দিন পর গুলাগুলির শব্দ শুনা যাচ্ছেনা তাই ছাত্র ছাত্রীরা নির্ভয়ে স্কুলে এসেছে এবং আগের মত উপস্থিতি ও অনেক বেশি।

সরজমিন আরো জানা যায়, সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলি বন্ধ হলেও বিজিবির টহল ছিল জোরদার। তবে সীমান্ত সিলগালার মতো পরিস্থিতি দেখা দিলেও আজ অবাধে সাধারণ জনগন চলাফেরা করতে কোন বাধাঁনো নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিবির একজন কর্মকর্তা জানান, সীমান্ত এখন শান্ত হলে ও আমাদের নজরদারি কড়া এবং টহল জোরদার রয়েছে।

এবিষয়ে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, আজ থেকে বালাদেশ অভ্যন্তরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চলমান।শিশুরা রীতিমতো ইস্কুলে যাচ্ছে।বাজারে হাট বসছে।মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় হচ্ছে।রিক্সা,ইজিবাইক,ভ্যান গাড়ি হরদম চলছে।কৃষকেরা ক্ষেতে কাজ করছে।দোকানপাট সার্বক্ষণিক খোলা আছে।সরকারি,বেসরকারি অফিস রুটিনমাফিক চলছে।
এতোদিন শুধু গোলাগুলির শব্দই আমাদেরকে অস্থিরতা আর উত্তেজনার কারণ।

সমস্যা মিয়ানমারের।সন্ত্রাস দমন এবং সরকার বিরোধী যুদ্ধ এবং যুদ্ধক্ষেত্র সবকিছুই মিয়ানমার ভূখণ্ডে।ভুল নিশানা বা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে কয়েকটি মর্টার শেল শুণ্যরেখায় এসে পড়েছিল।বাংলাদেশ সরকারের কড়া প্রতিবাদ,রাষ্ট্রদূতকে কয়েক দফা তলব করার পর আর এপারে গুলির খোসা বা মর্টার শেল এসে পড়েনি।সম্ভবত তারা এবিষয়ে অত্যধিক সতর্কতা অবলম্বন করছে।
সুতরাং,গুজব ছড়িয়ে বা মিয়ানমার অভ্যন্তরের যুদ্ধকে বাংলাদেশ সীমান্তের যুদ্ধ বলে অতি উৎসাহীত হয়ে চালিয়ে দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। গুজব ছড়িয়ে ভীতিকর একটা পরিস্থিতি তৈরি না করি।
মনে রাখতে হবে এই গ্রাম আমাদের।এই বসতি আমাদের।এই গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার মতো দুঃসাহস আমাদের নেই।আমি সকলকে নির্ভয়ে কাজে ফেরার আহবান জানিয়েছি।

আর এদিকে, সীমান্তের অনেক লোকজনের সাথে কথা বলতে গিয়ে তারা জানান , দীর্ঘ দিন গোলাগুলি হলেও সীমান্ত আজ কোন গোলাগুলি নেই। শ্রমিকরা কাজে ফিরছে, ক্ষেত খামারে ফিরছে কৃষকেরা।
বিজিবি’র টহল অব্যাহত রয়েছে। আশা করি শান্তি ফিরে আসবে।