কাঠগড়ায় ৬০ এমপি কক্সবাজারের ৫জনসহ ৭৭ চেয়ারম্যান

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৫ years ago

টেকনাফ টুডে ডেস্ক : তৃণমূলে দলীয় শৃঙ্খলা সুসংহত করতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে দলের কমপক্ষে ৬০ মন্ত্রী-এমপি ও ৭৭ উপজেলা চেয়ারম্যানকে। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে চেয়ারম্যানদের দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি এবং এমপিদের শোকজ করা হবে।

আগামীকাল শনিবার আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর সভায় এ তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। এর পর অভিযুক্তদের ঠিকানায় ডাকযোগে চিঠি যাবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের যেসব দায়িত্বশীল নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছেন, তাদের দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

পাশাপাশি আওয়ামী লীগের যেসব মন্ত্রী, এমপি ও নেতা দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছেন তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না-তার কারণ জানতে চেয়ে চিঠি দেবে দলটি। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি বা অন্যান্য দলের প্রার্থী না থাকায় বেশিরভাগ উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন দলেরই বিদ্রোহী প্রার্থীরা।

নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার জন্য শুরুতে এ বিষয়ে নীরব ছিল আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। তবে নির্বাচনকেন্দ্রিক স্থানীয় পর্যায়ের এই কোন্দল যাতে ভবিষ্যতে মাথাচাড়া দিতে না পারে সেজন্য এখন এ বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সম্প্রতি গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এক সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

কার্যনির্বাহী সংসদের ওই বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা আমাদের সময়কে বলেন, যারা নৌকার বিরোধিতা করেছেন তাদের শাস্তির আওতায় না আনলে নৌকার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ানোর এই চর্চা ভবিষ্যতে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ আমাদের সময়কে বলেন, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা নির্বাচন করেছিলেন তাদের দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের দলের যেসব এমপি নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছেন তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।

আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, উপজেলা নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদকরা রিপোর্ট দিয়েছেন। এখন শেষ মুহূর্তের তদন্ত চলছে। আমার ধারণা, ৬০ থেকে ৭০ এমপিকে জবাবদিহি করতে বলা হতে পারে। সেই সঙ্গে অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান তাদের বর্তমান দলীয় পদ হারাবেন। কয়েকটি উপজেলার ফল বিশ্লেষণের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, অনেক উপজেলায় দেখা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে উপজেলার সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ভোট করেছেন।

একইভাবে সাধারণ সম্পাদক বিদ্রোহী হয়েছেন সভাপতির বিরুদ্ধে। সেক্ষেত্রে ওইসব উপজেলায় যদি সভাপতিকে বা সাধারণ সম্পাদক দুজনের একজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, অন্যজন দলীয় দায়িত্ব পালন করবেন। দুজনকেই অব্যাহতি দেওয়া হলে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে সহসভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকরা দায়িত্ব পাবেন।

কেন্দ্র্রীয় নেতারা বলেছেন, স্বতন্ত্র হিসেবে জয়ী সব উপজেলা চেয়ারম্যানই তাদের পদ হারাবেন না। অনেকে আছেন, যাদের কোনো দলীয় পদ নেই। সেক্ষেত্রে তারা অব্যাহতি পাবেন না। তবে দলের পরবর্তী সম্মেলনে তারা গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারবেন না। এ ছাড়া ৬০ থেকে ৭০ সংসদ সদস্য উপজেলা নির্বাচনে নিজ বলয়ের প্রার্থীকে জেতানোর জন্য নৌকার বিরোধিতা করেছিলেন। অনেকে নিজের ভাই, আত্মীয়-স্বজনকেও উপজেলা চেয়ারম্যান বানিয়েছেন দলের বিরোধিতা করে। তাদের মধ্যে অনেকেই মন্ত্রিসভায় রয়েছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদেও রয়েছেন বেশ কয়েকজন। অভিযোগ প্রমাণ হলে আগামীতে জেলা সম্মেলনে তারা আর দলীয় পদ পাবেন না। শুধু তা-ই নয়, নৌকার বিরোধিতার পাশাপাশি যারা সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িয়েছেন, আগামী নির্বাচনে তাদের দলীয় মনোনয়নও অনিশ্চিত।

দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি পেতে যাচ্ছেন এমন উপজেলা চেয়ারম্যানরা হচ্ছেন-গাজীপুরের শ্রীপুরের শামসুল আলম প্রধান, কালিয়াকৈরের কামাল উদ্দিন শিকদার, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সফি আহমেদ সলমান, জুড়ী উপজেলায় এমএ মুহিত ফারুক এবং বড়লেখার সোয়েব আহমদ; নড়াইলের লোহাগড়ার শিকদার আব্দুল হান্নান রুনু, নাটোরের গুরুদাসপুরের আনোয়ার হোসেন, সিরাজগঞ্জের বেলকুচির নুরুল ইসলাম, তাড়াশের মনিরুজ্জামান; হবিগঞ্জ সদরের মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের সোলায়মান হোসেন, নেত্রকোণার বারহাট্টার মুহাম্মদ মাইনুল হক, দুর্গাপুরের জান্নাতুল ফেরদৌস আরা, গাইবান্ধার সাঘাট উপজেলার জাহাঙ্গীর কবির, দিনাজপুরের কাহারোলের আবদুল মালেক সরকার, চিরিরবন্দরের তারিকুল ইসলাম, বিরামপুরের খায়রুল আলম, খানসামার আবু হাতেম, নওগাঁর সাপাহারের শাহজাহান, পোরশার শাহ মনজুর মোরশেদ চৌধুরী, বাদলগাছির শামসুল আলম খান, রাণীনগরের আনোয়ার হোসেন; পাবনার ফরিদপুরের গোলাম হোসেন, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের শামীম আহমদ, গোয়াইনঘাটের মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ, জৈন্তাপুরের কামাল আহমদ।

ফরিদপুরের সদরপুরের কাজী শফিকুর রহমান, সালথার ওয়াদুদ মাতুব্বর, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির হোসাইন মো. আবু তৈয়ব; চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার আইয়ুব হোসেন; দামুড়হুদার আলী মনছুর, মাগুরার শ্রীপুরের মিয়া মাহমুদুল গণি, শালিখার কামাল হোসেন; ঝিনাইদহের শৈলকুপার মোশারফ হোসেন, হরিণাকু-ুর জাহাঙ্গীর হোসাইন; শেরপুরের শ্রীবরদির এপিএম শহিদুল ইসলাম; রাজবাড়ী সদরের এমদাদুল হক বিশ্বাস, পাংশার ফরিদ হাসান ওদুদ, কালুখালীর আলিমুজ্জামান ওরফে টিটু চৌধুরী; পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ আবু বকর সিদ্দিকী, আমতলীর গোলাম ছারোয়া ফোরকান; যশোর বাঘারপাড়ার নাজমুল ইসলাম, ঝিকরগাছার মনিরুল ইসলাম, কেশবপুরের কাজী রফিকুল ইসলাম; খুলনার দাকোপের মনসুর আলী খান, তেরখাদার শেখ শহিদুল ইসলাম, দিঘলিয়ার মারুফুল ইসলাম, কয়রার শফিকুল ইসলাম; ময়মনসিংহের ফুলপুরের আতাউল করিম রাসেল, গৌরীপুরের মোফাজ্জল হোসেন খান, নান্দাইলের হাসান মাহমুদ জুয়েল, ধোবাউড়ার ডেভিট রানা চিসিম, ভালুকার আবুল কালাম; টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের মাহমুদুল হাসান, কালীহাতির আনছার আলী, বাসাইলের কাজী অলিদ ইসলাম।

শেরপুরের নকলার শাহ মো. বোরহানউদ্দীন, মাদারীপুর সদরের কালু খান; পিরোজপুরের নেছারাবাদের আব্দুল হক; কক্সবাজারের চকরিয়ার ফজলুল করিম সাঈদী, মহেশখালীর শরিফ বাদশা, রামুর সোহেল সরওয়ার কাজল, পেকুয়ার জাহাঙ্গীর আলম, টেকনাফের মো. আলম; জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের আব্দুস সালাম আকন্দ, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীর জগলুল হালদার ভুতু, শ্রীনগরের মসিউর রহমান; পঞ্চগড়ের আব্দুল মালেক চিশতি, নরসিংদীর রায়পুরের আব্দুস সাদেক, সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের মঞ্জুর আলম চৌধুরী, ধর্মপাশার মোজাম্মেল হোসেন রুকন, বিশ্বম্ভরপুরের সফর উদ্দিন; ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গির আলী আসলাম জুয়েল; কুড়িগ্রামের রৌমারির শেখ আবদুল্লাহ, রাজীবপুরের আকবর হোসেন হিরো, ফুলবাড়ীর গোলাম রব্বানী এবং রাজারহাটের জাহীদ সরওয়ার্দী বাপ্পী প্রমুখ।