করোনাভাইরাস: সুস্থ হয়ে উঠছে প্রকৃতি

লেখক: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৫ years ago

এম আর ফারজানা : করোনার তাণ্ডবে মানুষের জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে। হাজার হাজার পরিবার হারিয়েছে তাদের আপনজন। নিউজার্সিতে আমি যেখানে থাকি একই পরিবারের মারা গিয়েছে চারজন। এই পরিবারের সবাই আক্রান্ত ছিল মানুষের এমন মৃত্যু দেখে ভাবছিলাম কী হচ্ছে এসব! একটা ভাইরাসের কাছে এভাবে পরাজিত হচ্ছি আমরা?
ভাইরাসের বিস্তার রোধে লকডাউনে আছে আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেকগুলো দেশ। তার ফলাফলও পেতে শুরু করেছে। কমে এসেছে করোনা রোগীর সংখ্যা। অনেকে ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে ফিরে এসেছেন পরিবারের কাছে। এখন সুস্থ হওয়ার মানুষের সংখ্যাই বেশি। আস্তে আস্তে করোনা প্রকোপ কমতে শুরু করেছে। মানুষ কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে শুরু করেছে।

এ মুহূর্তে আমেরিকাতেই সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃত অন্য দেশের তুলনায় বেশি। তবে মৃতের চেয়ে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা বেশি। অনেকে কীভাবে মৃত্যুর দোয়ার থেকে ফিরে এসেছেন তাও বলেছেন। কিছুদিন আগে নিউইয়র্কে ফরিদ আলম সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম আজিজ, কবি, লেখক ও সংগঠক সালেম সুলেরী, ফখরুল ইসলাম।

সাংবাদিক মাহমুদ খান, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নার্স সাঈদা। সাঈদা নার্সিং পেশায় কাজ করেন নিউইয়র্কের নর্থশোর এলআইজে হাসপাতালে। এ তালিকায় আরও অনেকে আছেন। এ যেন পৃথিবী জয়ের মত। যেন নতুন জীবন পেয়েছেন। বলেছেন, মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখলাম। এটা দ্বিতীয় জীবন বলা চলে, শুকরিয়া আদায় করেছেন সৃষ্টিকর্তার কাছে।

আসলেই তো তাই। আসলে জীবনের চেয়ে মূল্যবান আর কিছু নেই। বেঁচে থাকাটাই হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর। আর সুস্থভাবে বেঁচে থাকা হল সুন্দরতম। কবি বলেছিলেন, ‘মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে মানবের মাঝে আমি বাঁচিবার চাই”। আমরা বাঁচতে চাই। যে কোন উপায়ে, যে কোন মূল্যে।

প্রকৃতি আর মানুষের মধ্যে অদ্ভুত একটা মিল আছে। যখন রোদ ঝলমল করে তার সঙ্গে মানুষের মনও হেসে ওঠে। আবার বৃষ্টি হলে মন অন্যরকম হয়ে যায়। ভিন্ন সাদ ভিন্ন মাদকতা। কিন্তু এই প্রকৃতি যখন অসুস্থ হয়ে ওঠে তখন এক প্রলয়ঙ্করী হিসাবে রূপ নেয়।

আমরা দেখেছি অ্যামাজন মাইলের পর মাইল কীভাবে পুড়ে গেছে, অস্ট্রেলিয়াতে কিভাবে পুড়ে গেছে বন ও হাজার হাজার বন্যপ্রাণী। আগেও দেখেছি ৯১ সালের জলোচ্ছ্বাস, আমেরিকাতে প্রলয়ঙ্করী স্যান্ডি। আসলে প্রকৃতি যখন দেয় আমাদের প্রাণ উজাড় করে দেয়। গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়। সেই গাছ আমরা কেটে কতকিছু করি। ফলে কমে যায় অক্সিজেনের মাত্রা।

পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা করতে কঠিন হয়ে পরে। আছে কলকারখানার ধোঁয়া, গাড়ীর ধোঁয়া বাতাসে দূষিত হয়। আছে আকাশ পথে চলাচল। সবকিছু মিলিয়ে প্রকৃতি অসুস্থ হয়ে যায়। তখনই নেমে আসে প্রলয়। আমরা আগে দেখেছি ইবোলা, সোয়াইন ফ্লু, কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের তাণ্ডব দেখছি।

এই ভাইরাস আমাদের ঘর বন্দি করে ফেলেছে বলা যায়। ফলে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে, কলকারখানার ধোঁয়া নেই, শব্দ দূষণ নেই, মানুষের পদচারণা না থাকার ফলে পশুপাখি নির্ভয়ে চলাফেরা করছে। পরিবেশ দূষিত না হওয়ার ফলে বাতাস বইছে চমৎকার ভাবে।

যেসব পাখিদের দেখা মিলত না সহজে, তারা এখন ফিরে এসেছে আপন আলোয়। সুন্দর সকাল আলোঝলমলে নির্মল বাতাস প্রকৃতি বিলিয়ে যাচ্ছে। ভাইরাসের আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়েছে মানুষের জীবন। তবে সুস্থ হয়েছে প্রকৃতি।

উহানে এ ভাইরাস প্রথম ধরা পরে। গবেষকরা বলছেন, এই ভাইরাস এসেছে প্রাণী থেকে। অবশ্য এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কোন কোন দেশের গবেষক বলছেন, এটা চীনের গবেষণা থেকে ছড়িয়েছে। যে যাই বলুক প্রকৃতি তার প্রাণ ফিরে পেয়েছে এতে দ্বিমত নেই। আমরা এখন হোম কোয়ারেন্টিনে আছি প্রায় ১ মাস ১২ দিন হল। নিউজার্সিতে ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয়েছে মার্চেই। আমাদের মত হাজার হাজার মানুষ আছে হোম কোয়ারেন্টিনে। ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায় হল দূরত্ব বজায় রাখা একজনের কাছ থেকে আরেকজনের। এই দূরত্ব হয়ত সহজে ঘুচবে না। কারণ মানুষের মনে একটা ভীতি কাজ করবে, সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতে, কোন আত্মীয়ের বাড়িতে যেতে, বন্ধদের সংস্পর্শে যেতে।

আর গবেষকরা বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে যাবে আরও দুই বছর। অর্থাৎ আস্তে আস্তে যাবে। তবে সতর্ক না থাকলে আবারও ফিরে আসতে পারে এই মহামারি। আর ভ্যাক্সিন আসতেও বহুদূর। ততদিনে সচেতনতা হচ্ছে নিজেকে নিরাপদ রাখার একমাত্র উপায়।

যারা হারিয়ে গেছেন তাদের আর ফিরে পাবো না। কিন্তু যারা এখনো অসুস্থ, তারা সুস্থ হয়ে উঠছেন। তবে এই কয়েক মাসে করোনাভাইরাস সকল মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছে প্রকৃতির ওপর অত্যাচার নয়, ভালবাসতে হবে। আমরা যা প্রকৃতিকে দেবো তাই ফিরে আসবে আমাদের মাঝে। মানুষও যান্ত্রিক জীবনযাপন করছিল। ছুটছিল অজানা কোন মোহে। গন্তব্য অজানা। ভুলে গিয়েছিল পাশাপাশি থাকা মানুষের কথা, সময় নেই, অপ্রতিরোধ্য এই বেহিসাবি জীবনকে থামিয়ে দিয়েছে ভাইরাস।

এখন মানুষ আপনজন হারানো অজানা ভয়ে কাঁপছে। সবকিছুর বিনিময়ে হলেও চাইছে প্রিয় মানুষ পাশে থাকুক। কেউ অসুস্থ হয়ে ফিরে এলে এ যেন অন্য এক জীবনের পথে পা বাড়াল। আবার নতুন করে শুরু করবে জীবন এমনি অঙ্গীকার তাদের।

এম আর ফারজানা, নিউজার্সি (যুক্তরাষ্ট্র)