কম্বইন্যা পাহাড়ে অপহৃত হামিদ ১৪ লক্ষ টাকা ও বুড়ো আঙ্গুলের বিনিময়ে ২১দিন পর ফিরে এল

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৫ years ago

হুমায়ূন রশিদ : টেকনাফের হোয়াইক্যং কম্বইন্যা পাহাড়ে মহিষ আনতে গিয়েই ডাকাত গ্রুপের হাতে আটক চাচা-ভাতিজাদের মধ্যে চাচাকে মুক্তিপণের টাকার জন্য ফেরত দেওয়া হলেও টাকা যোগাড় করতে বিলম্ব ঘটে। অবশেষে ১৪ লক্ষ নগদ টাকা এবং হাতের একটি বুড়ো আঙ্গুলের বিনিময়ে প্রাণে রক্ষা পেয়ে ২১দিন পর বাড়ি ফিরল সেই হামিদ হোছন।

গত সোমবার সন্ধ্যারদিকে হোয়াইক্যং কম্বনিয়া পাড়া সংলগ্ন পাহাড়ে অপহরণকারীদের দাবীকৃত ১৪ লক্ষ টাকা কেউ না জানে মতো একটি গাছের তলায় রেখে চলে আসে। পরে ডাকাত দলের লোকজন এসে এই টাকা বুঝে পাওয়ার পর মঙ্গলবার সকালে চোখ বাঁধা অবস্থায় গভীর পাহাড়ের একটি ছড়ায় নামিয়ে দিয়ে হাতে দিক-নির্দেশনামূলক একটা লিখিত কাগজ এবং লাঠি দিয়ে পথ ধরে চলে আসতে বলে। কিছুদূর আসার পর মুক্তি পাওয়া হামিদ চোখের বাঁধন খুলে কাগজটা নির্দেশনা মতে ছড়ার পানি বেয়ে দীর্ঘ পথ আসার পর আরেকটা বড় ধরনের ছড়ার সন্ধান পায়। পানির দিকে না গিয়ে উপরের দিকে যাওয়ার বেশীক্ষণ পর ৩টি পাহাড়ি পথের সন্ধান পায়। যেকোন একটি পথ দিয়ে গেলে তার বাড়ির পথ পাওয়ার কথা রয়েছে। একটি পথ দিয়ে দীর্ঘক্ষণ হাটাঁর পর অবশেষে গ্রামের দেখা পাওয়ায় তার আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্নে পরিজনের কথা ভেবে কান্না চলে আসে। কোন প্রকারে হাঁটতে হাঁটতে সে বাড়ি ফিরলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। তাকে দ্রæত উদ্ধার করে কক্সবাজার ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালে নিয়ে কেটে নেওয়া ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলের অপারেশন করে বুধবার রাতে বাড়িতে আনা হয়।

ফিরে আসা হামিদ এক প্রতিক্রিয়া বলেন,গত ২১দিন ধরে আমি কিছুই দেখতে পায়নি। একটি গর্তে রেখে খাওয়ার সময় অল্প এক মুঠো ভাত দিলেও পেট ভরতনা। দু’জনের মুক্তিপণের জন্য বেধড়ক মারধর ও নির্যাতন চালিয়ে বাড়িতে ফোন করাত। এক পর্যায়ে ডাকাত দল ক্ষুদ্ধ হয়ে আমার ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল কেটে নিয়ে বাড়িতে ফোন করিয়ে এই টাকার ব্যবস্থা হওয়ার পর তাদের কথা মতো স্থানে দিয়ে আসার পর আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসতে পেরেছি।

উল্লেখ্য, গত ২৭ নভেম্বর দুপুরে হোয়াইক্যং ৯নং ওয়ার্ড কম্বনিয়া পাড়ার আব্দুল মজিদের পুত্র জলিল আহমদ (৭২) এবং কবির আহমদের পুত্র হামিদ হোছন (৩০) পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে চরন্ত ঘরের পোষা মহিষের ঝাঁক আনতে যায়। তখন ডাকাতেরা জলিল ও হামিদকে আটকে ফেলে এবং মুক্তিপণের জন্য মুঠোফোন নং-(০০৯৫৯-৪২৫৮৯৬৮৫৮) হতে কল করে ২০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে বসে। এদিকে অপহৃত জলিল আহমদের শারীরিক অবস্থা কাহিল হওয়ায় ৩/৪দিন পর মুক্তি দিয়ে বাড়িতে টাকার জন্য পাঠায়। টাকা দিতে বিলম্ব হওয়ায় ডাকাত দল ক্ষুদ্ধ হয়ে হামিদের হাতের আঙ্গুল কেটে নেয়।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী হামিদ হোছন ফিরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন পাহাড়ে অবস্থানকারী ডাকাত দলের কারণে স্থানীয় মানুষ চরম আতংকে রয়েছে। পরবর্তীতে যাতে এই জাতীয় ঘটনার সুত্রপাত না হয় সে লক্ষ্যে তাদের বিতাড়নের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এদিকে হোয়াইক্যং-হ্নীলা ইউপির কিছু অংশে হঠাৎ করে পাহাড়ি ডাকাত দলের অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা অব্যাহত থাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী জনসাধারণ চরম আতংকে রয়েছে বলে একাধিক ব্যক্তি জানান। ###