আব্দুল মাবুদ, শাহপরীরদ্বীপ প্রতিনিধি |
রোহিঙ্গাদের আসা কিছুতেই থামছেনা। টেকনাফ-উখিয়া সীমান্তের কোন না কোন পয়েন্ট দিয়ে কখনো বেশী কখনো কম সংখ্যায় রোহিঙ্গারা আসছে। আবার কোন কোন সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামছে। তারমধ্যে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ ও উলুবনিয়া সীমান্ত উল্লেখযোগ্য । শুক্রবার রাতে ও শনিবার ভোরে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ পয়েন্ট দিয়ে এক হাজারের বেশী রোহিঙ্গা এপারে ঢুকেছে। মিয়ানমারের দালালদের ছোট ছোট নৌকায় টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গারা এপারে আসছে বলে জানা গেছে।
শনিবার সকালে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা রোহিঙ্গারা নৌকায় শাহপরীরদ্বীপ ভাঙ্গা এলাকা পেরিয়ে আসলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে হারিয়াখালী সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে যান। সেখানে কিছু শুকনো খাবার প্রদানের পর তাদেরকে বালুখালী ও কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন যানবাহনে তুলে দেন।
মংডু শহরের আশেপাশের গ্রাম গুলিতে এইবার সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করাই শাহপরীরদ্বীপ সীমান্ত দিয়ে আরো বেশী রোহিঙ্গা আসার আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
শনিবার আসা রোহিঙ্গারা মংডু সুধাপাড়া ও বুচিডং এর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
রাখাইনের মংডু সুধা পাড়া থেকে শুক্রবার রাতে শাহপরীরদ্বীপ সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আসা নুর বাহার জানান, গত ২৫ আগস্টের পর থেকে গ্রামে সেনাবাহিনী ও বিজিপির নজরদারী ছিল পরে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকে গ্রাম ঘিরে রাখে সেনাবাহিনী। শেষে শুক্রবার সেনা সদস্যরা এসে গ্রামে জানিয়ে দেয় রোহিঙ্গাদের গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে, যেহেতু এটা তাদের দেশ নই। তার আরো জানায় গ্রামে আগুন দেবে সেনারা। রোহিঙ্গারা গ্রামে থাকলেও গ্রামের বাড়ি ঘরে আগুন দেওয়া হবে। একথার পর শত শত রোহিঙ্গা গ্রাম ছেড়ে পালাতে থাকে। পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। আবার অনেকে সেখানে আশেপাশের গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে। নুর বাহার স্বামী সন্তানসহ চলে আসে তাদের সাথে।
সুধা পাড়ার আরেক বাসিন্দা দিল মোহাম্মদ জানান, এতোদিন গ্রামের বড় লোকেরা মিয়ানমার বিজিপিকে টাকা দিয়ে গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া থেকে রক্ষা করেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। তিনি জানান, মংডু শহরের আশে পাশে ৮টি মতো রোহিঙ্গা গ্রাম রয়েছে। গ্রামগুলি এতোদিন সেনাবাহিনীর অত্যাচার নির্যাতন ও জ্বালাও পুড়াও থেকে রক্ষা পেয়েছিল। এই গ্রামগুলি হয়তো আর রেহাই পাবেনা বলে জানান তিনি। যদিও এইসব গ্রামের কিছু কিছু রোহিঙ্গা আগেই পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে।
এছাড়া শাহপরীরদ্বীপ দিয়ে শনিবার পালিয়ে আসে রাখাইনের বুচিডং (তাদের ভাষায় পাহাড়ের পূর্ব পাশের) এলাকার অনেক রোহিঙ্গা। তাদের একজন বুচিডং ফালি পাড়ার এলাকার হাছু মিয়ার (৬৭) পরিবারের ১০ সদস্য নিয়ে পালিয়ে এসেছেন। তিনি জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ তাদের গ্রাম। বাড়িতে কোনো খাবার মজুদ ছিল না। খেয়ে না-খেয়ে দিন কাটছিল। শেষে ক্ষুধার জ্বালায় পালিয়ে বাংলাদেশের পথ ধরেন তারা।
বুচিডং চালি পাড়ার ফাতেমা খাতুন (৬২) জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরে সেনারা গ্রাম অবরুদ্ধ করে রেখেছে। মাঝেমধ্যে তাদের ডেকে নিয়ে ত্রাণ দেয়া হয়। ত্রাণ দেয়ার দৃশ্য ভিডিও ধারণ করে পরে আবার সে ত্রাণ কেড়ে নেয় সেনা ও তাদের সঙ্গে থাকা মগ-চাকমারা।