কক্সবাজারে কালের কন্ঠ শুভ সংঘের উদ্যোগ : মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনা ও সংবর্ধনা

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৫ years ago

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি : “এই জীবনে কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, দল, এমন কি সরকারের কোন প্রতিনিধি বাড়িতে এসে খোঁজ খবর নেননি। আমার জীবন কেমন চলছে, আমি কি করি, আমি কেমন আছি, কেমন করে থাকি, কোথায় থাকি। ভেবেছিলাম হয়তোবা কেউ আর কখনো খবর নেবেন না। আর খবরই বা নেবে কেন ? স্বাধীন দেশে যে যার যার মতো ভাল আছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমাদের কাজ শেষ। আমাদের খবর নিয়ে কারো কোন লাভ নেই। তাই খবর নেয়না। ”
এমন আক্ষেপ করে হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক বলেন,“আপনারা কেন আমার খবর নিতে এসেছেন। আমিতো আপনাদের কোন উপকার করতে পারবোনা। স্বাধীন দেশে আরতো কোন সমস্যা থাকার কথা নয়।” কালের কন্ঠ শুভ সংঘের ভাই বোনেরা এই বীর মুক্তিযোদ্ধার খোঁজ খবর নিতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন।
কক্সবাজারে কালের কন্ঠ শুভ সংঘের উদ্যোগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে গল্প শোনা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রথম ধাপে ১৫ ডিসেম্বর প্রত্যন্ত এলাকা শহরতলীর দরিয়ানগরের বড়ছরায় বসবাসকারি মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেকের বাসায় যান। সেখানে তার কাছ থেকে শুনেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। স্থানীয় দরিয়ানগর বড়ছড়া সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদেরও শোনানো হয় সেই একাত্তরের ইতিহাস।
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক একাত্তরের যুদ্ধকালীন সময়ের ইতিহাস বলেন। ৭ মার্চ ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষন শুনে তিনি ফেনিতে ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশ নেন। পাক হানাদার বাহিনীর উপর হামলা, রাজাকার, আলবদর বাহিনীর উপর হামলাসহ ১৩ টি সফল অপারেশনের কথা বলেন। তিনি নিজে কিভাবে হানাদার বাহিনীর কবল থেকে বেঁচে ফিরেছেন, আহত হয়েছেন এরকম লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।
এসময় সবচেয়ে তাঁর কাছ থেকে শোনা ঘটনা হচ্ছে, প্রসবের আগ মুহুর্তে সন্তান সম্ভবা মহিলাকে দুইজন হানাদার ও একজন রাজাকার ধর্ষনের চেষ্টা চালায়। এমন খবর পেয়ে আবদুল খালেক সহ আরো ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা দ্রুত গিয়ে মহিলাকে উদ্ধার করে আর উচিত শাস্তি দেন সেই নরপশু ৩ হানাদার ও রাজাকারকে।
শুভ সংঘের বন্ধুরা তার কাছ নিকট কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি হেসে বলেন, ভালো আছি। অথচ তার কোন ভিটে নেই, জমি নেই। পাহাড়ে সরকারি জমিতে আশ্রায়ণ খামারের মাত্র দুই শতক জমির একটি জরাজীর্ণ ভাঙ্গা কুঁড়েঘরে তিনি থাকেন। এখন মাসিক ১২ হাজার টাকা ভাতা পেয়ে তিনি খুশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি এজন্য ধন্যবাদ জানান। আগে তিনি রিক্সা চালাতেন। এখন রিক্সা চালানোর মতো শক্তি তার নেই। তাই তিনি রিক্সাটি অন্যজনকে ভাড়া দিয়ে যা পাই তাই দিয়ে সংসার চালান।
সরকারের কাছে তার কোন চাওয়া পাওয়া আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু চাওয়ার নেই আর কিছু পাওয়ার থাকলে তা সরকার এমনিতে দেবেন। শুভ সংঘের পক্ষ থেকে তাঁকে উত্তরীয় পড়িয়ে দেয়া হয়। সেই সাথে শীত নিবারণের জন্য একটি শীতের চাদও সহ কিছু উপহার সামগ্রী তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
শুভ সংঘের বন্ধুরা জানান, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেকের কোন চাওয়া নেই, লোভ নেই। প্রত্যাশা শুধু একটাই দেশ যেন উন্নত হয়, দেশের মানুষ যেন শান্তিতে থাকে। অথচ তিনি নিজে কত কষ্টে আছেন , দারিদ্রতায় আছেন সেটা কাউকে বুঝতে দেননা। এমন মানুষ পাওয়া বিরল।
মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি বাড়ি গিয়ে গল্প শোনা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ছিলেন কালের কন্ঠ কক্সবাজারের বিশেষ প্রতিনিধি তোফায়েল আহমদ, শুভ সংঘের উপদেষ্টা দীপক শর্মা দীপু, শুভ সংঘ কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি রাজিব দেবদাশ, শুভ সংঘের কর্মকর্তা আবু ইউসুফ, আসিফ সাইফুল আবির, জাহেদ উল্লাহ, পিন্টু মল্লিক, ইল্লু বড়ুয়া, মিটন দে, মিশু দাশগুপ্ত, চৌধুরী তুর্ণা বড়ুয়া, সুস্মিতা বিশ্বাস, অস্মিতা বিশ্বাসসহ অনেকেই। #####