কক্সবাজারে অ*প*হ*র*ণ ও মু*ক্তি*প*ণ আদায় সিন্ডিকেটের মূল হোতা পুলিশের বহিষ্কৃত এসআই ইকবাল পারভেজকে ২ সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ১ বছর আগে

প্রেস বিজ্ঞপ্তি :

অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় সিন্ডিকেটের মূল হোতা পুলিশের বহিষ্কৃত এসআই ইকবাল পারভেজকে ২ সহযোগীসহ গ্রেফতার এবং তাদের সুরক্ষিত গোপন আস্তানায় বন্দী ১ নারীসহ ৫ অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে র‍্যাব ১৫; মুক্তিপণ আদায়ের পাশাপাশি স্বামীর হাত- মুখ বেধে অপহৃত নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ

কক্সবাজার কেন্দ্রিক ভয়ঙ্কর এক অপহরণ সিন্ডিকেটের অবস্থান শনাক্তের পর একের পর এক তাদের সুরক্ষিত গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে সেখানে বন্দী ১ নারীসহ ৫ অপহৃত ভিকটিমকে উদ্ধার করেছে র‍্যাব। এ সময় গ্রেফতার করা হয় চক্রের মূল হোতা, পুলিশের বহিষ্কৃত উপপরিদর্শক (এসআই) এসএম ইকবাল পারভেজসহ চক্রের তিন সদস্যকে। গতকাল শুক্রবার (১৯ মে) কক্সবাজার র‍্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম’র নেতৃত্বে র‍্যাবের একটি চৌকস দল কক্সবাজার শহরের কলাতলী ও সুগন্ধা এলাকায় রাতভর এ অভিযান পরিচালনা করে।

গত ১৬ মে কক্সবাজার বেড়াতে এসে নিখোঁজ হন ঢাকার উত্তরার বাসিন্দা মো. শাহজাহান কবির ও মঞ্জুর আলম । পরবর্তীতে একটি মোবাইল নম্বর হতে কল করে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিকট ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরিবারের তরফ থেকে আংশিক মুক্তিপণ পরিশোধ করা হলেও মুক্তি মেলেনি শাহজাহান ও মঞ্জুরের। কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানাধীন কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা অপহৃত দম্পতির গল্প আরো করুণ। দাবিকৃত মোটা অংকের টাকা না পেয়ে স্বামীর হাত-মুখ বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে থাকেন চক্রের সদস্য। স্বামীর উপর চলতে তাকে মধ্যযুগীয় অমানবিক বর্বর নির্যাতন।

অপহৃত ব্যক্তিদের স্বজনেরা বিকাশে ২ লক্ষাধিক টাকা মুক্তিপণ দিলেও তাদেরকে ছাড়া হয়নি, অপহরণকারীদের দাবি আরও অনেক বেশি। বেদম মারধরের পাশাপাশি চাহিদামতো মুক্তিপণ না দিলে অপহৃতদের মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। অনন্যোপায় হয়ে স্বজনেরা বিষয়টি র‍্যাবকে অবহিত করলে গোয়েন্দা উপাত্ত ব্যবহার করে কাজ শুরু করে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার পৌর শহরের কলাতলী ও সুগন্ধা এলাকায় এই সিন্ডিকেটের দুটি সুরক্ষিত ও গোপন আস্তানার সন্ধান পায় র‍্যাব। পরবর্তীতে রাতভর এসব আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে প্রথমে কলাতলি হতে চক্রের দুই সদস্যকে এবং পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সুগন্ধা এলাকার অপর গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে চক্রের প্রধান পুলিশের বহিষ্কৃত উপপরিদর্শক (এসআই) এসএম ইকবাল পারভেজকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করে র‍্যাব হেফাজতে নিয়ে আসা হয় সেখানে জিম্মি হিসেবে আটক ৫ নারী-পুরুষ ভিকটিমকে। উদ্ধারের পর র‍্যাব ও স্থানীয় জনতার সম্মুখে স্বামী-স্ত্রী অভিযোগ করেন যে, তাদেরকে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের পাশাপাশি স্বামীর হাত-মুখ বেধে স্ত্রীকে ধর্ষণও করা হয়।

চক্রের প্রধান ইকবাল পারভেজ ২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত অবস্থায় বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ র‍্যাবের নিকট ধরা পড়েন। এতে দীর্ঘদিন কারাভোগের পাশাপাশি চাকুরিও হারান তিনি। চাকরি থেকে বরখাস্ত ও কারাগার থেকে বের হওয়ার পর এসআই (বরখাস্তকৃত) ইকবাল তার শ্যালক মুন্নাসহ অন্য ৭/৮ জন সহযোগী নিয়ে গড়ে তোলেন অপহরণ বাণিজ্যের রমরমা এ সিন্ডিকেট। চক্রের সদস্যরা দেশের নানা প্রান্ত থেকে কক্সবাজার আসা মানুষদের টার্গেট করে অপহরণ করে তাদের স্বজনদের নিকট ফোন করে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করতেন। প্রত্যাশা মাফিক টাকা না পেলে আটককৃতদেরকে দিনের পর দিন আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন কর হতো। আটক অবস্থায় অপহৃত নারীদেরকে যৌনদাসী হিসেবেও ব্যবহার করতেন তারা।

র‍্যাবের অভিযানে গ্রেফতারকৃত অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা এসএম ইকবাল পারভেজ (৪০) চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলাধীন মাইতুল সরকারবাড়ি এলাকার মৃত এরশাদ আলমের পুত্র। ২০২১ সালে ইয়াবাসহ র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে তার বিরুদ্ধে আরো একটি হত্যা মামলা ছিল। অন্যদিকে গ্রেফতারকৃত এমটি মুন্না (৩০) পিতা- মো. ইউনুস এবং মো. ইউসুফ, পিতা মৃত আব্দুল করিম উভয়ের বাড়ি কক্সবাজার পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডস্থ নতুন বাহারছড়া এলাকায়।

গতকাল ১৯ মে অপহরণের শিকার শাহজাহান কবিরের বোন আমেনা বেগম বাদী হয়ে গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আসামি ও উদ্ধারকৃত ব্যক্তিদের পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়ার জন্য কক্সবাজার সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।