এক সপ্তাহ না যেতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অগ্নিকান্ড কি পরিকল্পিত নাকি দূর্ঘটনা !!

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৮ মাস আগে

হ্নীলা প্রতিনিধি, টেকনাফ ।

এক সপ্তাহ না যেতেই ফের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। ৩ ঘণ্টার আগুনে পুড়ে ছাই স্থানীয়দের বসতিসহ দু’শর বেশি রোহিঙ্গা বসতি। আর পুড়ে গেছে দেড় শতাধিক দোকানপাট।

স্থানীয়দের দাবি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিকল্পিতভাবে আগুন দেয়া হয়েছে। তবে কেউ হতাহত না হলেও আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে তদন্ত না করে কিছুই বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
শনিবার (১ জুন) দুপুর ১টা; সরেজমিন দেখা যায়; দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাই হচ্ছে একের পর এক বসতি। চারদিকে শুধু চিৎকার আর চিৎকার। জীবন বাঁচাতে বসতি থেকে বেরিয়ে আসছে শিশু থেকে শুরু করে শত শত নারী-পুরুষ। সবার অবস্থান ক্ষেত-খামারে। আগুনে বসতি পুড়ে ছাই হলেও, নিরবে দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেয় রোহিঙ্গাদের।

শনিবার ৩ ঘণ্টার আগুনে পুড়ে ছাই উখিয়ার ১৩ নম্বর ক্যাম্পের কাঁঠালতলী বাজার ও রোহিঙ্গাদের ডি-৩ ব্লক। এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই ১৩ নম্বর ক্যাম্পে ফের ভয়াবহ অগ্নিকান্ড।
ডি ৩ ব্লকের বসতি হারানো রোহিঙ্গা নুর কামাল বলেন, ‘আমি বাজার থেকে ফিরছিলাম। হুট করে দেখি আমার বসতির পাশের বসতি থেকে আগুন জ্বলছে। তা মুহূর্তের মধ্যে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। আমি আগুন লেগেছে বলে চিৎকার করলে সবাই বসতি থেকে বেরিয়ে যায়। তবে কারা আগুন দিয়েছে সেটি দেখি নাই।’

আরেক রোহিঙ্গা নারী তসলিমা বলেন, ‘বসতি পুড়ে সবকিছু ছাই হয়ে গেছে। শুধুমাত্র বাচ্চা দুটাকে কোনো রকম বের করতে পেরেছি।’
রোহিঙ্গাদের বসতির পাশাপাশি এই ক্যাম্পে ছিল স্থানীয়দেরও বসতি। রোহিঙ্গাদের বসতিতে লাগা আগুনে পুড়ে ছাই স্থানীয় ১০টির বেশি বসতি। একই সঙ্গে পুড়েছে দেড়শর বেশি স্থানীয়দের দোকানপাট।
স্থানীয়দের দাবি, নাশকতার উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গারা এই আগুন লাগিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় আরেক বাসিন্দা নবী হোসেন বলেন, এটা একটা চক্রান্ত। এটা একদিন নয়, বার বার হচ্ছে। সপ্তাহ্, মাস, ছয় মাস পর পর এই ধরণের বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। কিন্তু এখানে আমরা যারা স্থানীয় আছি, আমাদের এসব আতংকে থাকতে হচ্ছে।
আগুনে বসতি হারানো স্থানীয় বাসিন্দা সারা খাতুন বলেন, আমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আমি ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারি নি। আমার আইডি কার্ড, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার সহ সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত জুলেখা খাতুন বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে আমরা অশান্তিতে আছি। তারা বার বার এখানে আগুন লাগিয়ে দেয়। তাদের কারণে আমরা ক্যাম্পের ভেতরে স্থানীয় যারা আছি আমরা সবসময় আতংকে এবং ভয়াবহ অবস্থায় থাকি। আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থে আলাদা আবাসন ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
স্থানীয় বাসিন্দা কপিল উদ্দিন বলেন, এটা কোনো গায়েবি আগুন নয়। এসব কিছু রোহিঙ্গাদের পরিকল্পিত লাগিয়ে দেয়া আগুন। তাদের কোনো জান-মালের ক্ষতি হয় না। শুধু ওপরের ত্রিপলগুলো ধাও ধাও জ্বলছে এতটুকুই। আমার প্রায় তিন থেকে চারশ দোকান এবং এক থেকে দেড় লক্ষ নগদ টাকা ছিলো ক্যাশে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

আগুনের ঘটনা সাড়ে ১২টার দিকে ঘটলেও দ্রুত ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট। আর ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে কেউ হতাহত না হলেও অগ্নিকান্ডের কারণ তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস উখিয়া স্টেশনের ইনচার্জ মো. শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমরা যেহেতু একটা গনসংযোগ ছিলাম তাই দ্রæত সময়ের মধ্য আসতে পেরেছি। তিন ঘন্টার চেষ্টায় উখিয়া ফায়ার স্টেশনের ৩ টা ইউনিট এবং পরবর্তিতে আমাদের কক্সবাজার এবং রামু স্টেশনের গাড়িগুলো আসলেও তার আগেই আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারায় তারা ফিরে যায়। তিন ঘন্টার মধ্যে আমরা আগুনটা সম্পূর্ণভাবে নির্বাপন করতে পারি। আগুনে আগুনে ২১৫ টা বসতি এবং ১৫০টা দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনের সূত্রপাত আসলে তদন্ত না করে সঠিকভাবে কোনোকিছু বলতে পারছি না। তদন্ত করার পর সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতি এবং আগুন লাগার কারণ বলতে পারব।
এর আগে গেল ২৪ মে উখিয়ার ১৩ নম্বর ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ৫শতাধিক বসতি ও দোকানপাট।