শ.ম.গফুর,উখিয়া, উখিয়া :
কক্সবাজারে উখিয়ায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে বনবিভাগের শতাধিক একর জমি দখল করে নিয়েছে। এখন তারা নতুন করে সামাজিক বনায়নের জায়গা দখল করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিদিন সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে একরের পর একর বনভূমি দখলে নিয়ে ঘরবাড়ি তুলছে তারা। বিশেষ করে উখিয়ার বালুখালী এলাকায় গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত সামাজিক বনায়ন ধ্বংসে মেতে উঠেছে এ সব রোহিঙ্গারা।পাশাপাশি বনবিভাগের বাধার মুখেও রোহিঙ্গা দরদী এনজিও সংস্থা গুলো নির্মাণ করে চলছে অবৈধ শেড। আর এ বিষয়ে নিরব ভূমিকা পালন করছে স্থানীয় বনবিটের বহনকর্মীরা। স্থানীয় বনবিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠলেও উখিয়া বন রেঞ্জ অফিস উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত আকারে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে বালুখালীর নতুন রোহিঙ্গা বস্তি উচ্ছেদ করণে। অবশ্য বনবিভাগ বলছে, এই বনভূমি রক্ষায় জেলা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও সহযোগিতা না পাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা।
এদিকে আরও অভিযোগ উঠেছে, বনভূমি দখলে সহযোগিতা করছে স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি সিন্ডিকেট।
রোহিঙ্গাদের দখলে এবার সামাজিক বনায়ন
স্থানীয় বনবিভাগ সূত্র জানায়, ২০০২-৩ থেকে ২০১৪-১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে গড়ে ওঠা প্রায় ৫ শতাধিক একর সংরক্ষিত বনভূমির সামাজিক বনায়ন রয়েছে উখিয়ার বউখিয়ার ঘাট,থাইংখালী,মোছারখোলা বনবিট আওতাধীন।এসব বন এলাকার মধ্যে উখিয়ার ঘাট ও থাইংখালী বনবিটের আওতাভুক্ত প্রায় ২শত একর সামাজিক বনায়নের অন্তত ২কোটি টাকার গাছ উজাড় হয়ে গেছে বলে সামাজিক বনায়ন উপকারভোগীরা জানান। সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী ডাঃ ফিরোজ আহমদ ও মৌলানা গফুর উল্লাহ জানান,বালুখালীতে নতুন রোহিঙ্গা বস্তি হওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বনভুমি। সরকার ও উপকারভোগীরা বনের গাছ হারিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে বলে তারা জানান। কিন্তু এই সামাজিক বনায়নের গাছ সাবাড় করে সেখানে নতুন করে রোহিঙ্গা বস্তি গড়ে উঠেছে। এতে প্রায় ২শত একর সামাজিক বনায়ন চলে গেছে রোহিঙ্গাদের দখলে। খবর পেয়ে স্থানীয় বনবিভাগ এতে উচ্ছেদ অভিযান করতে গিয়ে রোহিঙ্গাদের বাধার সম্মুখীন হয়েছে একাধিকবার, এমনটি জানান,উখিয়ার ঘাট বনবিট কর্মকর্তা মোবারক আলী। পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান (ইউপি) এম.গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান,যারা সামাজিক বনায়ন বরাদ্দ পেয়েছে,তারা মনে করছে গাছ কেটে নিলেও জায়গা পেয়ে যাবেন। চিরস্থায়ী দখল করবেন। তাই গাছ রক্ষায় উপকারভোগীরা রক্ষার চেয়ে যোগসাজশে বেচা -বিক্রিতেও জড়িত।
বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন,বালুখালীর রোহিঙ্গা বস্তি উচ্ছেদ ও বনভুমি রক্ষায় উর্ধ্বতন বরাবরে অভিযোগ প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দমন-নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা কুতুপালং ক্যাম্পের পর বালুখালী এলাকায় নতুন করে ক্যাম্প গড়ে তোলে। এই খবর পেয়ে মাস দুয়েক আগে একদল বনকর্মী অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালায়। অভিযান শেষে ফেরত আসার সময় কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান নেওয়া ২/৩ শত অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির ইন্ধনে বনকর্মীদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায়। আত্মরক্ষার্থে বনকর্মীরা ১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে বনকর্মকর্তাসহ অন্তত ৮ জন আহত হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে উখিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।’
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, রোহিঙ্গাদের বসতি গড়ে তুলতে সহযোগিতা ও ইন্ধনের জন্য উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্যের হাত রয়েছে। মূলত তার ইন্ধনেই রোহিঙ্গারা বনবিভাগের জমি একের পর এক দখলে নিচ্ছে।
তবে এ ঘটনা সত্য নয় বলে দাবি করে অভিযুক্ত উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের উক্ত ইউপি সদস্য বলেন, ‘যে এলাকায় রোহিঙ্গাদের অবৈধ বসতি গড়ে তোলা হয়েছে ওই এলাকা আমার ইউনিয়নের বাইরে। কাজেই সেখানে আমার সম্পৃক্ত থাকার প্রশ্নই ওঠে না।’
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আলী কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা অসহায়। প্রতিদিন একরের পর একর বনভূমি রোহিঙ্গারা দখলে নিলেও আমরা কিছুই করতে পারছি না। কারণ, কোনও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে আইনিভাবে একজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ পুলিশ ফোর্স দরকার। কিন্তু জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনও সহযোগিতা পাচ্ছি না।
উল্লেখ্য ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর তার দায় চাপানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। আর তখন থেকেই সেখানে শুরু হয় সেনাবাহিনীর দমন প্রক্রিয়া। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি, এরপর থেকেই রাখাইন রাজ্যে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এ ঘটনায় জাতিসংঘ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে নির্মূল করার অভিযোগ এনেছে। তাদের বিরেুদ্ধে দুই দফায় মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডেরও অভিযোগ তোলা হয়। সংঘর্ষে রাখাইন রাজ্যের মৃতের সংখ্যা ৮৬ জন বলে জানিয়েছেন তারা।
জাতিসংঘের হিসাব মতে, মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয় নিয়েছে ৭০ হাজার রোহিঙ্গা। এর মধ্যে টেকনাফের লেদা, নয়াপাড়া, শামলাপুর ও উখিয়ার কুতুপালং ছাড়াও নতুন করে বালুখালীতে বনভূমি দখল করে আশ্রয় নিয়েছে আরও অন্তত অর্ধ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা।এখনও উখিয়া,টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে বলে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে।