টেকনাফ টুডে ডেস্ক : চীনের উইঘুর সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের নাগরিকদের ওপর চালানো হচ্ছে ভয়াবহ নির্যাতন। সম্প্রতি প্রকাশ হওয়া সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য হলো, উইঘুর ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর নারীদের সন্তান জন্মদান নিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা যেন জন্মদানের কোটা অতিক্রম না করেন, সে জন্য নারীদের গর্ভধারণ এড়াতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
চীন সরকারের হাতে জোরপূর্বক বন্ধ্যার শিকার ও শিনজিয়াংয়ে বন্দিশিবিরে মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন শিবিরগুলোর সাবেক এক শিক্ষিকা। তাঁর নাম কেলবিনুর সিদিক, যাকে শিনজিয়াংয়ে বন্দিশিবিরে আটকদের ক্লাস নিতে বাধ্য করা হতো। তিনি ৫০ বছর বয়সে চীনা সরকারের হাতে জোরপূর্বক বন্ধ্যা হতে বাধ্য হন। কেলবিনুর সিদিক জানান, শুধু সন্তানসম্ভাবনার নারীদের জোর করে বন্ধ্যা করা হয় না, যাদের সন্তান জন্মদানের বয়স পেরিয়ে গেছে তাদেরও বন্ধ্যা করা হয়।
২০১৭ সালের দিকে কেলবিনুর সিদিকের বয়স ছিল ৪৭ বছর। তখন তাঁর একমাত্র মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। তখন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে আইইউডি নিতে জোরাজোরি করে। এরপর ৫০ বছর বয়সে তাঁকে বন্ধ্যা হতে বাধ্য করা হয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিনি যে বার্তা পেয়েছেন, সে সম্পর্কে বলেন, ১৯ থেকে ৫৯ বছর বয়সী নারীদের জরায়ুতে আইইউডি (অস্থায়ী দীর্ঘমেয়াদি গর্ভনিরোধক উপকরণ) স্থাপন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিনি যে বার্তা পেয়েছেন, সেটি গার্ডিয়ানের সঙ্গে শেয়ার করেন সিদিক। সেখানে বলা হয়, যদি কোনো কিছু হয় তবে কে আপনার দায়িত্ব নেবে? আপনার জীবন নিয়ে জুয়া খেলবেন না, এটার চেষ্টাও করবেন না। আপনার জীবন শুধু আপনার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। আপনার পরিবারের সদস্য এবং আপনার চারপাশের আত্মীয়দের কথাও আপনাকে ভাবতে হবে। আপনি যদি আমাদের সঙ্গে লড়াই করেন এবং আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করেন, তবে আপনকে থানায় নেওয়া হবে। আর সেখানে নিয়ে আপনাকে লোহার চেয়ারে বসানো হবে।
সিদিক বলেন, ২০১৭ সালে আমি শুধু একটি বিদ্যালয়ের অফিশিয়াল কর্মী ছিলাম। তাই তারা আমাকে আইইউডি (অস্থায়ী দীর্ঘমেয়াদি গর্ভনিরোধক উপকরণ) স্থাপন বা অপারেশন করার জন্য বলে। তবে ২০০৯ সালে তারা বলেছিল, সরকারের কাছ থেকে একটি আদেশ রয়েছে যে ১৮ থেকে ৫৯ বছর বয়সী প্রতিটি নারীকে নির্বীজিত অপারেশন করতে হবে। তাই আমাকেও এখনই এটি করতে হবে।
কেলবিনুর সিদিক বলেন, বন্দিশিবিরে এবং পুরো অঞ্চলে যা ঘটছে তা সত্যি ভয়ানক। আমি চুপ থাকতে পারি না। আমি অবাক হই, কেন পশ্চিমা দেশগুলো এখনো ওইসব শিবিরের মধ্যে কী ঘটছে তা বিশ্বাস করতে পারে না, কেন তারা নিশ্চুপ।
সিদিক দুটি শিবিরে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। সেখানে তিনি নির্যাতি বন্দিদের চিৎকার শুনেছেন। কমপক্ষে একজন বন্দিকে মারা যেতেও দেখেছেন। তাঁর দাবি, সেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পর্যাপ্ত খাবার নেই, শৌচাগার ও পানির অভাব রয়েছে। এ ছাড়া ভয়ানক নির্যাতন করা হয় সেখানে।
তিনি দ্বিতীয় যে শিবিরে কাজ করেছিলেন, যেখানে বেশির ভাগ তরুণী ছিলেন। বন্দিশিবিরের একজন বিশ্বস্ত সহকর্মী তাঁকে বলেছিলেন, চীনা প্রশাসকদের দ্বারা বন্দিশিবিরে ধর্ষণ করা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
জিনজিয়াং থেকে মুসলিম সংখ্যালঘুদের চীন ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি খুব কমই দেওয়া হয়। তবে উইঘুরদের তো কখনো নয় বলে জানান সিদিক। তিনি ২০১৯ সালের শেষের দিকে চীন ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তবে কোথায় আছেন তিনি, তা প্রকাশ করেনি গার্ডিয়ান। তিনি আর কখনো চীনে ফিরে যাবেন না বলে জানিয়েছেন। তাঁর স্বামী উইঘুর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। তাঁর সঙ্গে বিদেশে ভ্রমণ করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাঁকে বলেছিল, এটি নিয়ে (দেশ ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে) স্বপ্নও দেখবেন না।
সূত্র : গার্ডিয়ান।