টেকনাফ টুডে ডেস্ক : এক মাসের সিয়াম সাধনার শেষে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনে প্রস্তুত মুসলিম বিশ্ব। কিন্তু গত বছরের মতো এবারও চলমান করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ঈদ উদযাপনে থাকবে বিশেষ সতর্কতা। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিমপ্রধান দেশের মতোই বাংলাদেশেও এবার ঈদুল ফিতর কাটবে মহামারীর বিষাদের মধ্যে। ইতিমধ্যেই সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের জামাত আদায় করা এবং পারিবারিক পরিমণ্ডলের বাইরে অপ্রয়োজনীয় যাতায়াত বন্ধ রাখাসহ নানা নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। দেশব্যাপী বিপুলসংখ্যক মানুষের যাতায়াত সীমিত রাখতে ঈদের ছুটিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থল এলাকা ত্যাগ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেশব্যাপী দূরপাল্লার গণপরিবহন চলাচলেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু বিগত কয়েকদিনে ঈদে ঘরমুখো মানুষের যে ঢল দেখা গেছে, তাতে প্রশ্ন উঠেছে যে, আসলে এসব ‘নিষেধাজ্ঞা’ ও ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ কোনো কাজে আসছে কি না। এই পরিস্থিতিতে ঈদুল ফিতরের আনন্দ উৎসবের সময়ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশের কোথাও খোলা ময়দানে বিপুল সমাগমের ঈদুল ফিতরের জামাত আয়োজন না করে কেবল মসজিদেই ঈদের জামাত আদায়ের নির্দেশনা এসেছে। পাশাপাশি সব মসজিদ জীবাণুমুক্তকরণ, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, নামাজ শেষে হাত মেলানো ও কোলাকুলি না করা, ঈদ জামাতে শিশু ও বৃদ্ধসহ অসুস্থ ব্যক্তিদের না যাওয়ারও অনুরোধ জানিয়েছে সরকার। পারিবারিক পরিসর থেকেই নিজ নিজ উদ্যোগে সবারই এসব সতর্কতা মেনে চলা উচিত। মনে রাখা দরকার, পবিত্র রমজানের মহান শিক্ষাই হলো সংযম। ফলে ঈদের খুশির সময়টাতেও মানুষ ও সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে সতকর্তা অবলম্বন ও সংযমের শিক্ষা কাজে লাগানো উচিত আমাদের। একইসঙ্গে পারিবারিক পরিসরে ঈদ উদযাপনের সময়ও স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম মেনে চলতে হবে। নইলে ব্যাপক আকারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে কদিনের ঈদের খুশি ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে।
দুঃখজনক বিষয় হলো সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের জন্য নানাবিধ বিধিনিষেধ আরোপ করাসহ সরকারের অনেক উদ্যোগ দেখা গেলেও সেসব যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হতে দেখা যাচ্ছে না। উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের বিষয়টি উল্লেখ করা যায়। মহামারীর অবনতিশীল পরিস্থিতির কারণে দ্বিতীয় দফায় আগামী ২২ মে পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। কিন্তু দেখা গেল, গত দুই সপ্তাহে যেসব বাংলাদেশি বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন তাদের ৮০ শতাংশেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়নি। এছাড়া বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে অবৈধভাবে আরও অনেক বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসছে। এছাড়া স্থলবন্দরগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে যে চরম শিথিলতার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সেটিও খুবই দুঃখজনক। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ভারত থেকে দেশে প্রবেশ করা ব্যক্তিদের যেমন যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে না, তেমনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করারও কোনো প্রশাসনিক পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। অন্যদিকে, ‘কঠোর বিধিনিষেধের’ নামে দেশে দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ রাখার নীতি সাধারণ মানুষকে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে ফেললেও ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল আটকানো যাচ্ছে না।
এমতাবস্থায় দেশে করোনার নতুন ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। খেয়াল করা দরকার, এখন সারা বিশে^ই করোনার নতুন ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে শঙ্কিত হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানী মহলেও প্রশ্ন উঠছে ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্তের সংখ্যা কেন এত বাড়ছে? শুধুই কি ভাইরাসের চরিত্র বদল? নাকি অন্য কোনো কারণও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন যে বিবৃতি দিয়েছেন তা বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। তিনি বলছেন, ভারতে করোনার যে ধরনটি ছড়াচ্ছে, তা অনেক বেশি সংক্রামক এবং করোনার এই ধরনটি সম্ভবত টিকার সুরক্ষাকে এড়াচ্ছে। ভারতে করোনার মহাবিস্ফোরণে এই বিষয়গুলো ভূমিকা রাখছে। এমতাবস্থায় ভারতের সঙ্গে সীমান্তে সর্বোচ্চ কঠোরতা প্রয়োজন। একইসঙ্গে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য সর্বোচ্চ নজরদারিসহ স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষ সক্রিয়তা খুবই জরুরি।
একথা সত্যি যে, যত বিপদ-আপদই আসুক, আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুবান্ধবসহ সমাজের অন্যদের সঙ্গে মিলে হাসি-কান্না ভাগাভাগি করে নেওয়াই মানুষের ধর্ম। রমজানে সংযম পালনের পাশাপাশি ফিতরা আদায় করা ইসলামের বিধান। আলেমরা বলছেন, এই করোনা মহামারীর কালে অসুস্থদের সেবা করা, দরিদ্রকে দান করা এবং মানুষের বিপদে এগিয়ে এসে মানবতার কল্যাণে আত্মনিবেদনের উৎকৃষ্ট সময়। ইসলামের এই মহান শিক্ষা সব মানুষকে আলোকিত করুক। মানুষ মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসুক। এই করোনাকাল থেকে মানুষের মুক্তির দিন বয়ে আনুক পবিত্র ঈদুল ফিতর। সবাইকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা – ঈদ মুবারক।