অনেক রুই-কাতলাও এবার ধরা পড়বে

লেখক: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৫ years ago

টেকনাফ টুডে ডেস্ক : ক্যাসিনো বাণিজ্য বা দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির একটি পার্শ্বচরিত্র ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। এবার তার পেছনের খলনায়করাও ধরা পড়বে আইনের জালে। সম্রাটকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন, সম্রাটকে যারা পরিচালিত করেছেন, সম্রাটকে যারা সম্রাট হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন শুদ্ধি অভিযানে তাদেরও আটক করা হবে। ধরা হবে ক্ষমতাসীন দলের সাবেক ও বর্তমান অনেক প্রভাবশালীকে। আওয়ামী লীগের কথিত সিন্ডিকেটের বেশকিছু নেতা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রয়েছেন এ তালিকায়।

শুদ্ধি অভিযানের পাশাপাশি দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে নামবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সে অনুযায়ী ক্ষমতাসীন শতাধিক নেতার ফাইল প্রস্তুত করে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। যার মধ্যে সাবেক বেশকিছু মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যও রয়েছেন। বড় বড় প্রকল্পে বারবার নকশা পরিবর্তন করে প্রকল্পের টাকা মেরে দিয়ে নামেমাত্র কাজ শেষ করেছেন এমন দুই সাবেক প্রতিমন্ত্রীর ফাইলও প্রস্তুত করে রেখেছে দুদক। সরকারের হাইকমান্ডের গ্রিন সিগন্যাল পেলেই এসব হেভিওয়েটের ডাক পড়বে দুদকে।

সরকারের ঊর্ধ্বতন একাধিক সূত্র বলছে, এমন অনেককে ধরা হবে, যা কেউ ভাবেননি। এমন বিষয় উদ্ঘাটন হবে, যা সাধারণের ধারণারও বাইরে। সরকারের একজন মন্ত্রী সময়ের আলোকে জানান, সম্রাট একজন চুনোপুঁটি। অনেক রুই-কাতলাও ধরা পড়বে। আর এই অভিযান অনেক দিন স্থায়ী হবে। শিগগিরই যুবলীগ মহানগরের আরেক নেতাকে ধরার ইঙ্গিতও দেন তিনি।

সূত্র জানায়, এখন সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সম্রাটের সূত্র ধরে যারা যারা এসব অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। অভিযান প্রসঙ্গে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ জানিয়েছেন, এটা অনেক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং এর সুফলও অনেকদিন মানুষ পাবে। তাই দুয়েকজনকে গ্রেফতারের মাধ্যমে এটা সম্পূর্ণ হবে না। এ কার্যক্রমে আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান নিয়ে রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। আমরা সবাই মিলে কাজ করছি। আশা করছি, আমরা ভালো কিছু করব।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী জনগণের আকাক্সক্ষা বুঝতে পেরেছেন। দেশ স্বাধীনের পর থেকে প্রশাসনে নীরবে ঘুষ বাণিজ্য, দুর্নীতি, লুটপাট চলমান। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষক, তাদেরও বিচারের আওতায় আনা উচিত। প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে আছেন আমলারা, যে সরকারই আসুক না কেন, দুর্নীতি-লুটপাট সব সরকারের আমলেই তারা অব্যাহত রাখেন। তাই প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া অতীব জরুরি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানে রাঘব-বোয়ালরা যেন ছাড় না পান। দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলা এখন সময়ের দাবি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি থাকুক, এটা আমজনতার দাবি। প্রধানমন্ত্রীও এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে দিয়েছেন। বলেছেন, দুর্নীতিবাজ যদি আমার পরিবারের সদস্যও হয় তবুও তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।

প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগে শুরু হয়েছে চাপা আতঙ্ক। দলের নেতারা তাদের নিজস্ব বলয়ে সারাক্ষণ আলোচনা করছেন কে আছেন শুদ্ধি অভিযানের তালিকায়, কতদূর চলবে এ অভিযান। টানা ক্ষমতায় থেকে যারা অবৈধ উপায়ে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ-বিত্ত করেছেন। মাদক-জুয়া ও ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সরকারি দায়িত্ব পালনে দুর্নীতি করেছেন এসব দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রী-এমপি-শাসক দলের নেতারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অভিযানের বিষয়ে সরকারের দুয়েকজন কর্তাব্যক্তি ছাড়া কেউ কিছু জানেন না। এজন্য আতঙ্ক আরও বেশি ভর করেছে দলের নেতাদের মধ্যে। তবে এর মধ্যেও আওয়ামী লীগের ক্লিন ইমেজের নেতারা চান, এ অভিযান যেন মুখ থুবড়ে না পড়ে। ভবিষ্যতে এসব অভিযুক্তকে যেন দলে পদায়ন না করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে থাকা অভিযুক্তদের এই তালিকায় শুধু যুবলীগ নেতারাই নন; সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী নেতা, একাধিকবারের এমপিরা রয়েছেন। অভিযুক্তরা সবাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে আছেন। হাইকমান্ডের গ্রিন সিগন্যাল পেলেই তাদের প্রদীপের নিচ থেকে আলোর সামনে নিয়ে আসা হবে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এই তালিকায় আছেন আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্তত তিনজন নেতা (ক্যাসিনোর মদদদাতা), প্রথম সারির কেন্দ্রীয় দুই নেতা (সরকারি দায়িত্ব পালনে ভয়াবহ দুর্নীতি করেছেন), ক্যাসিনো সিন্ডিকেটের ঘনিষ্ঠ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা যিনি সাবেক প্রতিমন্ত্রী, ঠিকাদারদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ নেওয়া সাবেক তিন মন্ত্রী রয়েছেন দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের তালিকায়। তাদের মধ্যে দুয়েকজন নিয়মিত দলের হয়ে বক্তব্য-বিবৃতিও দিয়ে থাকেন। সাবেক দুই উপমন্ত্রীও রয়েছেন এই তালিকায় যারা প্রভাব খাটিয়ে বিপুল বিত্তবৈভব গড়ে তুলেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভার কয়েকজনও রয়েছেন নজরদারিতে। বিশেষ করে ঠিকাদার জিকে শামীম গ্রেফতার হওয়ার সময় যাদেরকে ফোন করেছিলেন এবং খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া রিমান্ডে যাদের নাম বলেছেন।