অনিয়ম-দূর্নীতি পিছু ছাড়ছেনা টেকনাফ সরকারী কলেজের, ডিগ্রী ইনকোর্স পরীক্ষায় অনিয়ম ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়

: নুরুল করিম রাসেল
প্রকাশ: ৫ years ago

নিজস্ব প্রতিনিধি, টেকনাফ :
অনিয়ম-দূর্নীতি যেন পিছু ছাড়ছে না টেকনাফ সরকারী কলেজের।এইবার বিএ, বিএসএস ও বিবিএস ১ম বর্ষের ইনকোর্স পরীক্ষায় অনিয়ম ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেকনাফ সরকারী কলেজে বিএ, বিএসএস ও বিবিএ ১ম বর্ষের ইন কোর্স পরীক্ষা শুরু হয়েছে গত ১৬ সেপ্টেম্বর হতে। ইতিমধ্যে ৬ বিষয়ের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশগ্রহনকারী ৬০ জন পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন রশিদ প্রদান না করেই প্রতি বিষয়ের জন্য ৩০০টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজের অফিস সহায়ক পলাশ পাল পরীক্ষা শুরুর আগে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই টাকা বুঝে নেন। শুধু তাই নয় কোন লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই শুধু মৌখিক পরীক্ষা নিয়েই ইনকোর্স পরীক্ষা সম্পন্ন করছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। আবার ১ম বর্ষের জন্য দুইটি ইনকোর্স পরীক্ষার নিয়ম থাকলেও পরীক্ষা নিয়েছেন ১টি।

কয়েকজন পরীক্ষার্থীর সাথে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে আতংকে তারা কথা বলতে চাননি। ছাত্ররা বলছেন, যদি স্যাররা জানেন আমরা তথ্য দিয়েছি তাহলে আমাদের ফেইল করিয়ে দিতে পারেন। প্রতি বিষয়ে ৩০০ টাকা করে প্রদানের কথা স্বীকার করলেও নিউজে তাদের নাম না দেওয়ার অনুরোধ জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশানুযায়ী বিএ, বিএসএস ও বিবিএস এর প্রত্যেক বিষয়ে ১০০ নাম্বারের মধ্যে লিখিত পরীক্ষা হবে ৮০ নাম্বারের বাকি ২০ নাম্বার হাতে থাকবে সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষের। আর প্রথম বর্ষে দুইটি ইনকোর্স পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কলেজ কর্তপক্ষ ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে উপস্থিতি, আচরন, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে এই ২০ নাম্বার প্রদান করবেন। ইনকোর্স পরীক্ষায় প্রতি বিষয়ের জন্য সর্বোচ্চ একশত টাকা নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। উল্লেখিত কোন নিয়ম না মেনে টেকনাফ সরকারী কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বিপুল অংক হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে অফিস সহায়ক পলাশ এ প্রতিবেদককে জানান, প্রতি বিষয়ের জন্য দুইশত টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। আর কোন পরীক্ষার্থী চা খাওয়ার জন্য বখশিস হিসাবে অতিরিক্ত টাকা দিলে তা নিচ্ছেন বলে জানান।
মুঠোফোনে জানতে চাইলে টেকনাফ ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শেখ জয়নাল আবেদীন কলেজে গিয়ে সাক্ষাতে কথা বলার অনুরোধ করেন।
টেকনাফের প্রকৃত শিক্ষানুরাগী ও সচেতন মহল জানান, ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত টেকনাফ সরকারী কলেজটি ২০১৬ সালে সরকারী করনের আওতায় আসে। ৩৩ জন শিক্ষক ও অর্ধ সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে কলেজটিতে। দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়েই খুঁড়িয়ে চলা কলেজটির অধিকাংশ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্লাস-কলেজ ফাঁকি দিয়ে ব্যক্তিগত ব্যবসা-বানিজ্য, রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এমনকি একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মাসে বা বছরে একটি ক্লাসও না করে মাস শেষে মোটাংকের বেতন তুলে নেওয়ার অভিযোগ পর্যন্ত রয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই প্রকৃত শিক্ষানুরাগী ও দক্ষ পরিচালনা পর্যদের অভাব ও কতিপয় শিক্ষকদের পেশার প্রতি সততা ও আন্তরিকতার অভাবে খাতা কেলেংকারী, ছাত্রীর সাথে শিক্ষকের অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, আর্থিক দূর্নীতি, কলেজ ক্যাম্পাসে কিন্ডার গার্টেন স্থাপন সহ নানা অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের বিরোদ্ধে। পাশাপাশি কলেজের এইচএসসি ও ডিগ্রীর ফলাফলও তেমন সন্তোষজনক নয় বলে জানিয়েছেন তারা।