অজুর পানি অপচয় রোধের সুফল

: হুমায়ুন রশিদ
প্রকাশ: ২ years ago

মো. আফসারুল আলম মামুন : পানি সৃষ্টিকর্তার অনেক বড় এক নিয়ামত। পানি ছাড়া মানব জীবন এক মুহূর্তও চলতে পারে না। খাবার থেকে পয়োনিষ্কাশন, জীবিকা নির্বাহ থেকে অবসর যাপন, শক্ত লৌহ উপাদান উৎপাদন থেকে শুরু করে লেখার কাগজ, জীবনের সব ক্ষেত্রেই পানি অপরিহার্য এক উপাদান আর এই গুরুত্ব তখনই অনুধাবন হয়, যখন প্রয়োজনমতো জোগান না পাওয়া যায়। অথচ যখন তা সহজলভ্য হয়ে ধরা দেয়, তখন তা ব্যবহারে আমরা হয়ে যাই উদাসীন।
মুসলমানদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ অন্য ইবাদতের জন্য পানি ব্যবহার করতে হয়। একটা সময় মানুষ বিভিন্ন ধরনের পাত্র ব্যবহার করে অজু করত। ফলে পানির অপচয় তেমন হতো না। কিন্তু এখন গ্রাম, শহর-বন্দরের প্রায় সব মসজিদে অজুর জন্য ট্যাপের ব্যবস্থা আছে। তাই একজন মুসল্লি অজু করতে গিয়ে প্রয়োজনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পানি অপচয় করছেন। আমরা যদি একটি সমীক্ষা সামনে নিয়ে আসি তাহলে দেখতে পাই, বর্তমানে দেশে প্রায় তিন লাখ মসজিদ। এই তিন লাখ মসজিদে প্রতিদিন পাঁচবার আজান হয়, পাঁচবার মুসল্লিরা একত্র হয়ে নামাজ আদায় করেন। প্রতি ওয়াক্তে ন্যূনতম একবার অজু করেই নামাজে যোগদান করতে হয়। এই তিন লাখ মসজিদের প্রায় সব কয়টাতে ট্যাপের মাধ্যমে অজু করার ব্যবস্থা বিদ্যমান। যার ফলে অনিচ্ছাকৃত বা ইচ্চাকৃত বা স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যে কিছু পানি অপচয় হয়। প্রতি ওয়াক্তে যদি ন্যূনতম গড়ে ১০ লিটার পানি অপচয় হয় তাহলে দিনে ৫০ লিটার পানি এক মসজিদে অপচয় হয়। তাহলে তিন লাখ মসজিদ থেকে গড়ে প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ লিটার পানি অপচয় হয়। সাধারণত ১০০০ ওয়াটের কোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্র এক ঘণ্টা চালালে ১ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। এর এই এক ঘণ্টায় গড়ে প্রায় ১০০০ লিটার পানি উত্তোলন করা সম্ভব। তাহলে এক কোটি ৫০ লাখ লিটার পানি উত্তোলন করতে প্রায় ১৫ হাজার ঘণ্টা প্রয়োজন হবে। এই ১৫ হাজার ঘণ্টা ১০০০ ওয়াটের একটি পাম্প চলতে ১৫ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। এক দিনে ১৫ হাজার ইউনিট অপচয় হলে মাসে প্রায় ৪৫০০০০ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩২ লাখ টাকা, যা বছরের হিসাবে তিন কোটি ৮৪ লাখ টাকা। অর্থ্যাৎ শুধু খামখেয়ালিপনায় বছরে প্রায় চার কোটি টাকার বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। এটি তো অপচয়ের পরিমাণ মসজিদ প্রতি মাত্র ১০ লিটার ধরে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যার পরিমাণ স্থানভেদে অনেক অনেক বেশি।

ধর্মীয়ভাবেও অপচয় করাকে অন্যতম জঘন্য কাজ বলে অভিহিত করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের জন্য তিনটি বস্তু অপছন্দ করেন ১. অনর্থক এবং বাজে কথা বলা, ২. নিষ্প্রয়োজনে সম্পদ নষ্ট করা এবং ৩. অত্যধিক প্রশ্ন করা। (বুখারি)

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত ২৬)

পানির অপচয় রোধে রাসুল (সা.) প্রায় এক লিটার বা ৭৯৬ মিলি সমপরিমাণ পানি দিয়ে অজু সারতেন বলে হাদিসে আছে। যুক্তির নিরিখে কেউ কেউ ধারণা করেন, মরু অঞ্চলে পানির সংকট ছিল বলে রাসুল (সা.) অল্প পানি দিয়ে অজু সারতেন। কিন্তু তিনি প্রবহমান নদীর পাশে বসে অজু করলেও মাত্রাতিরিক্ত পানি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। একবার রাসুল (সা.) সাদ (রা.)-এর পাশ কেটে যাচ্ছিলেন। এ সময় সাদ (রা.) অজু করছিলেন। তাঁর অজুতে পানি বেশি ব্যয় হচ্ছিল। রাসুল (সা.) তা দেখে বললেন, কেন এই অপচয়? সাদ (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, অজুতেও কি অপচয় হয়? রাসুল (সা.) বলেন, হ্যাঁ, এমনকি বহমান নদীতে অজু করলেও। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৫)

এ ছাড়া দেশের বিদ্যুতের এই নাজুক পরিস্থিতিতে আমাদের পানি ব্যবহারে খুবই যত্নবান হওয়া উচিত। কোনোভাবেই যেন এক ফোঁটা পানি বেশি খরচ না হয়, সেদিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। আমি যদি বিদ্যুৎ অপচয় রোধে সামান্য অবদান রাখতে পারি তাহলে দেশের কোনো এক প্রাঙ্গণে কোনো এক ভাই অন্ধকার দূরীকরণে বিদ্যুৎ পেতে পারে। এ জন্য আমাদের সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। সবাইকে এক হয়ে অপচয় করা থেকে দূরে সরে আসতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে। তাহলেই সংকটময় এই মুহূর্তগুলো অতিক্রম করা সম্ভব।

লেখক : পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।